পর্ব - ২

12 2 0
                                    


হবি ভাইয়ের হলুদ লাগানোর কাহিনী সখিনা আন্টির কাছ থেকে বেমালুম চেপে মোটামুটি একদৌঁড়ে নিচে নেমে এলাম। ঘরে ঢুকেই জোরে জোরে হাঁপাতে লাগলাম। যাক বাবা, বড় বাঁচা বেঁচে গেলাম। ড্রয়িংরুমের টেবিলের ওপরেই হলুদের সব জিনিসপত্র রাখা। হঠাৎই একটা অদ্ভুত কাহিনী আমার চোখে পড়লো- জরিনা টেবিলের ওপর রাখা জিনিসগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে। অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম ও কি করে। দেখলাম কিছুক্ষণ জিনিসপত্রগুলো দেখার পরেই সেগুলো রেখে দিয়ে আবার চলে গেলো। আমিও যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। জিনিসগুলো নিয়ে সখিনা আন্টির হাতে দিয়েই আমি কোণার একটা চেয়ারে গিয়ে বসলাম। হঠাৎই মনে হলো, ছাদের একটা কোণা থেকে কোনো আওয়াজ আসছে। কিন্তু ঐ কোণায় তো সব গাছ, ঐখানে কে যাবে! পা টিপে টিপে সেখানে গিয়েই চোখে পড়লো আরেক ঠাডাপরা কাহিনী। ইউনা দেয়ালের সাথে মিশে দাঁড়িয়ে আছে, আর তেয় ভাইয়া ওর দিকে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে। হুট করে ওদের যে এই অবস্থায় দেখবো, সেটা ভাবতেও পারিনি। এর আগে কোনদিনও আমার কোন বান্ধবীর সাথে ভাইয়ার বন্ধুদের দেখা হয়নি। আজই প্রথম, আর প্রথমদিনই অদ্ভুতসব কাণ্ড আমার চোখে পড়ছে। একেই তো নিজের জীবন নিয়ে ভয়ানকরকম পেরেশান হয়ে আছি, তার ওপর নতুন কাহিনী! আমাকে দেখে ইউনা বলে উঠলো,
- " অ্যালোহা দেখ না! এই সুন্দরপোলা আমারে বহুত জ্বালাইতেসে!" আমি অবাক হয়ে ইউনাকে ইশারা করে চুপ থাকতে বললাম। তেয় ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি, সে মুচকি মুচকি হাসছে। ইউনা তার কাছ থেকে সরে একদৌঁড় দিলো। সবগুলা দেখি একই কাহিনী শুরু করেছে। প্রথমে একটা ঝটকা দেয়া দৃশ্য দেখানোর পর  বাংলা সিনেমার নায়িকার মতো একটা দৌঁড় দেয়। এদিকে কৌতুহলে আমার পেট ফেটে যায়। তেয় ভাইয়া আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,
- " এই পাগল মেয়েটা কী তোমার ফ্রেন্ড?" আমি বললাম,
- " হ্যাঁ। " তেয় ভাইয়া মুখে একটা রহস্যময় হাসি নিয়ে হেলেদুলে হেঁটে চলে গেলো। এমন সময় স্টেজ থেকে " আম্মাআআআআ " জোরে একটা চিৎকারের শব্দ শুনে দৌঁড়ে সেখানে গিয়েই দেখলাম সখিনা আন্টিও লাফাচ্ছে, সাথে নামজুন ভাইয়াও। কাহিনী কি তা বোঝার জন্য স্টেজের ওপরে যেতেই সখিনা আন্টির হাত পা ছুঁড়াছুঁড়ির কারণে ছিটকে পড়ে গেলাম। নামজুন ভাইয়া চিৎকার করে বলতে লাগলো,
- " আজকে আমার গায়ে হলুদ, কিন্তু আমার গায়ে মরিচ লাগাইসে কেএএএএ" আমার মাথা এবার চক্কর দিলো। তার মানে নামজুন ভাইয়ার গালভর্তি মরিচ!
- " আল্লাহ্ গোওও! বাঁচাও! আমার এতো সুন্দর চেহারাডা জ্বইল্লা গেলো গোওও। " সখিনা আন্টির দিকে ভালো করে তাকাতেই বুঝলাম, তার চোখেও মরিচওয়ালা হলুদ একদম লেপ্টে আছে। আমি গিয়ে তার চোখে পানি দিতে দিতে বললাম,
- " আন্টি, হলুদ তো গালে দেয়। আপনার চোখে কেন! আর আপনি এতো হলুদই বা লাগিয়েছেন কেন?" সখিনা আন্টি বিলাপ পারতে পারতে বললেন,
- " কি কস তুই! সারা চেহারা হলুদে চকচক করবো, আর চোখটা কালা কইরা রাখমু! চোখটাও তো সুন্দর হওয়া লাগবো! " আমি এবার মনে মনে বললাম, বুড়াকালেও রঙ কমলোনা! উনার চোখ ধুইয়ে দিয়ে স্টেজের সামনে গিয়ে দেখলাম, নামজুন ভাইয়ার সারা মুখ একদম লাল হয়ে আছে। এই কাহিনী যে জরিনাই করেছে, এই বিষয়ে এবার আমি নিশ্চিত। কিন্তু যদি ভুলেও মা অথবা সখিনা আন্টির কানে যায় এই কথা, তাহলে ব্যাপারটা খুনোখুনি পর্যায়ে চলে যাবে। তাই একদম চুপ করে পুরো বিষয়টা নিজের মাঝেই রাখলাম। সবকিছু মোটামুটি একটা পর্যায়ে আসার পর সখিনা আন্টি স্টেজের ওপরে উঠে বললেন,
- " সখিনা কিছুই ভুলেনা। সব হিসাব আমি চুকামু। "

Secret Admirer 2Where stories live. Discover now