পর্ব ৯

3 0 0
                                    

আমার মা-বাবা এতোটা দায়িত্বহীন হয় কীকরে! পুরো বাড়ি খালি করে সবাইকে নিয়ে গাড়ি করে চলে গেলো বিয়ে খেতে, আর আমাকে রেখে গেলো এক ভয়ানক পুরুষের হাতে। উনার হুমকি শুনে দুহাত দিয়ে শক্ত করে ধরে বসেছি বাইকে। আনমনে একটু হাতটা সরে গেলেই হুট করে ব্রেক কষে দিচ্ছে এই লোক।এরপর বলে,
- " সমস্যাটা কই তোর? আরেকবার আমার বুক থেকে তোর হাত সরেছে তো গ্লু দিয়ে চিরকালের জন্য আটকে দেবো বলে দিলাম।" এইটুকু পথ আসতেই দুবার হার্ডব্রেক কষে ফেলেছে। বাকী পথে যে কী করবে কে জানে! হঠাৎই একটা ফাঁকা মাঠের মতো জায়গায় এসে হবি ভাই বাইক দাঁড় করিয়ে দিলেন।
- " এখানে দাঁড়ালেন কেন হবি ভাই? দেরী হয়ে যাবে তো!" হবি ভাই বাইক থেকে নেমে খপ করে আমার হাতটা ধরে সামনে হাঁটতে হাঁটতে বললেন,
- " অ্যাহ্! নিজেকে কী ভাবিস তুই? মনে হচ্ছে যেন তুই না গেলে বিয়েটাই হবেনা! " আজব তো! আমি এ কথা কবে বললাম! এই লোক ভরদুপুরে আমাকে নিয়ে মাঠের দিকে যাচ্ছে কেন? হবি ভাই আমাকে নিয়ে মাঠের এক কোণায় একটা গাছের নিচে এসে বসলেন। আশপাশটা ভালো করে খেয়াল করতেই বুঝলাম, এতো সেই মাঠ! দুবছর আগে হবি ভাইয়ের সাথে একটা জেদের সম্পর্ক, মানে বিয়ের পর এখানেই এসে কথা বলেছিলাম। রাতের অন্ধকারে পুরো মাঠটা দেখতে পারিনি, তবে এই জায়গাটা খুব ভালো করে চিনতে পেরেছি আমি। আর চিনবো না-ই বা কেন! এটাই তো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলের রাত ছিলো!
- " এখন যেই কথাগুলো বলবো, খুব মনোযোগ দিয়ে শুনবি। আর আমার কথার বাইরে কিছু করার চেষ্টা ভুলেও করিসনা। তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবেনা, মনে রাখিস। "  সবসময় আসল কথার দুইগুণ হুমকি!
- " কেন আপনার কথায় চলবো আমি? কোন কারণে? " মনে সাহস নিয়ে কথাটা বলে ফেললাম।
- " কারণ তুই আমার বউ। আর একটাও বেশতি কথা না। শোন আমার কথা। "  বউ! দুই বর্ণের এই সাধারণ শব্দটাকেও হবি ভাইয়ের মুখে শুনে অসাধারণ বলে মনে হচ্ছে। আমি তার বউ! হবির বউ! ভাবতেই কেমন যেন অন্যরকম লাগে। কিন্তু আসলেই কী তাই? বিয়ে করা বউকে রেখে কেউ বিদেশ চলে যায়?
- " আমি আপনার বউ? কোন মুখে এই কথাটা বলেন আপনি? " হবি ভাই চুপ করে বসে রইলেন। রাগে যেন তরতর করে বাড়তে লাগলো আমার।
- " আমার জামা-কাপড় নিয়ে এতো মাথাব্যথা আপনার। নিজের কী অবস্থা সেটা কোনদিন দেখেছেন? আমার একটু ফিতাটা খোলা থাকায় কতো কথা শুনালেন, আর নিজে যে  নামের পান্জাবি পরে জঙলিদের মতো শরীর দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন, সেটা দোষের কিছু না?" একদমে কথাগুলো বলে থামলাম। সাথে সাথেই মনে পড়লো, কী বললাম এগুলো! হবি ভাইকে জঙলি বলে ফেলেছি? আজ বোধয় আমার আর নামু ভাইয়ার বিয়ে দেখা হবেনা। আজ এই মাঠেই আমাকে জ্যন্ত পুঁতে ফেলবে এই লোক, আমি জানি। ভয়ে তার দিকে তাকানোর সাহসটুকুও পাচ্ছিনা। প্রায় একমিনিট ধরে কোন আওয়াজ বা হবি ভাইয়ের কোন ধমক না শুনায় কিছুটা অবাক হয়েই তার দিকে তাকালাম। আরো বেশি অবাক হয়ে গেলাম,কারণ হবি ভাই আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে হাসছেন! যেই লোকের মুখের সামনে বোম রেখে দিয়েও হাসানো যায়না, তার মুখে এতোবড় অপমানের পরেও হাসি! অতি শোকে পাগল-টাগল হয়ে গেলোনা তো!
