#নেশা
লেখিকা : সৈয়দা রাইসা আবেদীন অহনা
পর্ব - ১৯
জারা হুম বলার পরেই তন্নিমা চলে গেলে জারা ফাওয়াদের রুমের দিকে তাকিয়ে থাকে। এদিকে ফাওয়াদের বাসায় ফাওয়াদ আর জারা অফিসে যাওয়ার পর ফাওয়াদের মা, ফাওয়াদের বাবা, ফাওয়াদের খালামনি আর জারার মা একসাথে বসেই কথা বলছিলেন। তখনই ফাওয়াদের মা বলে,
ফাওয়াদ - আপা আমরা যা করলাম তা কি ঠিক হলো? এইভাবে ফাওয়াদ আর জারাকে জোর করে বিয়ে দাওয়াচ্ছি। আমার এই অসুস্থতার ঢং করে।
তখনই পাশ দিয়ে ফাওয়াদের বাবা বলেন,
ফাওয়াদের বাবা - এইখানে কিছুই খারাপ হয় নি। আমরা যা করছি আমাদের ছেলে মেয়ের ভালো বুঝেই করছি।
ফাওয়াদের খালামনি - হ্যাঁ। তুই শুধু শুধু চিন্তা করিস না তো।
ফাওয়াদের বাবা - দেখো আজ যদি আমরা এমন না করতাম তাহলে আমরা জারা আর ফাওয়াদকে কখনোই এক করাতে পারতাম না। আমরা সবাই জানি ফাওয়াদ আর জারা একে অপরের জন্য কতোটা প্রটেক্টিভ। কিন্তু ওরা তা বুঝতে পারছে না।
ফাওয়াদের খালামনি - আর একবার বিয়েটা হয়ে গেলে দেখবি ওরা নিজেরাও বুঝতে পারবে যে ওরা একে অপরের জন্য কতোটা পারফেক্ট।
ফাওয়াদের মা - সবই বুঝলাম কিন্তু যদি ওরা এটা জেনে যায় তাহলে কিন্তু অনেক রাগ করবে।
ফাওয়াদের খালামনি - আরে ওরা এটা জানবে কি করে। ওদের আমরা এটা বললে তো জানবে।
ফাওয়াদের মা - তা অবশ্য ঠিকই বলেছেন।
ফাওয়াদের খালামনি - যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে। সেদিন রাতে প্লানটা না করলে এমন কখনোই হতো না।
সেদিন রাতে ফাওয়াদের বাসায়,,,,,
ফাওয়াদের মা - আসলে জারার আম্মু আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো।
জারার মা - হ্যাঁ বলেন!
ফাওয়াদের মা - আসলে আমি আপনার কাছে ফাওয়াদের আর জারার বিয়ের কথা বলতে চাচ্ছিলাম।
তখনই জারার মা অবাক হয়ে বলে,
জারার মা - কিন্তু এটা কিভবে সম্ভব? ফাওয়াদ আর জারা তো একে অপরের ভালো বন্ধু। এছাড়া আর কিছুই না।
ফাওয়াদের মা - আমি জানি। আর তার জন্যই তো বলছি। দেখুন ওরা একে অপরকে অনেক ভালোমতো জানে। আর লাইফ পার্টনার হিসাবেও ওরা একদম পারফেক্ট।
জারার মা - দেখুন আমি মানি জারা আর ফাওয়াদ একে অপরের জন্য পারফেক্ট এমনকি আমি নিজেও জারাকে বিয়ের জন্য অনেকদিন ধরে বলছিলাম কিন্তু মেয়ে আমার রাজিই না। কিন্তু তার উপর যদি জানতে পারে যে ফাওয়াদের সাথে তাহলে আমার সাথে প্রচুর রাগ করবে?
