পর্ব- ১৩

9 1 0
                                    

গতকাল নামু ভাইয়ার বাসর রাত নামক বিভৎস, ভয়ানক কালোরাত পার করার পরে সকালে ডাইনিং টেবিলে এসে হাজির হতেই জাংকুকের ফোন রেকর্ড অন করার কথা শুনে নামু ভাইয়া আর স্থির থাকতে পারলোনা। এমনিতেই সখিনা আন্টির সাপখোপ মার্কা আশীর্বাদের কারণে শুরুরাতেই বিশাল কাণ্ড ঘটে গেলো, এদিকে বাকী রাতে তার উদ্ভট কবিতার কাহিনীও ফাঁস হয়ে গেলো! নামু ভাইয়া টেবিল থেকে উঠে জাংকুককে ধাওয়া করতে শুরু করলো। সবাই মিলে দৌঁড়াদৌঁড়ি শুরু করলো, এর মাঝেই দরজার বেল বাজলো। আমি গিয়ে দরজাটা খুলে সামনে থাকা মানুষটাকে দেখেই একদম স্থির হয়ে গেলাম। হাতে থাকা পাউরুটিটা নিচে পড়ে গেলো। এই মানুষটা এখানে! আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নামু ভাইয়ার স্কুল জীবনের বিরক্তকর, ঢঙ্গি বান্ধবী লারা। এই মেয়ে এখানে কী করছে! সাথে করে আবার একটা লাগেজও এনেছে। থাকবে নাকি! - " কী হলো, ঢুকতে দেবে না অ্যালোহা?" বললো লারা। এমনিতেই ওকে দেখলে আমার গা জ্বালা করে। ছেলে দেখলেই ছ্যাঁচড়ামি শুরু করে এই মেয়ে। এককথায় বলা যায়, অরণ্যের মহিলা ভার্সন। আগেরবার এসে কী কী-ই না করেছিলো! এবার নামু ভাইয়ার বউ আছে। মনে হচ্ছে নতুন করা বিয়েটা ভেঙেই যাবে এই ল্যান্জী। - " নামুওওওওওওওও" ট্রেনের মতো দীর্ঘ আওয়াজে করে নামু ভাইয়াকে এক ডাক দিয়ে দৌঁড় দিলো লারা। কানে হাত দিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখি, বাড়ির সবাই জড়ো হয়ে গিয়েছে এই এক আওয়াজেই। নামু ভাইয়ার গলা ধরে ঝুলে আছে লারা, আর চোখকে মোটামুটি দুই ইঞ্চি বের করে কোমড়ে হাত দিয়ে অদ্ভুত বিচিত্র দৃষ্টিতে তাদের দেখছে সখিনা আন্টি। তার পাশে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে সুহি ভাবী। রাগে গা জ্বলে যেতে লাগলো। আমার ভাইয়ের সংসারে আগুন লাগাতে এসেছে নাকি! দৌঁড়ে গিয়ে একটানে লারাকে নামু ভাইয়ার থেকে আলাদা করতেই নামু ভাইয়ার চোখে আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখতে পেলাম। এমনিতে নামু ভাইয়ার এমন চিপকু স্বভাব নেই, কিন্তু এই ল্যান্জির হাত থেকে বাঁচা কী এতো সহজ! জোর করে মুখে একটা হাসি টেনে বললাম,- " নামু ভাইয়ার গলা ধরে ঝুললেই তো হবেনা, তার বউকেও তো দেখতে হবে! চলো, দেখে নাও। " আমার কথা শুনে লারা চিপকির মুখটা পেঁচার মতো হয়ে গেলো। বোধয় আরো দুয়েক ঘণ্টা ঝুলে থাকার ইচ্ছে ছিলো। সুহি ভাবীর সামনে দাঁড়িয়ে গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ হা করে দেখার পর নামু ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,- " ও তোর বউ! খুবই সাধারণ।