অয়ন বলল,
- আর একটু হলেই তো পড়তেন পানিতে! কি এত ভাবছিলেন, বলুন তো?চোখ খুলেই নীলিমা দেখলো ও অয়নের অনেক কাছে দাঁড়িয়ে। অয়ন ওর এক হাত ধরে আছে।
নীলিমা একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে অয়নের দিকে। একটু সামলে উঠতেই ওর যে হাতটা অয়ন ধরে আছে, সে হাতের দিকে তাকায় নীলিমা এবং পরমুহূর্তেই অয়নের দিকে তাকায়। বিষয়টা খেয়াল করে অয়নও কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে হাত ছেড়ে দেয়।
এরপর একটু বেশিই অপ্রস্তুত হয়ে অয়ন বলল,
- দুঃখিত! প্লিজ কিছু মনে করবেন না! আসলে আপনি.....অয়নকে কথা শেষ না করতে দিয়েই নীলিমা বলল,
-ধন্যবাদ! আসলে, আমিই একটু আনমনা ছিলাম........***
- কি সুন্দর বাতাস এ জায়গাটায়, তাই না? মনেই হচ্ছে না, এখন দুপুর সাড়ে বারোটা বাজে!
অয়ন বলল,
-হুম। আসলে, জায়গাটা ঢাকার ভেতর খুব কাছে হলেও শহুরে আধুনিকতার খুব একটা ছোঁয়া নেই।- হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন। আচ্ছা, আপনার শহর ভালো লাগে নাকি গ্রাম?
অয়ন একমুহূর্তও চিন্তা না করে বলল,
- অবশ্যই গ্রাম! আর আপনার?নীলিমা হেসে বলল,
- একই। আসলে যতই হোক, গ্রাম-মফস্বলেই বেড়ে ওঠা তো! শেকড় কে তো আর ভোলা যায় না!- হুম। ঠিকই বলেছেন।
হাঁটতে হাঁটতে বেশ অনেকখানিই ভিতরের দিকে চলে এসেছে ওরা। গল্প করতে করতে খেয়ালই করেনি কখন একরাশ ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে রৌদ্রজ্বল নীল আকাশ! হঠাৎ খেয়াল করতেই নীলিমা অবাক হয়ে অয়ন কে বলল,
- আকাশের অবস্থাটা একবার দেখুন! এখন কি হবে! আমরা তো গ্রামের অনেক ভিতরের দিকে চলে এসেছি!
অয়নও বলল,
- তাই তো! ছাতাও নেই সাথে, আর বৃষ্টি নামতেও দেরি নেই!- এখন কি করি!!!
- আগে কোথাও দাঁড়াবার মতো জায়গা খুঁজতে হবে।
- ওদিকে বাস যদি ছেড়ে দেয়?
- বৃষ্টির মধ্যে ছাড়ার কথা না। তবুও আমি সুপারভাইজার সাহেবকে ফোন দিয়ে বলে দেবো। কিন্তু তার আগে দাঁড়াবার জন্য তো জায়গা খুঁজতে হবে।
অয়ন ও নীলিমা এদিক সেদিক তাকালো। তেমন কোনো ছাউনি নেই। পিছনে একটু দূরে ডানেই একটা বাড়ি। গেটের সামনে ছোট-খাটো ছাউনি। নীলিমা বলল,
- ওই যে, ওই বাড়িটার সামনে দাঁড়াই। ছাউনি মতোও আছে।
মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল। আকাশ ভেঙে নামলো অঝোর বৃষ্টি। হঠাৎই নীলিমা আর অয়ন দৌড়ে গেল বাড়িটার দিকে। নীলিমা ছাউনির নিচে দাঁড়ালেও অয়ন বৃষ্টিতেই ছাউনির থেকে একটু সামনে দৌড়ে গেল। নীলিমা চিৎকার করে বলল,
- আরে! আপনি কোথায় যাচ্ছেন! ভিজে যাবেন তো!
বৃষ্টির ঝমঝমানিতে সে শব্দ অয়নের কাছে পৌঁছলো না, অথবা পৌঁছুলেও ও কর্ণপাত করল না। অনেক শক্তি দিয়ে সামনে থেকে বড় একটা ডালসহ কচুপাতা ছিঁড়ে চলে আসলো ছাউনির নিচে। নীলিমা অবাক হয়ে বলল,
- আরে! আপনি তো পুরো ভিজে গেছেন! আর কচুপাতা কেন.......
নীলিমাকে কথা শেষ না করতে দিয়েই অয়ন একটু হাঁপ জিরিয়ে কচুপাতাটা নীলিমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
- এটা সামনে ধরে রাখুন। একটু হলেও কম ভিজবেন!
নীলিমা অবাক হয়ে অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে! অয়ন আবার বলল,
- কি হলো, নিন!
নীলিমা হাত বাড়িয়ে পাতাটা নিল। এরপর অয়নকে বলল,
- আপনি এদিকে সরে আসুন। পাতাটা বড় আছে।অয়ন বলল,
- আমি তো অর্ধেক ভিজেই গেছি! আর ভিজবো না। আপনিই নিন!- এসবের কোনো প্রয়োজনই ছিল না! আপনি শুধু শুধুই....
অয়ন বলল,
- শুধু শুধু নয়। একটু পরেই টের পাবেন!অয়ন কথা শেষ করার আগেই হঠাৎই প্রচন্ড বাতাসে বৃষ্টির ছাট এসে ভিজিয়ে দিল অয়নকে। কিন্তু নীলিমা ভিজলো না, হাতে কচুপাতা থাকায়।
অয়ন নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
- এবার বুঝলেন?অয়নের কথা বলার ভঙ্গি দেখে নীলিমা কিছুটা জোরেই হেসে ফেলল। ও হাসি থামাতেই পারছে না।
নীলিমাকে হাসতে দেখে অয়নও হেসে ফেলল। অয়নের মনে হলো,
সবুজ কচুপাতা হাতে নীল-সাদা সালোয়ার কামিজ পরা নীলিমার প্রাণখোলা হাসিটা যেন পূর্ণতা দিয়েছে এই বৃষ্টিমুখর দিনটিকে!
------------------------------------------------------------------------------
নীলাঞ্জনা নীলিমা
০৬.১১.২০২০
শুক্রবার
![](https://img.wattpad.com/cover/239830724-288-k425523.jpg)
YOU ARE READING
পথের মাঝের গল্প
Romanceকোনো কোনো গল্পের শুরু হবার জন্য বেশিকিছুর প্রয়োজন হয় না। এটিও তেমন। সামান্য এক পথের মাঝেই গল্পের সূচনা, আর শেষ? তা জানতে হলে তো গল্পটা পড়তে হবে! Wattpad এ প্রথম গল্প। আশা করি ভালো লাগবে। -নীলাঞ্জনা নীলিমা