আমার অদ্ভুত সূচনা

Start from the beginning
                                    

 উপরের তলায় তখন সিমেন্ট মারা দেওয়াল ও মেঝে , জানলা- দরজা- তখন কিছুই ছিল না , শুধু কাঠামোটাই ছিল । এখন আমাদের যেই ডইনিং রুম , সেখানেই তখন আমাদের শোয়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছিলো । দুপুরে আবার বৃষ্টি নামলো ঝমঝমিয়ে । আমি আর কি করি , তখন পুতুল নিয়েই খেলতে খেলতে কখন ঘুমিয়ে গেছিলাম , আমার মনে নেই । 

যখন ঘুম ভাঙল , তখন আর বাইরে থেকে কন আলো আসছিলনা । কিন্তু দূরের কোন একটা বাড়িতে কেউ সন্ধ্যা দিচ্ছিল শঙ্খ বাজিয়ে ।  মা-বাবা তখন উপরের বারান্দায় বসে চা খাচ্ছিল  । বৃষ্টিটা অনেকটা ধরে এসেছে , এখন আর জলের ছাট ভেতরে ঢুকছে না । আমি গিয়ে মায়ের কোলে লুটিয়ে পরলাম । ভাগ্যিস ! মায়ের চা খাওয়া শেষ হয়েগেছিল , নাহলে একচোট বকা কপালে ছিল। মা আমাকে কিছু বলল না উলটে আদর করে দিল । বাবা আমাকে ডেকে নিয়ে গেলো একটা জিনিস দেখাতে । একটা হাঁড়ি । ঢাকনা সরাতেই দেখলাম তাতে দুটো মাঝারি গোছের মাছ ভেসে বেড়াচ্ছে । মা একটু হেসে বলল বাবা নাকি ওই দুটোকে নিচের তলায় ঢুকে যাওয়া জল থেকেই ধরেছে , আজ রাতে গরম গরম ঘি ভাত ও মাছ ভাজা খাওয়া হবে । মাছগুলোর জন্য একটু মন খারাপ করল বটে , কিন্তু মাছ ভাজা কে কি না করা যায় ? তাই ঠিক করলাম ওদের আর দেখবনা । তারপর অনেকটা সময় এদিক-ওদিক করতে করতে সময় পেরিয়ে গেলো । আমাদের ডিনার করা শেষ হল । 

 মা- বাবা অনেক আগেই ঘুমিয়ে যায় , হয়তো সারাদিনের ধকলের ক্লান্তিতে । আমার আবার আজ চোখে একটুও ঘুম নেই । আজ সারাদিন তো প্রায় ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিয়েছিলাম ।  শুয়েই রইলাম । এমনিতেই অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছিলোনা , মোমবাতির আলোটাও কমে আস্তে আস্তে একসময় নিভে গেলো । এবার ঘরে নেমে এলো ঘুটঘুটে অন্ধকার । 

আমরা সবাই বারান্দার দিকে পা করে শুয়ে ছিলাম । আমি ছিলাম মা-বাবার মাঝখানে । হঠাৎ একটু আলোর ঝলকানিতে যেটুকু তন্দ্রা এসেছিল তাও চলে গেলো । তাকিয়ে বুঝলাম আলোটা আসছে খোলা বারান্দার দিক থেকে । আলোটা আস্তে আস্তে কাছে আসতে লাগলো , আরও কাছে !! আলোটা সাদা ,সাদা ধপধপে । ম্লান  আলো ।ঠিক যেমনটা চাঁদের হয় । উজ্জ্বল , কিন্তু চোখে লাগেনা । আলো ছড়াচ্ছে কিন্তু আলোকিত করছেনা কিছুই । আলোটি কাছে আসতে আসতে একসময় বারান্দায় এসে ঠেকল । এতক্ষণ বেশ মজা লাগছিল ।  কার্টুনে আমি শুটিং স্টারের ছবি দেখেছি । কিন্তু এবার  ভয় হল । আলোটা  এবার আস্তে আস্তে মানুষের আকার নিতে শুরু করেছে ! আমি চোখ মুছে আরও এবার ভালো করে দেখলাম । না... কোন ভুল নেই । আমি দেখতে পারছিলাম ওই জিনিসটাকে । ওটার মানুষের মতো শরীর। দুটো হাত , দুটো পা একটা মাথা । ভয় টা লাগার কারণ এটা যে আমি ওটার আর  কিছুই দেখতে পারছিলাম না । মানে ওটার কোন লিঙ্গ বোঝা যাচ্ছিলোনা , ওর কোন মুখ ছিল না। শুধুই একটা আলোর শরীর । 

