Part - 23

134 8 0
                                    


আর দাড়িয়ে থাকতে না পেরে মায়া বসে পড়েছে।। মনে মনে ভাবছে কি হবে এখন?? এরকম কিছু হবার কথা তো সে ভাবে নি।। এ-এই অন্ধকার কয়েদখানায় তার একদম ভালো লাগছে না। কেমন যেন উদ্ভট গন্ধ যুক্ত কয়েদখানা।। ভিতরে আবছা অন্ধকার। পালানোর সময় মায়া অনেক বার রাতে বাইরে একা কাটিয়ে ছিল।। কিন্তু এত ভয় করে নি তার।। হঠাৎ কিছু একটা তার পায়ের উপর দিয়ে দৌড়ে গেল।। বিভীষা বলে মায়া চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে উঠল।। কান্না পেয়ে গেল তার।। দেখতে পেল না কি সেটা।। তার পা চুলকাতে লাগল অনবরত।। দাড়িয়ে থাকতেও পারছেনা।। চুলকানোর জন্য বসে পড়তে হয়েছে।। এরই মধ্যে তালা খোলার শব্দ পেল।। উপরে তাকিয়ে দেখল যে টহলদার টা তালা খুলছে।। আর পাশে দাড়িয়ে আছে একজন সাধারন সৈন্য।। খুশি হয়ে গেল মায়া।। নিশ্চয় তাকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।। হয়ত জানতে পেরেছে মায়া নির্দোষ।। তাই খুশি মনেই বেরুতে গেল।। কিন্তু মায়া বেরুতেই ওই সৈন্যটা খপ করে মায়ার হাত ধরে ফেলল।। চমকে উঠল মায়া!!! 
.
----- কি-কিই হয়েছে?? ছাড়ুন আমাকে।।
সৈন্যটি মায়ার কথা পাত্তাও দিল না।। টেনে নিয়ে যেতে লাগল।। 
.
---- কি করছেন আপনি?? কোথায়য় নিয়ে যাচ্ছেনন?? ছাড়ুন আমাকে।।
.
এই বলে মায়া নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল।। সৈন্যটি এক পলক মায়ার দিকে তাকালো।। সাধারন দাসী হয়ে এমন ভাব করছে যেন সে একজন সম্রাজ্ঞী!!! অসভ্য দাসী কোথাকার!! আবার নজর ফিরিয়ে নিল সৈন্য টা।। ভ্রুক্ষেপ করল না মায়ার হুমকি আর চিৎকার চেঁচামেচি।। 
এবার মায়ার মনে নতুন ভয়ের সঞ্চার হলো।। তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?? মেরে ফেলেতে?? সামান্য দোষের জন্য এত বড় কঠিন শাস্তি?? বার্বান আইন এত কঠোর?? তাকে কি ফাসিতে ঝুলাবে নাকি শুলে চড়াবে?? শুলে চড়াবে ভাবতেই মায়ার গা ঘিন ঘিন করে উঠল।। তার চেয়ে বরং ফাসিতে ঝোলা ভালো।। মায়া অনুরোধ করবে তাকে ফাসিতে ঝোলানোর জন্য।।
বেশ কিছু দূরে নিয়ে আসা হয়েছে মায়া কে।। সামনে তাকিয়ে দেখল মায়া।। একদল সৈন্য কে দেখা যাচ্ছে।। সেই একদল সৈন্যর মাঝ খানে সবচেয়ে লম্বা একজনের উপর মায়ার চোখ বার বার পড়ছে।। কিন্তু তাকে কোন সাধারন সৈন্য বলে মনে হচ্ছে না।। মনে হচ্ছে কোনো সৌম্য মূর্তিতে একজন সম্রাট দাড়িয়ে আছে।। সম্রাট?? সম্রাট মানে ও-ওই বার্বান সম্রাটট!!! বুঝতে পেরেই মায়া চোখ গুলো উল্টে এলো।। বড় বড় চোখ করে সামনে তাকালো।। অদূরেই বার্বান সম্রাট দাড়িয়ে আছে।। এখনো পিছন ফিরে আছে।। মায়া কে এখনো খেয়াল করে নি।। মায়ার বুকটা ধুক ফুক করতে লাগল।। তাড়াতাড়ি চোখ টা নামিয়ে ফেলল।। যাতে নজরে চোখ টা না পড়ে।। মায়া ভাবতে লাগলে সে কি বাহানা দিবে?? কিন্তু কিছুই মাথায় আসছেনা।। ওই সৈন্যটির হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য জোর করতে লাগল।। কিন্তু সৈন্যটি তাকে শক্ত হাতে ধরে রেখেছে।। এই মুহুর্তে যদি কোনো মতে ছাড়া পায় তাহলে মায়া এখন দৌড়ে পালাতো।। মায়া অলোকের ঠিক পিছনে দাড়ালো।। তারপর সৈন্যটি অভিবাদন জানাতে মাথা নোয়ালে মায়া কে ও মাথা নোয়াতে হল।। 
.
