সুহাসিনী

Od LifeWonderer

212 24 4

ভাইয়ের খুনের প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে থাকা এক বোনের গল্প... Více

পর্ব ১
পর্ব ৩
পর্ব ৪
পর্ব ৫
পর্ব ৬
পর্ব ৭
পর্ব ৮
পর্ব ৯
পর্ব ১০
পর্ব ১১
পর্ব ১২
পর্ব ১৩
পর্ব ১৪
পর্ব ১৫

পর্ব ২

27 4 2
Od LifeWonderer

প্রায় আরো এক ঘণ্টার মত লেগে গেল বাড়ি পৌঁছাতে। রাস্তার জ্যাম তো ছিল‌ই সেই সাথে মা কিসব জিনিস কিনতে পাঠিয়েছিল, অদ্ভূত অদ্ভূত সব, ওইগুলো পেতে আরো সময় লেগে যায়। তাড়াহুড়ো করে বাকি সব গাড়িতে রাখার কিছুক্ষণ পর‌ই রাস্তা খালি হলো আর শানুকে নিয়ে ঝটপট বাড়ির দিকে এগোলাম। আমার ভাবতেই অবাক লাগছে আজকে এত বছর পরে প্রথম এই শহরে এসেই আমার প্রথম অভিজ্ঞতা এরকম হয়েছে। পৌঁছাতে লাগলো এতটা সময় তার উপরে বাসার জন্য বাজার করে নিয়ে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে যেন আমি কত যুগ ধরে এখানেই থাকি আর আজকে বাড়ির প্রয়োজনে বের হয়ে আটকে গিয়েছিলাম। জীবনটা কি অদ্ভূত!

ঢাকা শহরে ছোটাখাটো দোতলা বাড়ি আমাদের একটা। পুরাতন কোন মহল্লা বা ঐতিহাসিক কোন এলাকায় না বাড়িটা। গাজীপুরের ভেতরেই আমাদের ছোট্ট সুখের সংসার। অনেক অনেক বাড়ির মাঝে আমাদের বাড়িও একটি। বাইরের দিকে হালকা গোলাপী রঙ করা বাড়িটা আর চারপাশে গাছ-গাছালী দিয়ে ভরা। সবুজের মাঝে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে স্বপ্নের এই মঞ্জিল। কয়েক গজ ছেড়ে ছেড়ে পাশের দালানগুলো এবং দূর থেকে দেখলে মনে হবে কোন একটা বড়লোকদের সোসাইটি এটা। প্রতিটা বাড়ির‌ই নিজস্ব খোলামেলা জায়গা আছে চারপাশে, গাছপালা আর দূরে কোথাও ছোট একটা পুকুরের মত কিছু দেখা যাচ্ছে। এসব জায়গা আগে পুকুর‌ই ছিল আমার জানা মতে। হঠাৎ করেই এই জায়গাটা খুব কম দামে বিক্রি হ‌ওয়া শুরু করলো আর বাবাও সুযোগ বুঝে বেশ বড় একটা জায়গা কিনে নিল। তবে কখন‌ও আসা হয়নি আমার। অবাক হলেও সত্য যে আজকেই প্রথম আমি আমার বাড়িতে এসেছি আর এই প্রথম সবার মুখে শোনা স্বপ্নের মত করে বানানো বাড়িটা নিজের চোখে দেখছি। বাবার কত স্বপ্ন ছিল এমন একটা বাড়ি করার আর ভাইয়া তো সবচেয়ে বেশি উত্তেজিত ছিল যখন শুনেছে ঢাকায় বাবা বাড়ির কাজ ধরেছে। সে এক বড় গল্প!

