নীল পাহাড়

3 0 0
                                    

বইয়ের নামঃ নীল পাহাড়
লেখকঃওবায়েদ হক
রেটিংঃ 🍁🍁🍁🍁🍁

"বয়স্ক লোক দেখলেই তোমার বাবার মতো মনে হয়। আমাকে কি তোমার বাবার মতো মনে হয়?
মানিক বলল—
না স্যার, অনাথদের বাবা হয় মৃত,দরিদ্র, অসহায় অথবা অপরাধী।  আপনি তার কোনটা না। " —নীল পাহাড়, ওবায়েদ হক

সারসংক্ষেপঃ
———————
শহরের ব্যস্ততম সময় গুলোতে বিভিন্ন সময় অবচেতন মন দূরের কোনো জায়গায় চলে যেতে চায়। দূরের সে পাহাড় -পর্বত, নদনদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে কার না মন চায়। তাই সময় পেলে শহরের সব কিছু এক পাশে রেখে দলবল নিয়ে চলে যাই ঐ দূরের পাহাড়ের সৌন্দর্য কে ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু কয়জন জানি সেখানকার পরিবেশ, ইতিহাস,  সংস্কৃতির কথা?  সাধারণত স্কুলের সাধারণ জ্ঞান বই য়ে হালকা পাতলা পাহাড়িদের সংস্কৃতি সম্পর্কে লিখা হয়। কিন্তু তাদের ইতিহাস সম্পর্কে কয়জন ই বা গভীর ভাবে জানতে চায়। বর্তমানে হাল ফ্যাশনের লেখার যুগে লেখক ঐ ইতিহাসের এক টুকরো গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। তা হলো নীল পাহাড়। 

উপন্যাসটি আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ের। যখন প্রায়ই বাঙালি আর পাহাড়িদের মধ্যে যুদ্ধ চলত। কখন ও রাতের আধারে, তো কখন ও দিনের আলো তে।  তখন শহরের অবস্থা ভালো হলেও পাহাড়ের অবস্থা ছিল করুণ।  প্রায় প্রতিদিন ই সেখানে কিছু না কিছু হতো।  সেখানে সাপ,  শূকর, জংলী জানোয়ারের হামলার ভয় থেকে বেশি ভয় ছিল উগ্রবাদী সংগঠন গুলোর যারা পাহাড়ের স্বাধীনতা আনার নাম করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ যেমন খুন,ধর্ষণ করেই যেত।আর আছে নীল পাহাড়,যে পাহাড় দূর থেকে দেখতেও আকর্ষণীয় ঠিকই, কিন্তু আকর্ষণের পিছে লুকিয়ে আছে অসুন্দর অনেক কিছু। অন্যদিকে শহরের অনাথ আশ্রমে বেড়ে ওঠা একজন সৎ,নিষ্ঠাবান ডাক্তার মানিক মিত্র।  তার জীবনে অনেক কিছু থেকেও কিছুই নেই।  সে নিজেকে খোঁজায় ব্যস্ত, কিন্তু কখন নিজের কাজের সাথে, সততার সমঝোতা করতে নারাজ। যার বদৌলতে তিনি চোখে পড়ে সরকারি বড় কর্মকর্তার। নিজের সততার আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী গহওয়ার জন্য তাকে বদলি করা হয় সে ভয়ংকর বান্দরবান জেলার বুলিপাড়া গ্রামে।  হ্যাঁ সে ভয়ংকর পাহাড়ে।  তখন কার সময়ে মৃত্যুদন্ড থেকে বড় শাস্তি ছিল পাহাড়ে বদলি হওয়া। মানিক মিত্রও শাস্তি সরূপ পাহাড়ে বদলি হলো। কিন্তু কথা হলো পাহাড় কে তো সবাই আপন করতে চায়, কিন্তু কয়জন পাহাড়ের আপন হতে পারে? কয়জনকে ই বা পাহাড় সাদরে গ্রহণ করতে পারে? মানিক কি পারবে এই পাহাড়কে আপন করে নিতে? সেখানে নিজের জ্ঞান আর সততার বীজ বুনতে পারবে?  নাকি বাকি শহরীদের মতো ছিটকে যাবে?

পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ
————————
জীবনে অনেক গুলো ইচ্ছার মধ্যে একটা ইচ্ছা হলো পাহাড় দেখা।  যা এখন পর্যন্ত হয় নি। নিজের দেশ টা আমার জন্য বিদেশের সমান, কারণ এখানে ভ্রমণ করা এখন ও হয়ে উঠে নি। পাহাড় কে সিনেমা, বই আর ছবি আঁকার সময় দেখেছি।  না পাহাড় সম্পর্কে বিস্তর ধারণা আছে আর না পাহাড়ীদের ইতিহাস জানা আছে।  দূর থেকে যে জীবনের গল্প শুনতে ভালো লাগে, যে জীবনকে একদিনের জন্য হলেও নিজের বানাতে ইচ্ছা করে।  ঐ জীবন টা সত্যিকারি কেমন তা লেখক তুলে ধরেছেন অনেক সুন্দর ভাবে। আমাদের চারপাশে অনেক মানুষ আছে যারা আমাদের আপন সেজে আমাদের ই ক্ষতি করে বেড়ায়।  লেকখ লিখার মাধ্যমে তা ফুটিয়েছেন।  আর পাহড়িদের সহজ, সরল জীবন যাপন তো আছে ই।  ও হ্যাঁ।  মানিক মিত্র।  তার অনাথ জীবনের কথার মাধ্যমে লেখক খুব সুন্দর ভাবে মা বাবা গুরুত্ব  ফুটিয়ে উঠেছেন। আর সেই ন্যায় নিষ্ঠাবান, সৎ মানুষ  এর সাথে পরিচয় করিয়েছেন। যা বর্তমান সমাজে বিরল। অনেক বেশি ভালো লাগল। এই ধাচের উপন্যাস কখন ও পড়া হয় নি।  এই প্রথম।

ভালো লাগা লাইনঃ
★ডাক্তার মানেই নিষ্ঠুর। আমরা মৃত্যু দেখে বিচলিত হই না। তাই আমরা পাষাণ। নিষ্ঠুর শব্দটাই আপেক্ষিক।
★তুমি বলেছিলে,মানুষের মৃত্যুতে ডাক্তাররা বিচলিত হয় না। কথাটা ঠিক নয়। আমরা বিচলিত হই কিন্তু প্রকাশ করতে পারি না। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখের খবর আমরাই দেই, মানুষের জন্মের সময়।  আবার সবচেয়ে কষ্টের কথা আমাদেরই শুনাতে হয়।  মানুষের মৃত্যুর খবর।
★মেয়ে বলে,
সবাই নিজেকে সাজায়, আমি মনকে সাজাই।
★মা এসেছিল একদিন কালো শ্লেটে। ম এর সাথে "আ" কার দিয়ে মা হয়েছিল।সাদা শব্দটি জ্বলজ্বল করছিল।
★ভোরের আলো আর জোৎস্নার আলোর মধ্যে মিল আছে। দুটোই স্নিগ্ধ কোমল।কিন্তু ভোরবেলা যত পাখির ডাক শোনা যায়, জোছনায় ততটা শোনা যায় না।
★কেউ মানিককে প্রয়োজনে স্মরণ করলে তার ভালো লাগে। কারণ প্রয়োজনে প্রিয়জনের কথাই মানুষ মনে করে।
★পাহাড়ের নিজস্ব ভাষা আছে।  নিঃশব্দে ডাকতে পারে। সবাই সে ডাক শুনতে পায় না।
★চাঁদ ফিরে আসে কিন্তু কিছু জোৎস্না কখনই ফিরে আসে না।

happy reading ❤️

Book reviews 📚📚Where stories live. Discover now