আমি এতক্ষণ চোখ ছানাবড়া করে শুধু দেখে চলেছিলাম সভয়ে । কিন্তু হঠাৎ মনে পড়লো , পাশে তো মা-বাবা দুজনেই আছে । আমি আস্তে আস্তে গলা নামিয়ে ওদের ডাকতে শুরু করলাম । কেউ সাড়া দিল না । আমি ওই জিনিসটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওটা এগিয়ে আসছে বারান্দার দরজাটার দিকেই । আমি আরও জোড়ে ঝাকুনি দিয়ে এবার ডাকতে শুরু করলাম দুজনকে । কিন্তু মা একটু উঠে আমাকে এক ধমকানি দিয়ে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়লো  । বাবা তো আগে থকেই পাশ ফেরা আছে অন্যদিকে , তার উপর নাক ডাকছে ঘড়ঘড় শব্দ করে । আমি আবার তাকালাম বারান্দার দিকে , দেখলাম এবার ওটা এসে বসেছে ডাইনিং এর শেষে ও বারান্দার দরজার  ঠিক মাঝখানে রাখা একটা চেয়ারে ,  যেটাতে বাবা বসে চা খাচ্ছিল সন্ধ্যে বেলায় । আমি বুঝলাম - মা-বাবাকে ডাকাডাকি করে আর লাভ নেই , কেউ আমার কথা শুনছে না । হয় তো বা সত্যিই শুনতে পারছেনা !! হয়তো আমার গলা দিয়ে আর কোন শব্দ বেরচ্ছেনা !! আমি ঠিক করলাম ওই দিকেই তাকিয়ে থাকব , ওটার দিকে । তাই করলাম । কিন্তু বেশীক্ষণ নয় । কিছুক্ষণ পরেই দেখি ওটার মাথাটা আস্তে আস্তে ঘুরছে আমার দিকেই । আর আমি তাকিয়ে থাকার সাহস পেলাম না । আমি চাদরের নিচে মাথা গুঁজে , চোখ বুজে , ঘাপটি মেরে রইলাম । 

চোখ খুলে দেখি সকাল হয়ে গেছে । রোদ উঠেছে । আমার পাশে আর কেউ নেই এখন । একটু  ভয় পেলাম । দৌড়ে নীচে গেলাম । মা-বাবা দুজনেই আছে । জলটা একটু কমেছে । মা জিজ্ঞেস করল আমার ঘুম হল কি না , ভোর বেলায় নাকি আমি ঘুমের ঘোরে কাঁদছিলাম । আমি বললাম মা কে রাতের সব কথা। মা বলল ভয় পাওয়ার কিছু নেই , আমি নাকি পরী দেখেছি রাতে । ছোটবেলায় নাকি অনেক বাচ্চারাই পরী দেখে থাকে । 

আজ এত বছর পরেও আমার সব মনে আছে , প্রতিটি মুহূর্ত । যদিও সেদিনের পর আমি আর এরকম কিছু দেখিনি । আচ্ছা আপনাদের মধ্যেও  কি এরম দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছেন কেউ ? বা আপনাদের চেনা কোন ছোট বাচ্চা ? আপনারা কি দেখছেন কোনোদিন ... পরী??? 




অন্ধিসন্ধিWhere stories live. Discover now