ফাওয়াদের খালামনি - তার চিন্তা আপনি করবেন না। সেটার জন্য আমি, ফাওয়াদের মা আর ফাওয়াদের বাবা অনেক ভালো একটা প্লান করেছি। আর আমি জানি সেই প্লান অনুযায়ী কাজ করলে ওরা কেউই না করতে পারবে না। এখন এইভাবে যদি ওদের রাজি না করাতে পারি তাহলে আমাদের ছেলে মেয়ের বিয়ে আর আমরা বেচে থাকতে দেখে যেতে পারবো না। তাই এর থেকে ভালো উপায় নেই আর৷
জারার মা - কিন্তু ওরা রাজি হবে তো?
ফাওয়াদের খালামনি - অবশ্যই হবে।
জারার মা - ঠিক আছে তাহলে,,,, আপনারা যা ভালো বুঝেন করেন। আমি আছি আপনাদের সাথে।
বর্তমান,,,,
জারার মা - তবে আপনার প্রশংসা না করে পারছি না। ভালোই অভিনয় করতে পারেন আপনি।
ফাওয়াদের মা - হাহাহা তা যা বলেছেন। ওদের রাজি করানোর জন্যও ডাক্তারকে কনভেন্স করানো লেগেছে। আর শুধু শুদু ডাক্তারকে দিয়েও মিথ্যা বলিয়ে তিনদিন শুধু শুধু হসপিটালে থাকতে হয়েছে।
ফাওয়াদের বাবা - আমাদের ছেলে মেয়েরা এমন জেদি বলেই তো করা লাগলো।
ফাওয়াদের মা - হুম তা ঠিক বলেছো।
এদিকে অফিসের কাজ শেষ করে জারা আর ফাওয়াদ ফাওয়াদের বাসায় আসে। জারা ফাওয়াদের বাসায় এসে বসতেই জারার মা বলে,
জারার মা - কিরে আজ তোর কাজ এতো তাড়াতাড়ি শেষ?
জারা - হ্যাঁ। আসলে আজ অফিসে কাজ কম ছিলো তাই। বাই দা ওয়ে চলো বাসায় যেতে হবে তো।
তখনই পাশ দিয়ে ফাওয়াদের খালামনি বলে,
ফাওয়াদের খালামনি - দেখো তো মেয়েটা বলে কি? এতো তাড়া কিসের? মাত্রই তো অফিস থেকে আসলে৷ একটু রেস্ট নিয়ে তারপর নাহয় বের হও।
জারা - না খালামনি। আমার আবার একটু কাজও আছে। বাসায় গিয়ে তা শেষ করা লাগবে। আসলে আমি কাজ বাকি রেখে বসে থাকাটা পছন্দ করি নাই তাই।
এদিকে জারা হল রুমে সবার সাথে বসে কথা বলছিলো তখনই ফাওয়াদের বাবা এসে বলে,
ফাওয়াদের বাবা - ফাওয়াদ!
ফাওয়াদ - জ্বি বাবা!
ফাওয়াদের বাবা - তোর মা জারা আর তোর সাথে দেখা করতে চাচ্ছে। কি যেন বলবে।
তখন জারার আর ফাওয়াদ একে অপরের দিকে এক নজর তাকিয়ে তারপর উঠে গিয়ে ফাওয়াদের আম্মুর রুমে গিয়ে বসে আর তখনই ফাওয়াদের আম্মু জারা আর ফাওয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলে,
ফাওয়াদের আম্মু - তোরা কি আমার উপর রাগ করে আছিস? আমি জানি আমি যেভাবে তোদের কাছে সেদিন হসপিটালে আমার ইচ্ছার কথা বলেছি তা শুনে তোদের রাগ করাটাই স্বাভাবিক।
তখন পাশ দিয়ে ফাওয়াদ বলে,