আলাদা কিছুতো পাচ্ছিনা! " আমি বললাম,- " ঠিকই বলেছো গো! সুহি ভাবীর হাতে একটু সমস্যা আছে, তাই যখনতখন কারো স্বামীর গলা ধরে ঝুলে পড়তে পারেনা। খুবই সাধারণ!" লারা আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো। পাশে তাকিয়ে দেখলাম, হবি ভাই দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। তার ঠোঁটের কোণে নীরব হাসি। আমি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে লারাকে বললাম,- " আসো আসো, সখিনা আন্টির সাথে পরিচিত হও। উনার মধ্যে নিশ্চয়ই আলাদা কিছু খুঁজে পাবে তুমি। " বলে ওকে নিয়ে সখিনা আন্টির সামনে দাঁড়াতেই সখিনা আন্টি সোজা নামু ভাইয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। - " এই কাহিনী কবে ঘটাইলি রে নামু? " এবার সবাই যেন কান খাঁড়া করে ফেললো। নামু ভাইয়া আবার কী করলো! নামু ভাইয়া বললো,- " কোন কাহিনী আন্টি?" সখিনা আন্টি বললেন,- " এই মাইয়া কেডা? বিয়ার আগে ওর লগে তোর কী সম্পর্ক ছিলো ঐডা সোজা আমারে কইয়া দে। " তার শান্ত কণ্ঠের হুমকি। আমি ফুস করে দম ফেলে মনে মনে বললাম, সখিনা আন্টির এমন ভাবাটাও অস্বাভাবিক কিছুনা। কোন জীবনে বান্ধবীদের দেখিনি বন্ধুর বউকে নিয়ে এরকম মন্তব্য করতে। নামু ভাইয়া বললো,- " আন্টি আপনি ভুল বুঝছেন। ও তো আমার ছোটবেলার ফ্রেন্ড। " সখিনা আন্টি বললেন,- " আমার চেহারার কোন জায়গায় কী বলদ লেখা আছে? " নামু ভাইয়া অবাক হয়ে বললো,- " কই! এতো সাহস কার আছে যে আপনার গালে বলদ লিখতে যাবে!" সখিনা আন্টি এবার নামু ভাইয়ার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললেন,- " তাইলে আমারে আর বুঝাইতে আসিস না। এই মাইয়ারে আমার সুবিধার লাগতাসেনা। ওর থেইকা দূরে থাকিস। " নামু ভাইয়া সামান্য মাথা ঝাঁকালো। মা লারাকে একটা ঘরে নিয়ে যেতেই জিন ভাইয়া এসে আমাকে বললো,- " তুমিও যে হবির মতোই, তা আজকে বুঝলাম। " কী বলবো বুঝে পাচ্ছিনা। এর মাঝেই হবি ভাই এসে আমার কাঁধে হাত রেখে জিন ভাইয়াকে বললেন,- " তোর কী মনে হয়, The Hobi যাকে তাকেই পছন্দ করবে! এমনিতে বলদি, কিন্তু কাজের আছে!" জিন ভাইয়া হাসতে হাসতে বললেন,- " তোর এই কাহিনী আর কেউ জানে? আমি গিয়ে বলে দেই?" হবি ভাই সুন্দর করে একটা হাসি দিয়ে বললো,- " নাহ্! জানেনা তো। চল, আমার কাহিনী আর সুজিনকে বাথরুমের সামনে দাঁড় করিয়ে তোর প্রপোজের ঘটনাটা একসাথে গিয়ে সখিনা আন্টিকে জানিয়ে আসি। " জিন ভাইয়ার মুখটা সাথে সাথেই মলিন হয়ে গেলো। মুখটা ফুলিয়ে বললো,- " তুই আসলেই ভয়ানক। " হবি ভাই বললেন,- " আমি জানি!" জিন ভাইয়া গটগট করে চলে গেলেন। এবার আমি হবি ভাইকে বললাম,- " আপনি এতো খারাপ কেন?" হবি ভাই অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিলো। আমার কথা শুনে তড়াক করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,- " কেন? কাল রাতে তোর এতো মাতলামির পরেও ভদ্র মানুষের মতো ছিলাম বলে? নাকি টিশার্টটা রাতে খুলে দেইনি বলে? নাকি দুই বছরের পুরানো বউকে এখনো চুমু দেইনি বলে? " ছিহ্! এই লোকের সাথে কথা বলা মানেই নিজের পায়ে কুড়াল মারা। কী সুন্দর হাসি মুখে এসব বলে চলেছে! আমি বললাম,- " দেখেন