---- সম্রাট??
.
মাথা নিচু অবস্থায় মায়া অলোকের পা ফেরানো দেখে বুঝতে পারলো অলোক তার দিকে ফিরেছে।। 
ডাক শুনে অলোক ধীরে ধীরে পিছন ফিরে তাকালো।। মায়ার বুকে হাতুরী পেটা শব্দ টা বেড়ে যাচ্ছে।। অলোক নিঃশব্দে কিছুক্ষন তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
.
---- কে তুমি?? এখানে কি জন্যে এসেছো??
.
মায়া কি বলবে বুঝতে পারছে না।। অলোক আবারো থম থমে গলায় ধমকে উঠল
.
---- বল বলছি কে তুমি??
.
ধমকে খেয়ে মায়া ভয়ে চমকে উঠল।। তারপর ধীরে ধীরে বলল
.
---- স-সম্রাট আ-আমি এ-এখানে"""""
.
হঠাৎ করে কথা কেটে গেল মায়ার।। কারন অলোক এক পা কাছে এসে দাড়িয়েছে।। আরো এক পা কাছে আসল অলোক।। যেন মায়ার নিঃশ্বাসের শব্দটাও সে শুনছে।। সে প্রথমে সন্দেহ করেছিল।। কিন্তু আওয়াজ শুনে তার সন্দেহ কিছুটা দূর হল।। ধীরে ধীরে সে হালকা ভাবে দুই আঙ্গুল থুতনিতে দিয়ে মায়ার মুখটা উপরে তুলল।। অলোক মায়া কে স্পর্শ করতরই তার শরীরে একটা শিহরন বয়ে গেল।। চোখ বন্ধ করে ফেলল সে।। অলোক মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে।। কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করছে।। তার আঙ্গুলের মাথা দিয়ে তার গালে একটু করে স্পর্শ করল। স্পর্শ করতেই অলোক দেখল তার আঙ্গুলে কালো তেল চিটচিটে কিছু লেগে আছে।। এবার ভ্রু কুচকে ভালো করে পরিক্ষা করে দেখলো তারপর বুঝলো এটা সাধারন কালি।। এবার মায়ার দিকে তাকালো অলোক।। তারপর আরো গম্ভির কন্ঠে বলল
.
---- চোখ খোল!!!
.
মায়া আরো জোরে চোখ চেপে রাখল।। সে চাই না ওই বার্বান তার চোখ দেখুক।। কিন্তু অলোকের সেটা সহ্য হল না।। সে আরেক বার ডাকল
.
----- মায়া!!!!
.