ফাওয়াদ - মা প্লিজ এসব কথা রাখো। এখন এসব কথা বলার সময় না। আর সেদিন যা বলেছিলে তা তো তখনই আমি আর জারা কথা দিয়ে দিয়েছি। আর বলেছি না তুমি যাই বলবে তাই হবে। তাহলে এসব নিয়ে চিন্তা করো না। নিজে রেস্ট নাও। আর ডাক্তারও বলেছে তোমাকে এতো টেনশন নিতে না।
তখন পাশ দিয়ে জারা বলে,
জারা - হ্যাঁ আন্টি আপনি প্লিজ এসব নিয়ে চিন্তা করবেন না। আপনি নিজের খেয়াল রাখুন।
জারা আর ফাওয়াদের কথা শুনে ফাওয়াদের মা ওদের দুইজনের মাথায় হাত রাখে। এদিকে জারা আর কিছুক্ষন ফাওয়াদের বাসায় থেকে তার আম্মুকে নিয়ে বাসায় চলে আসে। জারা আর তার আম্মু বাসায় আসার ঘন্টা দুই এক পরেই বাসার দরজায় ডোরবেল বাজতেই বাসার এক সার্ভেন্ট এসে দড়জা খুলে দিলেই মেহেরুন বাসায় এসেই সোজা জারার রুমে চলে যায়। এদিকে জারা তার রুমে স্টাডি টেবিলের দিকে ঘুরে একটা ফাইল দেখতেছিলো। জারা ফাইলটি নিয়ে পিছনে ঘুরে সোফার দিকে আসতে নিলেই জারা দেখে যে তার রুমের দরজায় মেহেরুন দাড়িয়ে আছে। এদিকে হটাৎ মেহেরুনকে দেখে জারা অবাক হয়ে বলে,
জারা - তুই কখন আসলি?
মেহেরুন জারার রুমে এসে জারার সামনে দাড়িয়ে বলে,
মেহেরুন - মাত্রই। আর হয়েছে কি তোর। জানিস তোর জন্য এতোই টেনশন হচ্ছিলো যে আমি আর মামার বাসায় থাকতে পারি নি। তোর সাথে কথা বলার পরেই আমি সেখান থেকে রওনা দিয়ে চলে আসি।
জারা - অঅঅ আমার জন্য এতো চিন্তা তোর!
জারার কথায় মেহেরুন বলে,
মেহেরুন - প্লিজ দুষ্টমি করিস না৷ আই এম রিয়্যালি সিরিয়াস। এখন বল কি হয়েছে। তোর কথা শুনেই বুঝতে পেরেছিলাম যে সিরিয়াস কিছু হয়েছে।
মেহেরুনের কথায় জারা এক ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বলে,
জারা - আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
জারার কথা শুনে মেহেরুন অবাক হয়ে যায় আর খুশি হয়ে বলে,
মেহেরুন - হোয়াট! এটার জন্য তুই এতো টেনশড! বলদ এটা তো খুশির খবর। এইখানে এমন মনমরা থাকার কি আছে? বাই দা ওয়ে কনগ্রাচুলেশন৷
বলেই মেহেরুন জারাকে জরিয়ে ধরে। তখনই জারা বলে,
জারা - জানতে চাইবি না কার সাথে বিয়ে হচ্ছে আমার!
মেহেরুন জারাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,
মেহেরুন - তা তো অবশ্যই। তো কে সে ভাগ্যবান?
জারা - ফাওয়াদ।
ফাওয়াদের নাম শুনতেই মেহেরুন যেন এইবার পুরো থমকে যায়৷ আর বলে,
মেহেরুন - হোয়াট! কি বললি?
জারা - হ্যাঁ তুই ঠিকই শুনেছিস৷
মেহেরুন - কিন্তু এসব কবে কখন কি করে হলো?
তখন জারা সেদিন হসপিটালে হওয়া সব ঘটনা খুলে বলে। জারার কথা শুনে মেহেরুন বলে,
মেহেরুন - কিন্তু ফাওয়াদ কি এতে রাজি হয়েছে?