হবি ভাই, এসব কথা বলে আজকে আমাকে বোকা বানাতে পারবেন না। আপনি বলেছেন আমি নাকি সখিনা আন্টি, সুহি ভাবীর চুল টেনেছি। আমি গিয়ে ক্ষমা চাইতে গেলাম,উল্টা ওরা আমাকে পাগল ডেকে দিলো! মিথ্যা বললেন কেন!" হবি ভাই এবার জোরে জোরে হাসতে শুরু করলেন। এরপরে বললেন,- " তুই তো পাগলই! " রাগে গা জ্বালা করতে লাগলো। গটগট করে হেঁটে চলে যেতে লাগলাম, এমন সময় হবি ভাই দৌঁড়ে এসে পেছন থেকে জাপটে ধরলেন আমায়। ড্রয়িং রুমে এই কাজ করার সাহস পায় কোথা থেকে এই লোক! আমি বললাম,- " সখিনা আন্টি দেখতে পেলে আমাকে খুন করে ফেলবে। ছাড়ুন! " হবি ভাই বললেন,- " এক থাপ্পর দেবো! সব ভালো সময়গুলোতে সখিনা আন্টির নাম নিয়ে আমার মুড খারাপ করে দিস তুই!" আমি বললাম,- " ছাড়ুন আমায়! আমি তে পাগল, আমার সাথে আপনার কীসের কথা! গিয়ে আপনার মতো The ওয়ালী কাউকে খুঁজে নিন!" হবি ভাই বললেন,- " ওকে! তাই করবো!" বলে চলে গেলেন। এমনিতেই মেজাজ গরম, তার মাঝে লারা চিপকি এসে বললো,- " মাত্র যেই হ্যান্ডসাম ছেলেটা গেলো, সে কে?" মাথায় যেন বাজ পড়লো আমার। শেষমেশ হবি ভাইয়ের দিকেই এই চিপকির নজর গেলো! আমি বললাম,- " কেন গো? ঐ লোকটা বিবাহিত। " লারা একটু মুচকি মুচকি হেসে বললো,- " আই ডোন্ট কেয়ার! বিবাহিত হলেই বা কী! ওর বউও নিশ্চয়ই নামুর বউয়ের মতোই হবে!" ইচ্ছে করছে ওর চুলগুলো টেনে টাক করে দেই। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,- " কী বললে তুমি! বারবার তুমি নামু ভাইয়ার বউকে টানছো কেন! " লারা বললো,- " আমি ভেবেছিলাম নামু আমার মতো কাউকেই বিয়ে করবে। " আমি বললাম,- " নামু ভাইয়ার মাথাটা এখনো পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়নি। " বলেই ওপরে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালাম। সিঁড়িতে হবি ভাই দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে তার সেই বাঁকা হাসিটা দিয়ে বললেন,- " হিংসে হচ্ছে! হ্যান্ডসাম জামাই থাকলে একটু আধটু চিন্তা হবেই, ব্যাপার না!" আমি বললাম,- " হিংসা কেন হবে! যান না আপনি ঐ চিপকির কাছে, আমিও সোজা অরণ্যের কাছে চলে যাবো!" হবি ভাইয়ের চোখ সাথে সাথেই একদম লাল হয়ে গেলো। সিঁড়ির পাশের দেয়ালেই আমাকে চেপে ধরে বললেন,- " আর কোনদিনও যদি ঐ ল্যান্জার নাম তোর মুখে শুনেছি!" আমি বললাম,- " ওহ্! আপনার পেছনে ল্যান্জি ঘুরতে পারবে, আর আমার পেছনে ল্যান্জা ঘুরলেই দোষ!" হবি ভাই এবার হঠাৎই হেসে দিলেন। এরপর মাথাটা নামিয়ে আমার কানের কাছে এনে ফিসফিস করে বললেন,- " আগেও বলেছি, এখনও বলছি- হবি তোর! শুধুই তোর। অ্যালোর মোহ থেকে বের হতে চায়না হবি। কোনদিনও না!" মুহূর্তেই যেন মাথাটা একদম ঠান্ডা হয়ে গেলো। এই লোকের আশ্চর্য ক্ষমতাগুলোর মধ্যে এটা একটা। আমার মনের অবস্থা সে খুব ভালো করে বুঝতে পারে। আমি বললাম,- " ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি। " হবি ভাই বললেন,- " সবাইকে