গাড়ি থেকে নেমে কিছুক্ষণ শুধু দাঁড়িয়ে থাকলাম। কোন কথা বলা বা শোনার মত পরিস্থিতি ছিল না। মুগ্ধ হয়ে শুধু আমার সামনে থাকা ভবনটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। দুই মঞ্জিলের বাড়ি, ত্রীভূজ আকারে। সামনে কিছু বারান্দা ঝুলে আছে আর পাশে ছোট একটা ছাদ যেখানে কিছু মানুষ হয়তো কিছু একটাতে বসে আছে। থেকে থেকে কিছু জায়গায় অন্যান্য রং দিয়ে বিভিন্ন আকৃতি আঁকা হয়েছে। সত্যিই, বাবার আর ভাইয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো কিন্তু ভাইয়া...
"আপা, চলেন। ভেতরে চলেন।"
শানুর কথায় ঘোর থেকে বের হলাম আর পেছনে তাকালাম। ছেলেটা কি বুঝলো জানি না, তবে গাড়ি থেকে সব জিনিস বের করতে শুরু করলো। আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রথমে থেমে যায় এরপর কিছু না বললে নিজের কাজ চালিয়ে যায়। বেচারাকে আর কিছু বললাম না। আমার গাড়ি খেয়ে ফেলবে না সে নিশ্চয়। এরপর‌ও আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমার কাছে এসে বললো,
"আপা, লিপিকা আপনের গাড়ি গ্যারেজে নিয়ে যাইবো। আপনি এখন নিশ্চিন্তে ভেতরে চলেন আমার সাথে। সবাই আপনার জন্য কত অপেক্ষা করতাছে!"
শানু তার মনের খুশিতে কথা বলেই চললো। কিছু কানে ঢুকলো আর কিছু ঢুকলো না। আমার ভাইয়ের এই আরেকটা স্মৃতি যা দেখে পুরনো অনেক কথা মনে পরছে আজকে। বাড়ি বানানোর সময় পুরোটা ক্ষণ ভাইয়া ঢাকায় ছিল। আমার সাথে তার শেষ দেখাটাও হতে পারে নি তবে আমি প্রতি মুহূর্তের খবর জানতাম। আজকে এই আঙ্গিনায় এসে, এই বাড়ির দুয়ারে পৌঁছে কেমন যেন লাগছে। মনে হচ্ছে ওইতো ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে আমাকে কোলে তুলার জন্য, এখন‌ই বুঝি বলবে "বুড়ি তুই কত্ত বড় হয়েছিস রে! আর এত মোটা হলি কবে থেকে?", আর এরপর আমি তার সব কথা অন্য কান দিয়ে বের করে জোরে দৌড়ে গিয়ে ভাইয়ার কোলে উঠে পরতাম। আজ‌ও বুঝি ভাইয়া সেভাবেই আমার জন্য অপেক্ষা করছিল!

দূর থেকে যা অনুমান করেছিলাম তাই ঠিক হলো। বাড়ির সামনে বড় উঠোন আর পাশে একটা দোলনা রাখা। ছাদে কিছু মানুষ আমাদের আসতে দেখে দ্রুত উঠে চলে গেল। চিনতে পারলাম না কাউকেই কিন্তু দেখে মনে হলো আমাদের আসার অপেক্ষা করছিল। হয়তো বা আমরা আসছি কিনা সেটাও নজর রাখছিল। হলে অনেক কিছুই হতে পারে। বাড়ির আরো কাছে আসতে সব চিত্রগুলো পরিষ্কার হলো। বাচ্চাদের জন্য কিছু আঁকিবুকি, যা হয়তো তাদের মায়ের কাজে দেয় তাদের খাওয়ানো ঘুম পারানোর জন্য। একদম মুখে চলে আসতেই সামনাসামনি হলাম বাড়ির মূল দুয়ারে। কাঠের বড় দরজা, রাজকীয় সময়ের মত। দরজা খোলাই ছিল কিন্তু কোন মানুষ ছিল না। কি আশ্চর্য! মা তখন আমার জল্দি আসার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল অথচ এখন কেউই নেই! কথায় তো মনে হয়েছিল যে পুরো মহল্লা অপেক্ষা করবে আমার জন্য এখানে। যাই হোক, অত ঢঙ আমার পছন্দ নয়। করে নি ভালোই হয়েছে।

শানু কোথায় যেন চলে গেল, আমি একা বাড়ির ভেতর ঢুকলাম কিন্তু চারপাশে দেখার আগেই আমার সামনে একটা কিছু এসে পরলো। আমি তা উঠিয়ে খুলে দেখি একটা কাগজ ছোট পাথরে মোড়ানো আর কাগজে লেখা 'উপরে'। আমি উপরে তাকিয়ে অবশ্য কিছুই দেখলাম না কিন্তু এক সিড়ি উপরে উঠে গেলাম। সিড়ির মুখে দাঁড়িয়ে অপরদিকে তাকাতেই আমার শরীরে শিহরণ বয়ে গেল। ভাইয়ার ঘর, বড় বড় অক্ষরে লেখা "নূরহাম"। আমি ঠাই দাঁড়িয়ে গেলাম আর পা আগাতে যাবো এমন সময় উপরে আবার কিছুর উপস্থিতি টের পেলাম। ভাইয়ার ঘরে পরেও যেতে পারবো ভেবে উপরের দিকে আবার হাঁটা দিলাম। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। পুরো বাড়ি জনশূন্য হয়ে আছে কেন হুট করে? সবাই যাবে কোথায়? শানুটাকেও কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।