জারা - না হয়ে আর উপায় কি আছে? কথা দিয়ে ফেলেছে আন্টিকে।
মেহেরুন - তাহলে প্রবলেম কোথায় যেখানে ফাওয়াদ নিজেই রাজি৷ আর তাছাড়া তুইও তো ফাওয়াদকে,,,,,
মেহেরুন আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই জারা মেহেরুনের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে,
জারা - হ্যাঁ আমি ফাওয়াদকে ভালোবাসি৷ অনেক ভালোবাসি৷ আমি জানি এই মুহূর্তে আমার খুশি হওয়ার কথা কারন আমি যাকে ভালোবাসি তাকেই জীবন সাথী হিসাবে পাচ্ছি৷ কিন্তু আমি খুশি না। কারন ফাওয়াদ আমাকে না নাজাতকে ভালোবাসে৷ এখনও নাজাতকে ভুলতে পারে নি। আর যেখানে ফাওয়াদ আমাকে ভালোবাসে না সেখানে আমার একতরফা ভালোবাসা দিয়ে কি হবে? আমি আজও ভুলি নি যেদিন ফাওয়াদের সাথে আমার প্রথম দেখা হয়। আমি সেদিন এক রেস্টুরেন্টে ছিলাম। এক কেসের কাজ নিয়ে কিছুটা টেনশনে ছিলাম আমি। আসলে কেসটা খুবই সেনসেটিভ ছিলো অনেক৷ আর সেই কেসের জন্য আমাকে মেরে ফেলারও হুমকি এসেছিলো৷ তো সেদিন আমি আমার কেসের কিছু ক্লু খুজতে গিয়েও একটুর জন্য সেই ক্লু নিজেই হাত ছাড়া করে ফেলি। আর তাই সেদিন বাসায় ফেরার সময় এক রেস্টুরেন্টে বসে কফি খাচ্ছিলাম আর সেই কেস নিয়ে ভাবছিলাম৷ আমি বিল পে করে রেস্টুরেন্ট দিয়ে বের হতে নিবো আর ঠিক তখনই ফাওয়াদ আমাকে এক টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। আর তখনই একটা গুলি সেখান থেকে চলে যায়। ফাওয়াদ আমাকে সেদিন না বাচালে হয়তো গুলিটি আমার লেগেই যেতো৷ আর সেদিন প্রথম আমি ফাওয়াদকে দেখি৷ কেন যেন ওকে দেখে আমি আমার নজর সরাতে পারছিলাম না।
এতটুকু বলেই জারা অতীতে ডুব দেয়,
অতীত,,,,,,,,,
ফাওয়াদ জারাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,
ফাওয়াদ - আপনার কি মাথা খারাপ? দেখছিলেন না একজন আপনাকে নিশানা করে রেখেছিল শ্যূট করার জন্য। ভাগ্য ভালো যে আমি সময়মতো দেখে ফেলেছি নাহলে তো এতোক্ষনে গুলি লেগে যেতো আপনার।
এদিকে জারার যেন ফাওয়াদের কোন কথাই কানে যাচ্ছিলো না। আর ফাওয়াদ একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছিলো৷ তখনই হটাৎ করে জারা কাউকে কিছু না বলেই সেখান থেকে চলে আসে আর ফাওয়াদ অবাক হয়ে জারার দিকে তাকিয়ে বলে,
ফাওয়াদ - কি আজব মেয়েরে বাবা৷ এতো প্রশ্ন করলাম অথচ কিছুই বললো না!