- " আপনি ঠিক আছেন হবি ভাই? " হবি ভাই হাসতে হাসতেই আমার নাক টেনে ধরে বললেন,
- " হিংসে হচ্ছে? নাকি হ্যান্ডসাম স্বামীকে নিয়ে ভয় পাচ্ছিস,কেউ পিছে না পড়ে যায়?" সত্যিই তো! আমি তার জামাকাপড় নিয়ে এতোকথা বলতে গেলাম কেন! তবুও মুখ বাঁকিয়ে বললাম,
- " আপনি আমারটা নিয়ে বলেন, তাই আপনারটাও দেখিয়ে দিলাম। এসব হিংসা-ফিংসা কিছুই না!" হবি ভাই এবার আচমকাই আমার বেশ কাছে এসে বসলেন।হুট করে কাছে এসে বসায় কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম আমি। তবুও নিজেকে সামলে নিলাম। হবি ভাই পকেট থেকে বেলিফুলের একটা মালা বের করে আমার চুলে বেঁধে দিতে দিতে তার সেই ঘোরলাগা কণ্ঠে বললেন,
- " আমি তো তোকে বউ বলে মানি, তাই বলি। তুই তো নাকি আমাকে তোর কাছের কেউ বলে মানিসনা, তাহলে তোর তো বলার প্রশ্নই আসেনা!" গেলাম তো ধরা পড়ে! কেন এতো বেশি কথা বলতে যাই, তাও এই ভয়ানক বুদ্ধিওয়ালার সামনে! আসলেই আমি একটা গাধী!
- " চিন্তা করিসনা। আমি তোর আছি, তোরই থাকবো। এই হবি তার অ্যালোতেই আসক্ত! অ্যালোর নেশাই তাকে পেয়ে বসেছে, অন্যকারোর এতো শক্তি নেই সেই নেশা কাটাবার। " আবারো নতুন করে তার কথার প্রেমে পড়তে ইচ্ছে হলো। চুলে হাত দিয়ে দেখলাম, খুব সুন্দর করে মালাটা চুলের সাথে আটকে দিয়েছেন হবি ভাই। এই লোকটার প্রতিটা কাজ পারফেক্ট। তার বলা, চলা -সবই যেন আগে থেকেই হিসেব করা থাকে। আমার চিন্তার মাঝেই হবি ভাই বলে উঠলেন,
- " এবার কাজের কথায় আসি। আজ যদি ঐ অরণ্য ল্যান্জাকে তোর আশেপাশে দেখি, তাহলে এবার আর ভালো মানুষের মতো মরিচ থেরাপি দেবোনা। সোজা ওর চোখদুটো উপড়ে ফেলবো। " এবার আমি বললাম,
- " ওও, হিংসে হচ্ছে? নাকি সুন্দরী.. " এটুকু বলেই আটকে গেলাম৷ আমিতো আর নিজেকে উনার বউ বলে দাবি করতে পারবোনা!
- " থামলি কেন? বল বল!" হবি ভাই মুচকি হেসে আমাকে খোঁচাচ্ছেন। হঠাৎই হবি ভাইয়ের ফোন এলো। কে ফোন দিলো তা জানিনা। কিন্তু হবি ভাইয়ের চেহারাটা গম্ভীর হয়ে যেতে দেখলাম। প্রায় দুমিনিট পর হবি ভাই " আচ্ছা, আমি এসে ব্যাপারটা দেখছি" বলেই ফোন কেটে দিলেন।
বাকী পথটুকু একদম চুপ ছিলেন হবি ভাই। কে ফোন দিয়েছিলো! আবার কোন সমস্যা হয়নি তো! হবি ভাইয়ের গম্ভীর চেহারা দেখে কিছু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছেনা। চুপ করে একধরনের চাপা উত্তেজনা নিয়েই কমিউনিটি সেন্টারে এসে পৌঁছালাম। বাইক থেকে নামতেই হবি ভাই আমার হাতটা শক্ত করে ধরে নিয়ে বললেন,
- " তোর মাথা তো আবার স্পেশাল। যখন তখন চরকির মতো ঘুরে পড়িস। আমার সাথে সাথে থাক তুই। " আবারো অপমান! তার প্রতি একশো শব্দের মাঝে পঞ্চাশটাই আমাকে খোঁচা দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। আবার এই লোকের প্রেমেই হাবুডুবু খাচ্ছি আমি, ভাবলেও অবাক লাগে।

Secret Admirer 2Nơi câu chuyện tồn tại. Hãy khám phá bây giờ