চ্যাপ্টার ০২

547 19 0
                                    

র‍্যাব সাতের সামনে এসে আইদাদ ঘড়ি দেখলো। ফার্স্ট ক্লাসটা মিস হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। গাড়ি হাঁকিয়ে একটা ছেলেকে এই সময়ে এখানে আসতে দেখে কেউ ভ্রু কুঁচকালো না। হয়তো আর কেউ না, এটা আইদাদ বলেই।রুমের বাইরে দাঁড়ানো বুড়ো পিয়ন বলল,
“স্যার বাইরে।”
“আমি অপেক্ষা করছি।”
সরাসরি অফিসারের রুমের ভেতরে ঢুকে গেল ও। পিয়ন লোকটা একটু পর একটা সবুজ ফাইল টেবিলের উপর রেখে জিজ্ঞেস করল,
“কিছু খাইবেন?”
“না, নাস্তা করেই এসেছি।”
আইদাদ সব সময় দেখেছে এই পিয়ন লোকটা ওকে কিরকম যেন উদ্ভট রকমের সমীহ করে চলে। আরো স্পষ্ট বাংলায় বলল, ভয় পায়। ভয় পাওয়াটা আইদাদের কাছে অস্বাভাবিক লাগে না। চার বছর আগে অফিসার মোরশেদ ইসলাম যখন মাহবুব আজমকে গ্রেফতার করেন, তারপর থেকে অনেকেই আইদাদকে ভয় পায়।
আইদাদ আজম, ছোট আজম।
একজন খুনীর সন্তান।
একজন সিরিয়াল কিলারের সন্তান।
পিয়ন বেড়িয়ে যাওয়ামাত্র আইদাদ সবুজ ফাইলটা হাতে নেয়। যা আশা করেছিল ঠিক তাই। খুব দ্রুতই একটা খসড়া রিপোর্ট তৈরি হয়ে গেছে। আইদাদ দ্রুত শুধু পয়েন্টগুলোতে চোখ বুলালো,
জেসমিনা আক্তার। বয়স২৭। খুনের সময় মধ্যরাত। দুইটা আঙুল কেটে ফেলা হয়েছে।
এর মধ্যে একটা আঙুল আইদাদ ইতিমধ্যেই দেখেছে।
“বলেছিলাম না? খুনী ইচ্ছে করেই এভিডেন্স রেখে যায়?”
আইদাদের পাশের চেয়ারে বসে থাকা লোকটা বলে। ঠিক এই মুহূর্তে যদি পিয়ন লোকটা দেখতে পেত খোদ সেঞ্চুরিয়ান আজম এখানে বসে আছে, তাহলে কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতো? আইদাদের খুব জানতে ইচ্ছে করে।
আফসোস!
কিছু প্রশ্নের উত্তর অজানাই থেকে যায়। পিয়ন কখনই দেখতে পাবে না ভয়ংকর এই খুনীকে।
“তুমি এখানে কি করছো?”
আইদাদ বুঝতে পারলো মোরশেদ আংকেল ওকে এখানে দেখে মোটেও খুশি হননি।
“একটা লাশ পাওয়াগেছে?”
“হ্যাঁ। রোজ পাওয়াযায়।”
অফিসার মোরশেদ নিজের চেয়ারে বসে সবুজ ফাইলটা হাতে নিলেন। আইদাদ সরাসরি প্রসঙ্গে চলে গেল,
“আমার মনে হয় এটা সিরিয়াল কিলারের কাজ।”
অফিসার মোরশেদ সাথে সাথে চোখ তুললেন ফাইল থেকে,
“তুমি লাশ দেখেছো?”
আইদাদ মাথা নাড়ল।
“তুমি এতক্ষণ ক্রাইমসীনের ওখানেই ছিলে?”
আইদাদ মাথা নিচু করল,
“আপনি আসার আগে আমি এই ফাইলটাও দেখেছি।”
আইদাদ জানে, বাবাকে গ্রেফতারের পর থেকেই কিশোর আইদাদের জন্য এক ধরনের অপরাধবোধ কাজ করে মোরশেদ আংকেলের মধ্যে। আর একারণেই ওর কাছে আজ উনি অফিসার মোরশেদ না হয়ে মোরশেদ আংকেল হয়েছে। অফিসার মোরশেদ মোটেও রেগে গেলেন না। সহজ গলায় বললেন,
“একটা খুন দেখেই খুনীকে সিরিয়াল কিলার বলা যায় না।“
“লাশের আঙুল কেটে রেখেছে খুনী। এটা একটা সিগনেচার।“
“দেখো আইদাদ। আমি বুঝতে পারছি তোমার ব্যাপারটা। কিন্তু আমরা প্রতিদিন আরো অনেক উদ্ভট ব্যাপার ফেইসকরি। “
“আংকেল, আপনি বুঝছেননা। আমাদের এখানে একজন সিরিয়াল কিলার ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাদের থামাতে হবে।“
“হু। আমাদের থামাতে হবে। তোমাকে না।“
কথাটা হয়তো আইদাদের গালে একটা চড় এসে লাগার মত লাগার কথা ছিল। কিন্তু তা হল না,
“আমি আপনাদের এজন্য সাহায্য করতে পারি।“
“কারণ তুমি মাহবুব আজমের ছেলে?”
আইদাদ অফিসার মোরশেদের কথায় মাথা নাড়ল,
“এক্সাক্টলি। আমি এমন অনেক ভাবে হেল্প করতে পারি আপনাদের যা আপনারা ...”
ওকে থামিয়ে দিল অফিসারমোরশেদ,
“তুমি মাহবুব আজমের ছেলে। এজন্য আমার উচিৎ তোমাকে সন্দেহ করা, তোমার সাহায্য নেয়া না। ট্রাস্ট মী, এটা যদি কোন সিরিয়াল কিলারের কাজ হত, আমি সবার আগে তোমার কাছেই জানতে চাইতাম গতরাত দশটার পর তুমি কোথায় ছিলে?”
অফিসার মোরশেদ প্রশ্ননা করলেও আইদাদ উত্তর দিল সাথে সাথেই।
“আমি বাসায় ছিলাম।”
অবশ্য এর কোন প্রমান আইদাদ দিতে পারবে না। দাদী সাক্ষ্য দিতে পারে আইদাদের পক্ষে। কিন্তু দাদীর সাক্ষ্য কতটা গ্রহনযোগ্য তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আরো দুইজন আছে যারা সাক্ষ্য দিতে পারে। রামিসা আর তানভীর। আইদাদের জন্য মিথ্যে সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়ে যাবে বিনা শর্তে।
“তোমার না ক্লাস আছে?যাও।”
“কিন্তু ...”
আইদাদ কথা শেষ করার আগেই অফিসার মোরশেদ বললেন,
“তুমি ক্রাইম সীনে অহেতুক ঘুরে বেড়িয়েছো। গোপনে আমার টেবিলের ফাইল হাতিয়েছো।আজকের জন্য যথেষ্ট রাগিয়েছো আমাকে। এখন যাও!”
আইদাদ কথা বাড়ালো না। এখন কথা বললে জিনিস জটিল হবে। পরে ঠান্ডা মাথায় আঙ্কেলকে বোঝাতে হবে । এটা একটা সিরিয়াল কিলারের কাজ, আইদাদ জানে। এই শহরে আরেকটা সিরিয়াল কিলার উঠে দাঁড়ানোর আগেই থামাতে হবে।

উত্তরাধিকার Onde histórias criam vida. Descubra agora