বান্ধবী

Start from the beginning
                                    

মায়ের ফোন এল - " কিরে কতদূর ? " বললাম - " এই তো অটো ধরব দাড়িয়ে আছি , অটো পেলেই পনেরো মিনিটে বাড়ি ঢুকছি ।" মা ফোনটা রেখে দিল । দেখতে দেখতে আরও পনেরো মিনিট কেতে গেল । একটাও অটো পেলাম না । আর যেগুলো পেলাম , হয় সেগুলতে প্যাসেনজার ভর্তি , নয় আমার রুটে যাবে না । 

দেখলাম আস্তে আস্তে সব কিছু গুছিয়ে , দোকানটা বন্ধ করে , দোকানদার বেড়িয়ে যাচ্ছে । দোকানদারটা আমার দিকে তাকিয়ে , খুব ক্ষীণ স্বরে বললেন - " দিদিভাই , তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যান । রাত হয়েছে , যায়গাটা সুবিধার নয় । " আমি একটু থতমত খেয়ে , কিছু বলে ওঠার আগেই , লোকটা গুঁটি গুঁটি পায়ে এগিয়ে গেল । 

অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থেকে ভাবলাম , রাস্তার উপরের বিল্ডিংটার সিঁড়িতে গিয়ে বসি । অটো আসলে তো এখান থেকেও ভালোই দেখা যাবে । বসে বসে ভাবছি , দোকানের লোকটা কি চোর বা খারাপ লোকেদের ব্যাপারে সাবধান করে দিয়ে গেল ? এমন সময় একটা হাত আমার কাঁধে পরল । আমি চমকে উঠলাম , দেখলাম - একটা মেয়ে , কখন এসে , আমার পাঁশেই বসেছে । 

আমি চিন্তে পারলাম না । জিজ্ঞেস করালাম - " কে বল তো ? ঠিক চিনতে পারলাম না । " মেয়েটা একটু হেঁসে বলল - " সে ... না চেনারই কথা । কতদিন দেখা হয়নি বলত ? অবশ্য আমি ঠিকই চিনেছি । " আমি একটু বিরক্তির গলায়েই বললাম - " এই ... এতো হেঁয়ালি করিস না তো !! আমার সত্যিই মনে নেই !! নাম টা অন্তত বল ... যদি তাতে কিছু মনে পরে । " মেয়েটি আবার হাসল , বলল - " আমি স্নেহা রে , মনে নেই তোর ? ছোট বেলায়ে তো একই স্কুলে , একই  ক্লাসেই পরতাম । " 

এইবার একটু স্বস্তি হল । সত্যি , ছোট বেলায় আমার খুব কাছের একটা বন্ধু ছিল - স্নেহা । স্কুলে একসাথে বসা থেকে , একে অপরের বাড়ি গিয়ে খেলা সব করেছি । কিন্তু ওর বাবার ত্রান্সফারের জন্যই  , ওদের স্বপরিবারে ব্যাঙ্গালোর চলে যেতে হয় । তারপর দেখা তো দূর , ফোনে বা চিঠিতেও কোনোদিন কথা হয়নি আমাদের । আমি তো ভুলেই গেছিলাম প্রায় সব । 

স্নেহা একটু ঝাঁকুনি দিয়ে বলল - " ওই  ... কি ভাবছিস বল তো ? কতদিন পর দেখা হল , কোথায় গল্প করবি , তা না... " এবার আমি হাসলাম , বললাম - " সত্যি , কতদিন দেখা হয়নি । কি করে চিনবো বলতো ! " এমনিতেই তখন রাত , রাস্তার লাম্প পোষ্টাও কিছুটা দূরে । এইদিকটা , আলো - ছায়া মেশানো । ঠিক করে মুখটা ঠাহর করা যাচ্ছেনা । 