বর্তমান,,,,,,
এতোটুকু ভেবেই জারা ঠোঁটের কোনে এক স্ফিত হাসি নিয়ে আবার বলে,
জারা - জানিস,,,,সেদিনের পর থেকে কেন যেন আমি ফাওয়াদের মুখ ভুলতে পারছিলাম না। সবসময় ফাওয়াদের ফেস ভাসতো আমার মুখের সামনে আর সেদিনের ঘটনা৷ কারন জীবন প্রথম কেউ আমাকে এইভাবে বাচালো৷ মানে আমি জারা নুর আব্বাস সিদ্দিকী। এই দেশের সাকসেসফুল ল্যয়ারদের মধ্যে একজন। যার সাথে মানুষ কথা বলতেও ভয় পায়। আর সেখানে ফাওয়াদ শুধু আমাকে সেদিন বাচায়ই নি বরং আমি কেয়ারলেস বলে অনেক ভাষন দিলো। একেরপর এক প্রশ্ন করতেই ছিলো। কিছুতো ভিন্ন ছিলো ওর মাঝে যা আমাকে বারবার ওর কথা মনে করিয়ে দিতো৷ তারপরেও আমি চেস্টা করতাম ওর কথা ভুলে থাকার। কারন তুই জানিস আমি এসব প্রেম ভালোবাসায় বিশ্বাস করি না। আর চাইছিলামও না যে ফাওয়াদের প্রতি আমার এমন কোন ফিলিংস আসুক। কিন্তু নিয়তির কি খেলা দেখ আমাদের আবার দেখা করিয়ে দিলো। আমি একদিন আমার অফিসে বসে ছিলাম আর সেখানে ফাওয়াদ আসে। ওর অফিসিয়াল কিছু লিগ্যাল কাজের জন্য।
এতোটুকু বলেই জারা আবার অতীতে ডুব দেয়,
অতীত,,,,,
জারা তার অফিসে বসে কাজ করছিলো আর তখনই জারার রুমের দরজায় কেউ নক করলে জারা বলে,
জারা - কাম ইন।
জারা ফাইল দেখতে দেখতে এই কথাটি বলে। এদিকে জারার রুমের দরজায় যে নক করে সে আর অন্য কেউ না ফাওয়াদ ছিলো। এদিকে জারা বলার পর ফাওয়াদ জারার রুমে ডুকতেই জারা তার ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে তার রুমে ফাওয়াদকে দেখেই অবাক হয়ে যায়। এদিকে ফাওয়াদও জারাকে দেখে অবাক হয়ে যায়। আর বলে,
ফাওয়াদ - আপনি! আপনি সেইদিনের সেই মেয়েটা না যাকে গুলি লাগা থেকে বাচিয়েছিলাম।
জারা - আপনি এইখানে কি করছেন?
তখনই ফাওয়াদের পিছন থেকে ফাওয়াদের অফিসের ম্যানেজার এসে বলে,
ম্যানেজার - স্যার উনিই সেই ল্যয়ার যার কথা আমি আপনাকে বলেছিলাম।
ফাওয়াদ - কিইইই উনি ল্যয়ার?
জারা - জ্বি আমি ল্যয়ার।
তখনি ফাওয়াদের অফিসের ম্যানেজার এগিয়ে এসে বলেন।
ম্যানেজার - আপনার ম্যানেজার নিশ্চয়ই আপনাকে আমাদের কথা বলেছেন হয়তো৷ আমরা আশরাফ ইন্ডাস্ট্রি থেকে এসেছি৷
জারা - ওহ হ্যাঁ হাসনাত সাহেব বলেছিলেন।
ম্যানেজার - ইনি হলেন আশরাফ ইন্ডাস্ট্রির মালিক ফাওয়াদ আশরাফ।
ফাওয়াদ হাত বারিয়ে জারার সাথে হ্যান্ডশেইক করে।
ম্যানেজার - আর ইনি হলেন অ্যাডভোকেট জারা নুর আব্বাস সিদ্দিকী। ইনি বর্তমানে আমাদের দেশের টপ ল্যয়ারদের মধ্যে একজন৷ ইনি আজ অবধি কোন কেস হারেন নি।
জারা - আপনি হয়তো আমার একটু বেশিই প্রশংসা করে ফেললেন। যাই হোক বসুন।
সবাই বসার পর জারা ফাওয়াদকে বলে,
জারা - আসলে সেদিন আমাকে বাচানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আসলে ওই সময় আমি অন্য একটা কেসের কাজে ছিলাম। ইভেন সেই কেসটা না লড়ার জন্য আমাকে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দাওয়া হয়েছিলো। কিন্তু আমি কেসটা লড়ে যাচ্ছিলাম বলে আমাকে সেদিন মারার চেস্টা করা হয়৷
ফাওয়াদ - ওহ মাই গড তাহলে তো অনেক ডেঞ্জারাস লোক ছিলো তারা।
