#৫

602 16 0
                                    

#আলোছায়া
#নাইমা_জাহান_রিতু
#পর্ব_৫

মৌমি বদলে গেছে। এখন আর আগের মতো দাপিয়ে বেড়ায় না সে। ঝুড়ি খুলে বসেনা একগাদা আজগুবি প্রশ্নের। এখন আর তীব্র রোদে বিড়ালের পিছুপিছু সে ছোটে না। বয়স বেড়েছে তার। চলাফেরায় এসেছে গাম্ভীর্য। তার দিকে একদৃষ্টিতে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর চোখ সরিয়ে নিল উল্লাসী। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ির কুচি ঠিক করে আঁচলে সেফটিপিন লাগানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে সে এগিয়ে গেল জানালার ধারে বসে উদাসীন দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকা মৌমির কাছে।
"পিনটা একটু লাগিয়ে দাও মা।"
দৃষ্টিভঙ্গ হতেই খানিকটা কেঁপে উঠলো মৌমি। নজর ঘুরিয়ে উল্লাসীর দিকে চেয়ে ম্লান হাসলো সে।
"একটু ধীরে.. হ্যাঁ ব্লাউজের ভেতর দিয়ে লাগাবে।"
সেফটিপিন লাগিয়ে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো মৌমি। আবারও জানালার ধারে গা লাগিয়ে বসে শুন্য দৃষ্টিতে তাকালো পিচঢালা পথের দিকে।
"মন খারাপ?"
প্রশ্ন করলো উল্লাসী। তবে মৌমির দিক থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে খানিকটা হতাশ হলো। মেয়েটির মাঝের চাঞ্চল্যতা কমলেও এতটা গম্ভীর তো ছিল না সে। তবে কি খারাপ কিছু ঘটেছে তার সঙ্গে? মনে একগাদা প্রশ্ন বাসা বাঁধলেও ড্রয়িংরুম থেকে ডাক পড়ায় উল্লাসী ছুটলো সেদিকে। গ্রাম থেকে তার শশুর এবং ভাসুর এসেছেন। সঙ্গে এসেছে মৌমিও। তবে শাশুড়ীর কোমড়ের ব্যথা এবং বড় জা সাত মাসের গর্ভবতী হওয়ায় কোনো মহিলা সঙ্গে না আসায় বিয়ের সকল দায়দায়িত্ব এসে পড়েছে তার ঘাড়ে। অবশ্য এনিয়ে সামান্যও বিব্রত নয় সে। বরং কোমরে আঁচল বেঁধে একহাতে সামাল দিচ্ছে সবটা।

পুষ্পদের বাড়িটা কিছুটা ব্যাতিক্রম ধরনের। বেশ কয়েক কোঠা জায়গাজুড়ে নিয়ে করা বড়সড় এই বাড়িটি দোতলা। ডুপ্লেক্স বাড়িটির ড্রয়িংরুমের শেষ মাথায় বিশাল একটি ছাঁদ। যার দরজা খুললেই মনে হয় গ্রামের বাড়ির মতো পাকা একটি উঠান। যেখানে ২০/৩০ টি স্টীলের হাফ ড্রামে লাগানো রয়েছে নানান ফুলগাছ। আর বড়বড় কিছু ড্রামে লাগানো আম, কাঠাল, লিচুসহ কয়েক জাতের ফল গাছ। মনোরম সেই পরিবেশের বড়সড় একটি টেবিল পেতে টেবিল ফ্যান সেট করে দুপুরের খাবারের ঝামেলা সেখানে চুকিয়ে বিকেল গড়াতেই আংটিবদলের কাজ সেরে নিল দুই পরিবার। সবশেষে বিকেলের চায়ের আড্ডায় সকলে মেতে উঠতেই পুষ্পর ভাবি সকলের সামনে প্রস্তাব দিল দুজনকে নিজেদের মতো করে খানিকটা সময় কাটাতে দেয়ার। সে প্রস্তাবে কারো কোনো আপত্তি না থাকায় তাদের পাঠানো হলো পুষ্পর ঘরে।

আলোছায়া Where stories live. Discover now