অনেকদিন পর , ছোট বেলার বন্ধুর সাথে গল্প করতে করতে , যেন একটা ঘোড় লেগে গেছিল । কত কথা বলছিল স্নেহা , ওর বেড়ে ওঠার গল্প , ওর বাড়ির লোকরেদের গল্প , ওর বড় অসুখের গল্প , আরও কতকি । আমি শুধু শুনে চলেছি মন্ত্রমুগ্ধের মতো । হঠাৎ , ফোনটা বেজে ওঠায় ঘোড় কাটল । মা ফোন করছে । ফোনটা ওঠাবার সাহস হল না । মোবাইলে সময়টা দেখেনিলাম - পণে এগারোটা । 

কি করে যে এতটা সময় কেটে গেলো বুঝতেও পারলাম না । স্নেহাকে বললাম - " অনেক দেড়ি হয়ে গেছে রে ! আমরা আবার একদিন গল্প করব । " স্নেহা হাসি মুখে বলল - " হ্যা , আমি এখানে কিছুদিন আগেই এসেছি , এবার থেকে তো এখানেই থাকব । চিন্তা নেই বন্ধু , আবার এখানেই দেখা হবে ।" আমি আর সময় নষ্ট করলাম না । একটা খালি অটো আসছিল । আমি তাতেই চড়ে বসি । স্নেহা সিঁড়িতে বসেই হাত নাড়ছিল , বিদায়ের উদ্দেশ্যে । আমিও হাত নাড়িয়ে বেড়িয়ে গেলাম ।

এই ঘটনার প্রায় দুই - তিন মাস পর , স্নেহাকে অনেক কষ্টে ফেসবুকে খুঁজে পাই । মুখটা খানিকটা পরিচিত । মানে - এই ছবিগুলোর মুখের সাথে আমার মনে থাকা সেই ছোট বেলার বন্ধু , স্নেহার মুখের মিল আছে । কিন্তু সেদিনের দেখা স্নেহার মুখের আদলের -একেবারেই মিল নেই । হ্যাঁ , অন্ধকার ছিল , কিন্তু তা বলে এতো অমিল ? 

যাইহোক , স্নেহাকে একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে , একটা মেসেজ পাঠিয়ে দিলাম - " সরি রে ! সেদিন তাড়াহুড়োয় চলে যেতে হয়েছিল আমাকে । তোর নাম্বারটাও নেওয়া হয়নি । জাজ্ঞে , মেসেজটা দেখেই আমাকে তোর ফোন নাম্বারটা পাঠাস । "

একদিনের মধ্যেই মেসেজ এসেছিল স্নেহার । " কিরে কেমন আছিস । বাবা !!  এতো বছর পরে আমাদের যে  আবার কথা হবে  , ভাবাই যায় না । এই নে আমার নাম্বার - ৯৮১৩***৪৫২ । তাড়াতাড়ি সময় করে ফোন করিস। " এই অবধি তো ঠিকই ছিল । সমস্যা টা হল স্নেহার মেসেজের পরের তিনটে লাইনে - " তুই কি এবার সত্যি সত্যি পাগল হলি নাকি , কি সব লিখেছিস -  ' সরি ...তাড়াহুড়োয় কোথায় গেছিলি ...' । তুই সেই আগের মতই আছিস , কথায় কথায় ঠাট্টা । কোথায় কলকাতা , আর কোথায় ব্যাঙ্গালোর - বলে নাকি দেখা হয়েছিল ...হা ! হা ! হা ! "

পরে কৌতূহল হওয়ায় , সেই জাগাটায় আবার ঘুরে এসেছিলাম - দিনের আলোয় । একটা পুড়নো বিল্ডিং । পরে আরও খোঁজ করায় জেনেছিলাম - ওটা একটা হাঁসপাতাল । আপনারা জানেন কিনা জানিনা । কিন্তু যারা সল্টলেকের দিকে থাকেন বা যাতায়েত করেন , তারা অনেকেই শুনেছেন - একটা হাঁসপাতালের কথা । যাতে ভুলবশত আগুন ধরে যাওয়ায় , বিল্ডিংটা নিজের সাথে সাথে অনেকগুল প্রাণ নিয়ে পুড়ে যায় । অপঘাতে মৃত - ৯৩ ।।

You've reached the end of published parts.

⏰ Last updated: Aug 05, 2020 ⏰

Add this story to your Library to get notified about new parts!

অন্ধিসন্ধিWhere stories live. Discover now