জারা - হুম।
ফাওয়াদ - আসলে সেদিন আমি অফিসের কিছু মিটিংয়ে সেখানে গিয়েছিলাম আর মিটিং শেষ করে বের হতে নিবো তখনই দেখি যে এক লোক আপনাকে ফলো করছে। প্রথমে এতোটাও আমলে নেই নি কিন্তু পরক্ষনেই দেখি যে লোকটা একটা গান বের করে আপনাকে তাক করছিলো আর তাই তখনই আপনাকে বাচাই।
জারা - থ্যাংকস আ লট সেদিন আমাকে বাচানোর জন্য।
বর্তমান,,,,,
জারা আবার বর্তমানে ফিরে আসে আর বলে,
জারা - সেদিনের পর থেকে ফাওয়াদের সাথে আমি আরো বেশি ক্লোজ হয়ে যাই। ফাওয়াদের অফিসিয়াল কেসটি আমি লড়ি আর জিতে যাওয়ার পর ফাওয়াদ আমাকে ওর অফিসের চিফ লিগাল অ্যাডভাইসর বানিয়ে দেয়। এরপর থেকেই একসাথেই কাজ করে আসছি। আর এই একসাথে কাজ করার মধ্যেই কবে যে ফাওয়াদকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম তা আমি নিজেও জানি না। ধীরে ধীরে আপনি থেকে তুমি বলা শুরি করি আমরা একে অপরকে। কিন্তু একদিন হটাৎ করেই নাজাত চলে আসে আর সব শেষ হয়ে যায়। ফাওয়াদের সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপ অনেকটা স্ট্রং হয়ে যাওয়ার পর ফাওয়াদ আমাকে নাজাতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। আর বলে যে নাজাত ওর গার্লফ্রেন্ড। সেদিন ট্রাস্ট মি অনেক হার্ট হয়েছিলাম আমি। কিন্তু ফাওয়াদকে তা বলতে পারি নি। কারন ফাওয়াদ আমাকে শুধু ওর ফ্রেন্ড ভাবতো৷ আমি জারা নুর আব্বাস সিদ্দিকী লাইফে কাউকে ভালোবাসি নি আগে। আর যাকে বাসলাম সে আমাকে না অন্যকাউকে ভালোবাসে। যখন প্রথম জানতে পারলাম যে নাজাত ফাওয়াদের গার্লফ্রেন্ড। তখন থেকেই আমি নাজাতকে দেখতে পারতাম না। কেমন যেন জেলাস ফিল হতো৷ কিন্তু পরে নিজেকে ধীরে ধীরে বুঝাতে লাগলাম এমনকি নিজেকে সেই হিসাবে গুছিয়েও নিয়েছিলাম যে ফাওয়াদ আমাকে না নাজাতকে ভালোবাসে। আর দুনিয়াতে সবকিছু লড়াই করে জিতে নাওয়া গেলেও ভালোবাসা কখনোই না লড়াই করে আর না জোর করে পাওয়া সম্ভব। আর তাই পরে আমি ধীরে ধীরে নিজেকে শক্ত করে নিয়েছি। এমনকি ফাওয়াদের জন্য আমি ফাওয়াদের আম্মু আব্বুকে নাজাতের জন্য মানিয়েছিলাম। যেখানে তুই জানিসই যে নাজাতের সাথে আমার আগে কি হয়েছিলো। বিনা কারনে ইন্সাল্ট করেছিলো ও আমাকে। ফাওয়াদের মাধ্যমে নাজাতের কেস লড়ার পরেই ফাওয়াদ আমাকে নাজাত আর ওর সম্পর্কের কথা বলে যা শুনে স্বাভাবিকই আমি শুধু অবাকই না কষ্টও পেয়েছিলাম৷ প্রথমে আমি নাজাত আর ফাওয়াদের সম্পর্ককে নরমাল ফ্রেন্ডশিপ ভাবলেও পরে ফাওয়াদের বলার পর জানতে পারি ওদের রিলেশন সম্পর্কে। আর তখন থেকেই আমি এক তরফাভাবেই ফাওয়াদকে ভালোবেসে আসছি। যা আজ অবধি আমি ফাওয়াদকে বুঝতে দেই নি। যার জন্য এতোদিন আমি বিয়ের জন্য রাজিও ছিলাম না। কিন্তু আজ যখন ফাওয়াদ আমার লাইফ পার্টনার হবে সেখানে আমি আজ চেয়েও খুশি হতে পারছি না। যেখানে আমার খুশি হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আমি পারছি না খুশি হতে।
তখনই মেহেরুন জারার কাছে এসে জারার কাধে হাত রেখে বলে,
মেহেরুন - কিন্তু কেন?
