একদিন শুক্রবার : ০৪

10 0 0
                                    

বুলেট রেলের গতিতে গাড়ি ছুটছে অবিরামপাড়া মহাসড়কে। রাস্তা পারাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে টিটুকে। মহাসড়ক পেরিয়ে পাশের গলিটি ধরে একটু হেটে গেলেই আল্টিমেটাম নামক একটি আধুনিক ফাস্টফুড রেস্তোরাঁ। সেখানেই যেতে হবে টিটুকে। ইরা অপেক্ষা করছে।

বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে টিটু। নেই কোনো ট্রাফিক সিগনাল, নেই কোনো জেব্রা ক্রসিং, নেই একটি ফুট ওভার ব্রিজও; মানুষজন নিরাপদে রাস্তা পারাবে কী করে তাহলে? মহাসড়কের এখানটা দিয়েই সকলে রাস্তা পার হয়। ওপাশেই গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনা। সুস্বাদু খাবার হোটেল, শপিং মল, কুরিয়ার অফিস, বাস কাউন্টার, সিনেমা হল, পাসপোর্ট অফিস, ব্যাংক এবং নুরুদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ। শহরের বর্তমান মন্ত্রী মহোদয়ের নাম, জনাব মোহাম্মদ নুর উদ্দিন। কত সুন্দর নাম। কিন্তু মন্ত্রী মহোদয় নিজেই নিজের নামকে বিকৃত করে ফেলেছেন। এই নিয়ে পরপর দুবার এই এলাকার মন্ত্রী মনোনীত হয়েছেন তিনি। দ্বিতীয়দফা মন্ত্রী হতেই জমি কিনে একটি স্কুল এন্ড কলেজ চালু করে দিলেন। নাম দিলেন নিজের নামেই, নুরুদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ। এটা নাম হলো কোনো? দেখলেই মুখে থুথু জমা হয়ে যায় টিটুর। যৌথ একটি স্কুল এবং কলেজের নামের বানানই ঠিক নেই। সেখানে ছেলেমেয়েদের কী পড়ানো হবে? কচু আলুর চেয়ে সুস্বাদু, তা? তাই ভেবে আর এই কলেজে পড়েনি টিটু। মাধ্যমিক শেষে রাজা শিকদার সাহেব টিটুকে এই সরকার পক্ষের লোকের বেসরকারি স্কুল এন্ড কলেজটির কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। টিটু দুমাস পড়ে পালিয়েছে। ভর্তি হয়েছে অবিরামপাড়া ডিগ্রি কলেজে।

রাস্তা পারাপারের জন্য লোকজনের বেশ একটা ভীড় সমবেত হয়েছে। এবার সবাই একসঙ্গে রাস্তা পেরোবে। সাবধানে দেখে শুনে সকলে রাস্তায় নামবে। তারপরই হেটে চলে যাবে ওপাশে। সমস্ত যানবাহন সব তখন ধীর গতিতে এগোবে, নাহয় থেমে যাবে। এটাই এখানকার রাস্তা পারাপারের একমাত্র এবং নিরাপদ নিয়ম। টিটু ভীড়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাস্তা পারালো। রাস্তা পারিয়ে ওপাশে গিয়ে এপাশে তাকালো টিটু। এপাশে এখন রাস্তা পারাপারের কোনো প্রার্থী ভীড় নেই। সে চাইলেও এখন আর ওপাশে যেতে পারবে না। একটু বাদে রাস্তা পারালেই বোধহয় ভালো হতো। ওপাশে একটি সাদা কুকুর দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। টিটু দোটানায় আছে। রাস্তা পারাবে? না পারাবে না? তা নিয়ে নয়। এটিই সকালের সে কুকুরটি কিনা? তা নিয়ে। কুকুরটি পুরোপুরি সাদারঙা হলেও শরীরে ময়লা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই এক্ষুনি সামনের মোড়ের সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিনে গড়াগড়ি করে এসেছে। টিটুর ফোন পকেটে কেঁপে উঠলো। টিটু আলগোছে পকেট থেকে ফোন বের করার চেষ্টা করলো। পারলো না, ব্যর্থ হলো। ফোনে লাগানো তিনটে রাবারের একটি খুলে রাস্তায় পড়ে গেলো এবং আশ্চর্যজনকভাবে রাবারটি হারিয়েও গেলো। দশ মিনিটও হয়নি সে মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার থেকে ফোনটির ডিসপ্লে এবং টাচ লাগিয়ে বেরিয়েছে। এরইমধ্যে ফোনের একটি রাবার খুলে পড়ে গেলো। সার্ভিস সেন্টার থেকে কমপক্ষে তিনঘণ্টা রাবার লাগিয়ে ফোন ব্যাবহারের জন্য বলা হয়েছিলো।

টিটু বিশদ Where stories live. Discover now