আরেক সিড়ি পার করে উপরে উঠতেই আসে ছাদ। দোতলায় অপর দিকেও একটা ছাদ আছে আমার জানা মতে তবে ওটা আরেকটু ছোট। সেটা বোধহয় ভাইয়ার ঘরের সাথে লাগোয়া। এই ছাদটা বেশ বড় আছে বলা যায়। পুরো বাড়িকে ঘিরে রয়েছে এই ছাদ আর ছাদের যে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে বাড়ির যে কোন অংশে খেয়াল রাখা যায়। এই মুহূর্ত পুরো ছাদ ঘুরে না দেখলেও আন্দাজ মতে আমার বিশ্বাস যে ছাদটা আমার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা হবে।
ছাদে পা রেখে বামে ঘুরতেই এক মুহূর্তের মধ্যে অনেকগুলো ঘটনা ঘটে গেল। কিন্তু কি হলো বুঝতে একটু সময় লাগলো আমার। আপাতত মনে হচ্ছে আমি আকাশে উড়ছি আর যতক্ষণ উড়ছি ততক্ষণে দুই মিনিট পেছনে গেলাম।
যেই আমি বামে ঘুরলাম তখন সবাই 'স্বাগতম' বলে চিৎকার করে উঠলো। বেশ কয়েকজন, তাদের সবার সামনে মা আর আপা, আমার দিকে তেড়ে এসে জোড়ে জড়িয়ে ধরলো নিশ্বাস বন্ধ করার মত। এরপর বাকিরা সবাই এসেও তাদের উপরে উঠে আমাকে চেপে ধরলো। কয়েকটা বাচ্চাও দেখলাম পাশে লাফাচ্ছে আর আমাকে ধরার চেষ্টা করছে। এরপর কখন আমাকে কে উপরে উঠালো, কখন ঘুরানো শুরু করলো কিছুই বুঝতে পারলাম না কিন্তু এই মুহূর্তে আমাকে না নামালে আমি মাথা ঘুরিয়ে সব বমি করে ফেলে দিবো।

"থামো! থামো! আপা! মা! আমার মাথা ঘুরাচ্ছে!"
কিন্তু তাও কেউ থামে না। সবাই হাত বদল করতে করতে নাচানাচি করছে তো করেই যাচ্ছে। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। আমার কথা তো শুনবে না তারা, এত বছর পরে পেয়েছে মেয়েকে তাই কিছু বলাও যায় না কিন্তু আমার নিজের ভালো আমাকেই দেখতে হবে। তাই আসতে না আসতেই যেন অসুস্থ না হয়ে পরি চোখ বন্ধ করলাম। এবার তাদের যখন ইচ্ছা হবে আমাকে নামাবে!
হঠাৎ অনুভব করলাম আমার চারপাশ স্থির হয়েছে, এরপর আমার পায়ের নিচে মাটি স্পর্শ করেছে কিন্তু এরপর‌ই হুট করেই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হলো। দুদণ্ড সময় নিয়ে স্থির হয়ে চোখ খুলে তাকালাম আর সবার চিন্তিত চেহারা দেখলাম। হঠাৎ কি হলো বুঝলাম না। একেকজনের গলার স্বর মাশাল্লাহ! কারো কথাই পরিষ্কার করে বোঝা যাচ্ছে না। এরপর একজন সামনে আসলো আমার আর বললো,
"কি শ্যালিকা? একটুতেই অসুস্থ হয়ে পরলে নাকি?"
লোকটার দিকে ভালো করে তাকালাম। শ্যামলা গায়ের রঙ, মাথা ভর্তি চুল, বড় বড় চোখ, ঠোঁটের উপর হালকা গোফ আর সুস্বাস্থবান। নিশ্চিত ইনিই সেই ব্যক্তি যার প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে আমার বোন আঠারো বছর বয়সেই কবুল বলেছে। আমার হাতে এক গ্লাস পানি দিলে আমি গ্লাসে একটু চুমু দেই ভদ্রতার খাতিরে কিন্তু সবার অস্থিরতা এখন‌ও কাটে নি। সবার দিকে একবার করে চোখ বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
"কি হয়েছে? সবার বেলুনের হাওয়া এভাবে বের হলো কেন?"
"তুই অসুস্থ নাকি? তোর শরীর ঠিক আছে? এরকম লাগছে কেন দেখতে? আর তখন অমন চোখ বন্ধ করে ছিলি কেন?"
কাকে এখন কি বোঝাবো! এভাবে মাথায় তুলে ঘুরালে চোখ খোলা রাখি কিভাবে?
"মা, আমি ঠিক আছি। এসব রাখো, আগে বলো তুমি কেমন আছো? আর যদিও আমি পারবো, তাও সবাইকে পরিচয় করিয়ে দাও!"
এখন একটু সময় নিয়ে সবার দিকে তাকালাম। পুরো ছাদ ভর্তি মানুষ, এরা না থাকলে তো এই বাড়িটা মৃত বাড়ি হয়ে যেত একদম।