গিয়ে বল, আজ বিকেলে যেন ছাদে আসে। আমার একটা কথা বলার আছে। " আমি ছাব্বিশ পাঁটি দাঁত বের করে হবি ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম,- " কী কথা হবি ভাই? " হবি ভাই বললেন,- " তোরে বলবো বলেছি? ওদের বলবো, ওদের আসতে বল গিয়ে! গাধী! " আবার! আবারো অপমান! সোজা ওপরে গিয়ে হবি ভাইয়ের আদেশ পালনে কাজে লেগে পড়লাম। শুরুতেই গেলাম ইউনার ঘরে। দরজা খোলাই ছিলো, তাই সোজা ওর ঘরে ঢুকে বললাম,- " বিকালে ছাদে আসিস, হবি ভাই ডেকেছে। " ইউনা বললো,- " না না, আমি আসতে পারবোনা। " আমি বললাম,- " হবি ভাইকে গিয়ে বল একথা। আমাকে যা বলতে বলেছে, আমি বলে দিয়েছি। " বলেই গেলাম তেয় ভাইয়ার ঘরে। তাকেও গিয়ে হবি ভাইয়ের নির্দেশ জানালাম। তেয় ভাইয়াও হুবহু ইউনার ডায়লগটা আমাকে শুনিয়ে দিলো। মনে মনে ভাবলাম, কাহিনী কী! এই দুইজন আসতে চাচ্ছে না কেন! আমি বললাম,- " তুমি আর ইউনা কী বাইরে যাবে?" তেয় ভাইয়া বললো,- " ইউনাকে বলোনা, আজকে ওর জন্য একটা সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছি। " আমি বললাম,- " ওও, তাহলে এই কাহিনী!" তেয় ভাইয়া বললো,- " সারপ্রাইজটা তোমাকেও দেখাবো। " আমি বললাম,- " আচ্ছা! " বলেই বের হয়ে লিয়ার ঘরের দিকে গেলাম। ওর আর জিমিন ভাইয়ার রুমে উঁকি দেয়ার আগেও টোকা দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। স্পেশাল দম্পতি এরা। টোকা দিয়ে লিয়ার রুমে ঢুকতেই দেখলাম জিমিন ভাইয়াও আছে। তারা আজকে ভদ্রমানুষের মতো লুকিয়ে লুকিয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে। ওদেরও ছাদে আসতে বললাম।" এই জীবনে মাইনষের কলিজা খাওয়ার অনেক ইচ্ছা আছিলো, আইজ তোরটা খামু আমি। " দুপুরে খাবার খেয়ে নিজের ঘরে বসে বসে হবি ভাইয়ের ছেঁড়া টিশার্টটা সেলাই করছিলাম, হঠাৎই সখিনা আন্টির এই হুংকার শুনে দৌঁড়ে রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমে এসে দেখি এক ভয়ানক কাণ্ড। সখিনা আন্টির হাতে বটি, আর তার সামনে একটা ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে আছে লারা। আসলো আধাবেলাও হলো না, এর মাঝেই সখিনা আন্টির সাথে যুদ্ধ বেঁধে গেলো! - " আমার কলিজা আপনার জন্য নাকি! বিশ্রি বুড়ি!" লারার এই কথা শোনার পরে নামু ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,- " আজ যদি তোমার এই বান্ধবী খুন হয়, তাহলে ওর বাবা মায়ের কাছে কী জবাব দিবে তুমি? " নামু ভাইয়া অসহায়ের মতো বললো,- " আমাকে বাঁচা! আমার মাথা ঘুরছে!" সখিনা আন্টি এবার লারার দিকে তেড়ে এসে বললো,- " বিশ্রি! বুড়ি! তুই এডি আমারে কইলি? তোর নিজের চেহারা দেখসোস? দেইখা মনে হইতাসে ইন্দুর জাতি তোরে অভিশাপ দিয়া মানুষ বানাইয়া দিসে। কিন্তু চেহারা থেইকা ঐ ইন্দুর ভাবটা এখনো যায়নাই। আইজ তো তুই শেষ। " বলেই লারার দিকে বটিটা এগিয়ে আনতেই লারা বলে উঠলো,- " আমার হাতেও ছুরি আছে। আমাকে ইঁদুর