জারা - কারন এটা বিয়ে না একটা সমঝতা।
মেহেরুন - হোয়াট!
এতোক্ষন এসব বলার মাঝে জারার চোখে পানি আসে৷ আর জারা সেই পানি মুছেই মেহেরুনের দিকে তাকিয়ে বলে,
জারা - হ্যাঁ ঠিকই শুনেছিস। এটা শুধুমাত্র একটা সমঝতা৷ যেটা শুধুমাত্র ফাওয়াদের আম্মুর কথা রাখতে আমাদের বিয়ে হচ্ছে। এই বিয়েতে না থাকবে ভালোবাসা আর না থাকবে কোন স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক।
মেহেরুন - হোয়াট! কি বলছিস এসব?
জারা - হ্যাঁ ঠিকই বলছি আমি।
এরপর জারা অফিসের ফাওয়াদের সাথে হওয়া সবগুলো কথা মেহেরুনকে বলে। কথাগুলো মেহেরুনকে বলার পর জারা বলে,
জারা - এখন তুইই বল যেখানে আমি জানি ফাওয়াদ নাজাতকে ভুলে নি এখনও ভালোবাসে সেখানে আমার একতরফা ভালোবাসা প্রতিনিয়ত আমাকে কষ্ট দিবে শুধুমাত্র এই কারনেই যে ফাওয়াদকে পেয়েও আমি ফাওয়াদকে পাই নি। তারপরেও আমি বলবো যে ফাওয়াদের ভালোবাসা আমি পাই বা না পাই সারাজীবন ওর ছায়া ওর সাথে চলে যাবো।
এতোটুকু বলেই জারা তার চোখের পানি মুছে মুখে কিছুটা হাসি আনে আর এদিকে মেহেরুন জারাকে দেখে বলে,
মেহেরুন - তোর কথা শুনে আমি জানি না আমার কি বলা উচিত৷ শুধু এতোটুকুই বলবো যে তুই যাই করিস না কেন আমি তোর সাথেই আছি৷ যেমন আগে থেকেই ছিলাম।
মেহেরুনের কথা শুনে জারা চুপচাপ থাকে। এদিকে জারাকে চুপ থাকতে দেখে মেহেরুন আবার বলে,
মেহেরুন - জানিস তোর মতো হয়তো কেউই কাউকে ভালোবাসতে পারবে না।
মেহেরুনের কথায় জারা ঠোঁটের কোনে হাল্কা হাসি এনে বলে,
জারা - হ্যাঁ কথাটা তুই ঠিক বলেছিস৷ আমার মতো কেউই কাউকে ভালোবাসতে পারবে না কারন আমার ভালোবাসাটা নেশার মতো। এমন নেশা যা কখনো ছাড়া যায় না।
জারার কথা শুনে মেহেরুন হাল্কা হেসে বলে,
মেহেরুন - আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করবো যেন তুই তোর লাইফে তোর ভাগের সুখটুকু পাস৷
মেহেরুনের এই কথাটি শুনে জারা মেহেরুনকে জরিয়ে ধরে৷
চলবে.......