বৃষ্টি শেষে মাঝ-নদীতে

81 16 16
                                    

বাস ছেড়েছে আধঘণ্টা হলো। দুপুর দুটো বাজে। বাইরের আকাশটা বেশ ভালোই লাগছে। ঠিক মেঘলাও না, আবার খুব একটা গরমও না। যদিও এয়ার কন্ডিশনড বাসের ভিতরে বসে বাইরের আবহাওয়াটা খুব একটা অনুভব করা সম্ভব হচ্ছেনা।

নীলিমার পাশেই অয়ন ঘুমুচ্ছে। খুব গাঢ় ঘুম। নীলিমা কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।

শুরুতে অয়ন কালো রঙের শার্ট পরে বাসে উঠলেও এখন গায়ে সাদা টি-শার্ট। বৃষ্টিতে ভেজার পর ওখানেই এক বাড়ির ওয়াশরুমে Change করে আসে অয়ন।

নিশ্চুপভাবে বাইরে তাকিয়ে আছে নীলিমা। কখনো বা জানালা বেয়ে দু-এক ফোটা বৃষ্টির জল গড়িয়ে পড়ছে নিঃশব্দে।

***********************

নীলিমা বলল,
- এখানে উঠে তো পড়লাম, কিন্তু নামবো কিভাবে?

অয়ন একটু জোরেই বলল,

- উঠতে যখন পেরেছেন, নামতেও পারবেন। চিন্তা করবেন না! শুধু বাতাসটা উপভোগ করুন!

জোরে কথা বলা ছাড়া উপায় নেই। চারিদিকে প্রচুর বাতাস, আর সাথে ইঞ্জিনের আওয়াজ। এখন ওরা দাঁড়িয়ে আছে ফেরীর ছাদে। নদীর ঠিক মাঝখনে ওরা!
যেদিকেই তাকায় না কেন, শুধু অথৈ জলরাশি! উপরে বিকেলের সূর্যের আলোমাখা মেঘলা আকাশ, আর নিচে শুধুই বড় বড় ঢেউ খেলে যাওয়া নদীর পানি। সেই পানি কেটেই এগিয়ে চলেছে ফেরী।

নীলিমা কিছু একটা বলল, কিন্তু অয়ন বুঝতে পারলো না। তাই নীলিমার দিকে একটু এগিয়ে এল। নীলিমা যেখানে দাঁড়িয়ে, সে জায়গাটা বেশ ফাঁকা। ভিড় কম। অয়ন বলল,
- হ্যাঁ, এখন বলুন!
কিছুটা দূরেই উড়ে যাওয়া এক ঝাঁক গাঙচিল দেখিয়ে নীলিমা বলল,
- দেখুন দেখুন! কি সুন্দর না?

বিকেল ৪টার সূর্যের হালকা আলোয় ধূসর আকাশের বুক চিরে গাঙচিলগুলোর ঝাঁক বেধে উড়ে যাওয়ার দৃশ্যটা সত্যিই দেখার মতো!

অয়ন বলল,
- হ্যাঁ। ভালো কথা, প্রথমবার ফেরীতে উঠলেন বুঝি?

নীলিমা বলল,
- হুম। কেমন একটা টাইটানিক টাইটানিক ভাব! তাই না?

বলেই নীলিমা হেসে ফেলল!
অয়নও হেসে বলল,
- হ্যাঁ, গরিবের টাইটানিক আরকি!

নীলিমা এবার জোরে শব্দ করে হেসে ফেলল! হাসি যেন থামতেই চাইছে না! অয়নও হাসছে।

অয়ন বলল,
- আমি একটু আসছি। আপনি এখানেই দাঁড়ান।

বলে অয়ন চলে গেল। নীলিমা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাতাসটা উপভোগ করছিল।

মিনিট দশেক পর হঠাৎই কেউ একজন পেছন থেকে বলল,
- Chocolate?

পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়ে নীলিমা চমকে পেছনে তাকালো। দেখলো অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন আবার বলল,
- Chocolate?
নীলিমা হেসে Chocolate টা নিয়ে বলল,
- ধন্যবাদ!
অয়ন হেসে বলল,
- স্বাগতম!

বিকেলের হালকা বাতাসে ফেরির ছাদে নীলিমার হাসিটা যেন একচিলতে রোদের মতো মনে হলো অয়নের কাছে........

------------------------------------------------------------------------------

নীলাঞ্জনা নীলিমা
১৩.১১.২০২০
শুক্রবার

পথের মাঝের গল্প Nơi câu chuyện tồn tại. Hãy khám phá bây giờ