বলার দুঃসাহস হলো কীভাবে আপনার! " বলে সেও ছুরি হাতে তেড়ে গেলো। আমি আর মা দৌঁড়ে গিয়ে দুদিক থেকে দুজনকে সরিয়ে আনলাম। নাহলে পরিস্থিতি খুনোখুনির পর্যায়ে চলে যাবে। কোনরকমে তাদের আলাদা করে সোফায় ধপ করে বসে ভাবতে লাগলাম- এতোদিন ছিলো জরিনার মা, এখন আবার এই লারা চিপকিও যোগ হয়েছে। বিকেলে ছাদে সবার আগেই আমি গিয়ে হাজির হলাম। হবি ভাই কী বলবে কে জানে! একটু পরে দেখলাম তেয় ভাইয়া আর ইউনাও আসলো। ইউনাকে বললাম,- " তোরা বাইরে যাস নি?" ইউনা বললো,- " হবি ভাই যেতে দেয়নি। " আমি চুপ করে রইলাম। এই লোকের ওপর কথা বলার মতো কেউ আছে নাকি! একে একে সবাই এসে বসলো গোল হয়ে। হবি ভাই কথা শুরু করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন সময় লারা চিপকি আসলো। ও এসেই ইনহা আর সুগা ভাইয়ার মাঝে এসে বসে পড়লো। মনে মনে ভাবলাম, ভালো মানুষের মাঝে এসে বসেছো! হবি ভাই বলতে শুরু করলেন,- " আমি এখন যা যা জিজ্ঞেস করবো, তার সত্যি সত্যি উত্তর দিবি সবাই। " সবাই একদম চুপ। হবি ভাইয়ের কথায় সায় দিয়ে সামান্য মাথা নাড়লো সবাই। এরপর হবি ভাই বললেন,- " গত রাতে অ্যালোহাকে জুস কে দিয়েছিলি?" এবার সবাই একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। হবি ভাই সবার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন। এরপর বললেন,- " ইউনা, তুমি দিয়েছিলে। " ইউনা বললো,- " না না হবি ভাই। তোমাকে কে বললো আমি দিয়েছি!" হবি ভাই বললেন,- " আগেই বলেছি মিথ্যা না বলতে। টেনশনে তোমার নখ খাওয়া দেখে যে কেউই বুঝতে পারবে যে এই অকাজ তুমিই করেছো। " ইউনা এবার একটা বোকাবোকা হাসি দিয়ে বললেন, - " আসলে আমিই দিয়েছিলাম। " হবি ভাই এবার বললেন,- " গুড! এবার বলো- কী মিশিয়েছিলে ঐ জুসে? আর কেন মিশিয়েছিলে?" ইউনা এবার একটা শুকনো ঢোক গিলে তেয় ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,- " কী মিশিয়েছিলে গো? " তেয় ভাইয়া এবার মুখটা আমচোরের মতো করে হবি ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,- " আসলে হয়েছে কী, একটু হালকা পাতলা নেশার ঔষধ জুসে মিশিয়েছিলাম নামুকে দিবো বলে। কিন্তু সেই সুযোগই তো পেলামনা। তাই ভাবলাম, নামুকে পারিনি, অ্যালোকেই দিয়ে দেই! তাই ইউনার সাহায্য নিয়ে অ্যালোকে খাইয়েছিলাম আরকি!" হবি ভাই তেয় ভাইয়াকে কিছু একটা বলতে যাবে, এমন সময়,- " এই মেয়ে! সমস্যা কী তোমার!" চিৎকার শুনে সুগা ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখলাম, সে একলাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে লারা চিপকির দিকে তাকিয়ে আছে। - " সেই কখন থেকে আমাকে ধাক্কা দিচ্ছো! " আবারো বললো লারাকে। এবার ইনহা বললো,- " সমস্যা কোথায় সুগা? বসতে দাওনা তোমার পাশে!" ইনহা যে ক্ষেপে গিয়ে কথাটা বলছে, সেটা আমি ঠিকই বুঝতে পারছি। হয়তো সুগা ভাইয়াও বুঝতে পেরেছে। হঠাৎই সুগা ভাইয়া পল্টি খেয়ে