নিজের নাম শুনে ঝট করে চোখ টা খুলে ফেলল মায়া।। চোখ খুলেই দেখল অলোক গভীর অথচ অশান্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।। এতটা কাছ থেকে অলোক কে দেখে নি সে।। একটা পলক না ফেলেও তার দিকে তাকিয়ে আছে সে।। এই অশান্ত চোখে তার অনেক চঞ্চলতা বিরাজ করছে।। মায়া হা করে তাকিয়ে রইল অলোকের দিকে।। কিছুই বুঝতে পারছেনা।। এক মুহুর্তের মধ্যে একটা কান্ড করে ফেলল অলোক।। আরেকটু এগিয়ে এসে দুহাতে মায়ার মুখ টা ধরে ঝট করে নিজের ঠোট দিয়ে মায়ার ঠোট চেপে ধরল।। নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগ ও হল না মায়ার।। আশে পাশের সৈন্য সামন্ত রা হা করে তাদের সম্রাটের দিকে তাকিয়ে আছে।। তাদের জানা মতে তাদের সম্রাট কখনো নারী আসক্ত সম্রাট ছিল না।। অথচ আজ সামান্য দাসী কে""""""
মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল সবাই।।
মায়া প্রাণ পনে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য অলোক কে ক্রমাগত আঘাত করে চলেছে।। কিন্তু অলোক যেন চারদিকের দুনিয়া সম্পর্কে ভুলেই গিয়েছে।। 
মায়ার শরীর শক্তিহীন হয়ে পড়ছিল।। যেন সব শক্তি অলোক এক টানে শুষে নিচ্ছে।। অবশেষে ছাড়ল অলোক।। ঢলেই পড়ে যাচ্ছিল মায়া।। কিন্তু অলোক তাকে এক ঝটকায় কাধে তুলে নিল।। তার পর তাকে নিয়ে চলা শুরু করল।। পিছনের কেউ সম্রাট কে থামানোর সাহস করল না।। সাহস করল না তাদের অসমাপ্ত আলোচনা সমাপ্ত করার।। অলোকের হাটার ঝাকুনিতে মায়ার হুশ ফিরে আসল।। সে চেষ্টা করছিল অলোকের কাধ থেকে নেমে যাওয়ার।।
.
---- ছে-ছেড়ে দাও বলছি আমাকে!!! 
.
কিন্তু অলোক চুপচাপ মায়া কে আরো শক্ত করে চেপে ধরল।। এরপর নিজের কক্ষে নিয়ে এসে তার রাজকীয় গোসল খানার ছোট্ট হৃদে ছুড়ে মারল।। মায়া সাতার জানলেও পানির উপর স্বাভাবিক ভাবে না পড়ায় মায়ার পিঠ ছ্যাত করে উঠল।। নাকে মুখে একরাশ পানি ঢুকলো।। তার কাশি দিতে দিতে কোন রকম উঠে দাড়ালো।। চোখ মুখ মুছে উঠে দাড়াতেই খেয়াল করল অলোক তার শরীরে কাপড় খুলছে।। পাগড়ি টা এক পাশে ফেলে দিয়েছে।। আর তার গায়ে থাকা জোব্বা ধরনের জামার ফিতা খুলে ফেলেছে।। তারপর খালি গায়ে ধীরে ধীরে হৃদের সিড়ি নিচে মায়ার কাছে চলে আসছে।। এমনিই পানি খেয়ে মায়ার সবুজ চোখ ও লাল হয়ে আছে।। তার উপর কাশির কারনে চোখে কিছু দেখছেনা।। যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে।। সে আর কখনো এরকম কোনো ছক কাটবেনা যাতে তাকে অলোকের সাথে এভাবে মুখো মুখি হতে হয়।। চোখ নাক মুছতে মুছতে পিছু হঠতে হঠতে ভাবছিল এই কথা।। আর অলোক তার দিকে এগিয়ে আসছিল।। আর সে পিছু যাচ্ছিল।। যেতে যেতে তার কাধ থেকে গলা পানি পর্যন্ত হয়ে গেল।। কিন্তু অলোক থামলো না।। এক সময় মায়া হাবুডুবু খেতে লাগল।। সাতার জানলেও এই মুহুর্তে অলোকের সামনে যেন তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।।
.
(চলবে)

Every Thing Is Fair In Love And War ♥Where stories live. Discover now