"তোর দুলাভাই!"
আপা বলার আগেই আমি চিনেছিলাম কিন্তু এখন নিশ্চিত হলাম। দুলাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে বললাম,
"আপা, তোর জামাইকে কিন্তু আমি নিয়ে যাবো।"
দুলাভাই আমার কথায় হেসে দিলো কিন্তু উত্তেজিত হয়ে গেল আপা।
"কোথায় নিয়ে যাবি?"
"কোথায় আর! দূরে কোথাও নিয়ে চলে যাবো।"
দুলাভাইয়ের চোখে এখন‌ও চোখ রেখে কথা বলছি।
"সায়কা, কি হচ্ছে এসব?"
"আরেহ আপা, এরকম জামাই তোর একার হতে পারে না। ভাগ তো আমার‌ও আছে আর যেহেতু এত বছর তুই রেখেছিস, এবার বাকিটা সময় আমি রাখবো। সখ মিটে গেলে তোকে তোর জামাই আবার ফিরিয়ে দিবো। কি দুলাভাই? আপত্তি নেই তো কোন?"
"মা!আ!আ! তোমার মেয়েকে বলো আমার নিলয়ের উপর চোখ না দিতে!"
আপার কথা শুনে সত্যিই হাসি পেল। ভালো যে বাসে তা যেমন সত্য তেমনি ভালোবাসার জন্য লড়াই করার সাহস আছে তাও সত্যি।
"সিয়ারা, সায়কা মজা করছে তোমার সাথে। আমি তো আজীবন তোমার, তুমি জানো না?"
মুহূর্তেই আপার মুখের কালো ঘনঘটা মেঘ কেটে গেল আর পৃথিবী আলোকিত করে হাসি ফুটে উঠলো। দুলাভাইয়ের পৃথিবী। সত্যিই! দুলাভাই‌ও আপাকে অনেক ভালোবাসে!

আপা আর দুলাভাইয়ের পর আসলো আমার চাচা চাচিরা, চাচাতো ভাই-বোন, কয়েকজন ভাবি আর তারপর আমার মামা। মামা আজ‌ও বিয়ে করেন নি, এসবের কোন মানে হয়? মামার কাছে গিয়ে তার কাধে হাত রেখে বললাম,
"কি হ্যান্ডসাম, আমি ছাড়া আর কেউ বুঝি পারলো না তোমাকে সহ্য করতে?"
মামার সেই হৃদয় জুড়ানো হাসি আসলো! ইশশ, আমি যদি তার ভাগনি না হতাম সত্যিই তার প্রেমে পরে যেতাম আর এই দেশের সব মেয়েদের চোখে আল্লাহর গজব পরেছে।
"ঠিক‌ই বলেছো ডার্লিং। তুমি ছাড়া আর কেউ হলো না। কিন্তু তুমি তো দেখি এখন নিলয়ের পেছনে..."
বলে মুখ কালো করার নাটক করলেন মামা আর আমি হেসে দিলাম।
"আরেহ হ্যান্ডসাম, ওইটা তো শুধু একটা শখ। সারা জীবনের জন্য পার্টনার তো তুমিই আমার!"
এই বলেই মামাকে জড়িয়ে ধরলাম আর মামাও। এরপর হঠাৎ কোথা থেকে কারো কান্না শুনতে পেলাম। সবাই সরে গেলে তাকে দেখতে পেলাম। এই বাড়িতে আসার পরে বোধহয় এই একটাই মানুষ ছিল যার সাথে পরিচয় হ‌ওয়ার অপেক্ষা করেছি আমি।