লারাকে বললো,- " না মানে, ধাক্কা দিলে বসতে অসুবিধা হয় তো! তাই বললাম। তুমি বসো, বসো।" আমি সোজা ইনহার দিকে তাকালাম, ও রাগে গজগজ করছে। সুগা ভাইয়া যে ওকে রাগানোর জন্যই এসব করছে, তা তো বুঝতে পারছিই। ইনহা রেগেমেগে ছাদ থেকে নেমে গেলো, আর সাথে সাথেই সুগা ভাইয়া লারা চিপকিকে বললো,- " আমার থেকে দূরে থাকবে সবসময়! বিরক্তকর মেয়ে!" লারা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সুগা ভাইয়ার দিকে। আমি মনে মনে হাসছি। বেচারী বুঝতেই পারছেনা সুগা ভাইয়ার এই ব্যবহারের কারণ। রাতে খাবারের পরে আমি নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়েছি, এমন সময় দরজায় টোকার শব্দ শুনে দরজা খুলেই দেখি হবি ভাই দাঁড়িয়ে আছেন। তার হাতে একটা ব্যাগ। - " দারোয়ানের মতো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস কেন! সরে দাঁড়া!" পাশ কেটে দাঁড়ালাম। হবি ভাই রুমে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে আমার সামনে ব্যাগটা ধরে বললেন, - " এটা নিয়ে যা। যা আছে সব পড়ে আয়।" আমি বললাম,- " এর মধ্যে কী আছে হবি ভাই? " হবি ভাই চোখ মুখ কুঁচকে বললেন,- " তোর চোখে এক্সরে মেশিন ফিট করেছিস?" এবার আমার নাকমুখ কুঁচকে এক হয়ে গেলো। এ আবার কেমন প্রশ্ন! - " এ আবার কেমন প্রশ্ন! চোখে এক্সরে মেশিন লাগাতে যাবো কেন!" হবি ভাই বললেন,- " যদি মেশিন না লাগিয়ে থাকিস, তাহলে ব্যাগটা হাতে নিয়ে খুলে দেখ ডাফার! ওপর থেকে দেখবি কীকরে!" একটানে ব্যাগটা হাতে নিয়ে খুলে দেখলাম- একটা গাঢ় নীল রঙের শাড়ি, তার সাথে ম্যাচিং গয়না। আমি বললাম,- " এগুলা কী করবো আমি! " হবি ভাই বললেন,- " অরণ্য ল্যান্জাকে পরিয়ে আয়। ডাফার কোথাকার! তোর হাতে দিয়েছি মানে তোকেই দিয়েছি! আর শাড়ি কী রান্না করে খায় নাকি! পরতে দিয়েছি এটাও বুঝিসনা! তোরে বলদামীডে নোবেল দেয়া উচিৎ! " আমি অসহায়ের মতো বললাম,- " এতো রাতে শাড়ি পরবো! " হবি ভাই বললেন,- " হুম! পরবি। আর একটা শব্দও করবিনা। চুপ করে পরে আয়, আমি ছাদে আছি। " বলেই হবি ভাই রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। আমি এবার শাড়িটা খুলে দেখলাম, অনেক সুন্দর! হবি ভাইয়ের পছন্দ অনেক আলাদা ধরনের। তার পছন্দ করা জিনিসগুলো সবসময় আলাদা হয়। শাড়িটা কোনরকমে পরে নিয়ে চুলগুলো ছেড়ে দিলাম। চোখে গাঢ় করে কাজল দিয়ে একটা ছোট্ট নীল টিপ পরে নিলাম। এরপর আস্তে আস্তে পা টিপে ঘর থেকে বের হতেই চোখে পড়লো আরেক কাহিনী। ওপর থেকে দেখলাম, জাংকুক আর হানা মেইন দরজা খুলে বের হচ্ছে। এতোরাতে এরা আবার কোথায় যাচ্ছে! ডাক দিতে গিয়েও চুপ মেরে গেলাম। ডাকলে তো নিজেও আগে ধরা পড়বো, এতো রাতে শাড়ি পরে বিয়ের সাজ দিয়ে বসে আছি! চুপচাপ ছাদে গিয়ে দরজাটা খুলে হবি ভাইয়ের দিকে এগিয়ে যেতেই এক ভয়ানক দৃশ্য চোখে পড়লো। দেখলাম....

চলবে....

Secret Admirer 2Where stories live. Discover now