#২৪

455 16 2
                                    

#আলোছায়া
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_২৪

দেরি করে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস নেই মেসবাহর। রোজ ভোরে উঠে ফজরের নামাজ সেরে সে বেরিয়ে পড়ে হাটতে। সে হোক কনকনে ঠান্ডায় বা কাঠফাটা গরমে। সেখান থেকে ফিরেই ঢুকে পড়ে গোসলে। কোনোকোনো দিন করিমুন্নেসা এইসময়ের মাঝে চলে এলে তার জন্য চা তৈরি করে রাখে। আর না এলে সে নিজেই ঝটপট করে নেয় চা। তবে টানা দু'দিনের অনিয়মের পর শরীরটা ম্যাজম্যাজ করায় নামাজ পড়েই শুয়ে পড়লো মেসবাহ। ঘড়ির কাটায় সকাল সাতটার এলার্ম দিয়ে রাখলেও গভীর ঘুমে তলিয়ে যাওয়ায় করিমুন্নেসার উপস্থিতিতে একাধারে কলিংবেলের শব্দে সাড়ে আটের দিকে ঘুম ভাঙলো তার। তাড়াহুড়ো করে উঠে সদর দরজা খুলে উল্লাসীকে ডেকে সে ঢুকে গেল গোসলে।

ভেতর থেকে শাউয়ারের শব্দ শুনে দরজায় টোকা দিল উল্লাসী। গলায় স্বর খানিকটা উঁচু করে বললো,
"আপনার দেরি হয়ে যাচ্ছে?"
"হু.."
"তাহলে কি মৈত্রীকে আমি স্কুলে দিয়ে আসবো?"
"না.. আমিই নামিয়ে দিয়ে যাবো। ও উঠেছে? বাইরের ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দাও।"
মুখ খানিকটা ভেঁচকে উল্লাসী বললো,
"বাইরের ওয়াশরুমে পাঠালে তো হবে না! ব্রাশ তো এটায়।"
"দাঁড়াও দিচ্ছি.."
দরজা হালকা খুলে মৈত্রীর ব্রাশ উল্লাসীর হাতে ধরিয়ে দিতেই মেসবাহর হাত চেপে ধরলো উল্লাসী। তার ভেজা আঙ্গুলের মাঝে আঙ্গুল গুঁজে দিয়ে বললো,
"আপনি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন পাঁচটা আঙ্গুল.. বিনিময়ে আমি আপনাকে আঁকড়ে ধরলাম দশটা আঙ্গুল দিয়ে। এবার বলুন কার এফোর্ট বেশি?"
"অবশ্যই আমার.. আমি আগে বাড়িয়ে দিয়েছি না?"
নাক কুঁচকে কাঁধ চড়াও করলো উল্লাসী।
"হলো না.. এফোর্ট বেশি দিয়েছে এই উল্লাসী। ওপাশ থেকে এফোর্ট যদি বেশি দিত তবে উল্লাসী এখন ভেতরে থাকতো!"
"তাই.. না?"
ভেতর থেকে মেসবাহ হেঁচকা টান দিতেই দ্রুত তার হাত ছেড়ে দিল উল্লাসী। খলখল করে হাসতে হাসতে কয়েক কদম পিছিয়ে বললো,
"থাক হয়েছে! আর এফোর্ট দিতে হবে না। যথেষ্ট হয়েছে।"
"যথেষ্ট হয়েছে কিনা কাল দেখাবো.. আজ দেরি হয়ে পড়েছে বলে বোকারাম ভেবে হেলাফেলা করো না। কাল ঘুমন্ত অবস্থায় তোমাকে বিছানা থেকে টেনে যদি ওয়াশরুমে না নিয়ে আসি আমার নামও মেসবাহ নয়!"
আক্ষেপের সাথে কথাটি বলেই ভেতর থেকে দরজা আটকে দিল মেসবাহ।
উল্লাসী হাসির তীব্রতা আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে বললো,
"হারু পার্টি.. হেরে ক্ষেপে গিয়ে কাঁদবেন না প্লিজ।"
"কাঁদছে কে শুনি? তুমি মৈত্রীকে ডেকে তোলো দ্রুত।"
"যাচ্ছি.."
হাসির ঢেউ মুখে নিয়েই মৈত্রীকে ডেকে বাইরের ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে হাতমুখ ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে আনলো উল্লাসী। তারপর তার স্কুলের ইউনিফর্ম আনতে ছুটলো ব্যালকনির দিকে। গতকাল সন্ধ্যায় সে বাড়ি ফিরলেও মনমেজাজ অসম্ভব খারাপ থাকায় সংসারের প্রায় কাজই সেভাবেই পড়ে রয়েছে। শুধু কোনোমতে রাতে খাবার জন্য ভাতটা রাঁধলেও আর করা হয়নি কোনো কাজ। ভেবে মনটা আবারও খারাপ হয়ে আসতেই ঘরের ভেতর থেকে শুনতে পেল মেসবাহর ডাক।

আলোছায়া Hikayelerin yaşadığı yer. Şimdi keşfedin