"আমাকে রেখে তুমি ওকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছো কেন?"
তার কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পরলাম। আমার মামার উপর ভাগ বসানোর জন্য আরেকজন চলে এসেছে। বাহ! ভালোই তো। আমি শুধু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলাম। পরণে স্কুল ড্রেস, মাথার চুলের অবস্থা বারোটা বেজে আছে, গলায় পানির ফ্লাস্ক আর কাধে ব্যাগ ঝোলানো। এতটুকু একজনের কাধে এত বড় একটা ব্যাগ কোনভাবেই মানায় না। ছোট্ট এই মানুষটি তেড়ে আসছে আমাদের দিকে আর আমি তাকিয়ে আছি।
"তোমার জন্য আমি সকাল থেকে বসে আছি আর এখন তুমি এসেছো তাও আমার সাথে দেখা করলে না। ওকে কত করে বললাম আজ স্কুল না গেলেও চলবে কিন্তু তাও আমাকে জোর করে পাঠালো। আর তুমি কিনা!"
এসব বলেই তার চোখ জলে ঝাপসা হয়ে এসে এক ফোটা পানি টপ করে গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো। কিন্তু কথা সেটা নয়, কথা হচ্ছে সে মামার উপর নয়, আমার উপর অভিমান করে আছে। আমি একটু সামনে আগাতেই সে আমাকে জোড়ে জড়িয়ে ধরলো।
"বাপ্পা কত বলেছে তোমার কথা আর তুমি কিনা সেই এখন আমার কাছে আসলে? তোমার কি আমার কথা একটুও মনে পরে নি?"
তার কথা শুনে আমার চোখ দিয়েও পানি চলে আসলো কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে আমি তার সামনে হাটু গেড়ে বসলাম।
"তুমি আমার কথা জানো?"
"কিভাবে জানবো না আমি? তুমিই তো আমার ইম্মা। আম্মুও বলতে ইম্মাকে কখনো যেন না ভুলি। সবসময় যেন মনে রাখি।"
"এই পরী! দাঁড়া। পরী, শোন আমার কথা বোন!"
পেছন থেকে একটা চেনা কন্ঠ শুনে পরীর পেছনে তাকালাম আর এবার নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। ভেউ ভেউ করে কেঁদে দিলাম। আজকে উনি না থাকলে আমিই বুঝি এই পৃথিবীর বুকে থাকতাম না।
"এই দেখো পরী, বলেছিলাম না আমার আগে না আসতে। ইম্মার জন্য তো সারপ্রাইজ ছিল। তুমি যে ইম্মাকে এত ভালোবাসো ইম্মাতো তা জানতো না। আমরা..."
বাবার কথা শেষ হ‌ওয়ার আগেই আমি উঠে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বুকের সবকিছু বের করে দিলাম। আট বছর, দীর্ঘ আট বছর পরে আমি বাবাকে দেখছি। আজকে ভাইয়া না থাকার কষ্ট যতটা বেশি তার চেয়েও বেশি খুশি বাবাকে নিজের বুকের সাথে ধরতে পেরে। বাবা আমার পিঠে হাত বুলানো শুরু করে কিসব বলতে লাগলেন কিন্তু কানে কিছুই গেল না। আজকে শুধু বাবা, আমি আর আমাদের দীর্ঘ আট বছরের অপেক্ষা। হঠাৎ হাত তালির আওয়াজ শুনে আমি মুখ তুলে তাকালাম আর সেই অবস্থাতেই পরীকে কোলে তুলে তার কাধে মাথা রেখে বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম। জীবনে কোনদিন কোন কিছুকে আমি এদের আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে দিবো না।

-চলবে-

Pokračovat ve čtení

Mohlo by se ti líbit

24 0 3
গোচরে - অগোচরে ঘটে যায় সবই ভুল ভেবোনা আমায় আমি নয় কবি আমাদের গোচরে অগোচরে অনেক কিছু ঘটে যায় যা আমাদের জীবনের রহস্যের মতোই রয়ে যায় কখনো খোলসা ক...
2.9K 11 12
[গল্পটা একান্তই প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য। এখানে অনেক adult content আছে। তাই যাদের এই সব গল্পো পড়তে রুচিতে বাধে দয়া করে গল্পটা এড়িয়ে যাবেন।]
6 0 2
একটা অদ্ভুত ধরণের কেস হাতে আসে গোয়েন্দা অনুব্রত বসুর। কোনও এক অজ্ঞাত খুনী নির্বাধ হত্যালীলা চালিয়ে যাচ্ছে কলকাতার বিভিন্ন এলাকায়। আততায়ীর একটি বি...
4.9K 23 5
একটি পশ্চিমা গল্পের ভাবানুবাদ ও দেশীয়করন। এই গল্প কিন্তু সবার জন্য নয়,।