পার্ট - ৩৪

463 17 0
                                    


আমি এখন কি করব?? কি করবো?? 
চিৎকার করে কান্না আসছে।। কেন যে আমি মারোয়া কে আনলাম?? মামুনের কাছে থাকলে ভালো হত।। অন্তত নিরাপদ থাকতো। এখন যদি ওর কোন ক্ষতি করে ফারান??? আমি কি জবাব দিব??
.
চোখ ফেটে কান্না আসছিল।। আমার কাছে কোন ফোন পর্যন্ত নেই।।
নতুন কাজের জন্য মহিলা রাখছে।। ওর কাছে থাকবে নিশ্চয় ফোন।। মনে মনে ভাবলাম।।
দৌড়ে কিচেনে গেলাম।। মহিলাটি থমকে দাড়াল আমার অবস্থা দেখে। তাড়াতাড়ি চলে এসে জিজ্ঞেস করল
..... ম্যাডাম আপনার কিছু লাগবে?? পানি দিব??
..... না।। ফোন আছে তোমার কাছে??
..... আছে তো।। 
.... দাও দেখি।।
....ম্যাডাম""""""
...... দাও বলছি।।
ভয় পেয়ে কাজের মহিলাটি ফোন দিল।
.
আমি ডায়াল করতে গিয়ে মনে হল আমি তো ফারানের ফোন নাম্বারটা জানি না!! 
এখন কি হবে?? 
কাজের মহিলাটি কে জিজ্ঞেস করলাম
..... তোমার কাছে ফারানের ফোন নম্বর আছে??
.... এখনো নিই নাই।।
..... কোন কাজের না তুমি।। নিজের মালিকের ফোন নম্বর পর্যন্ত নাই তোমার কাছে!!
রাগত স্বরে বললাম
.
এই বলে ফোনটা নিয়ে বাইরে চলে এলাম।। রাগে পিত্তি জ্বলে যাচ্ছিল। তাই বিবেক বুদ্ধি লোপ পেয়েছে।। তাই মহিলাটি কে অযথা বকাবকি করেছিলাম। অথচ আমার নিজের কাছে ফারানের ফোন নাম্বার নেই।। হুশ চলে গিয়েছিল। গায়ের ওড়না কোথায় পড়ে গেছে নিজেও জানিনা।। মাথার চুল গুলো বাতাসের সাথে উড়ছে।। একরকম পাগল প্রায় অবস্থা। তার উপর এভাবে বাইরে ঘোরাঘুরি করছি।।
.
ঠিক এই অবস্থায় দারোয়ানের কাছে গেলাম। দারোয়ান প্রথমে আমাকে দেখে অবাক হলেও পরে মাথা নিচু করে ফেলল। আমি যে ওড়না ছাড়া দারোয়ানের সামনে এসেছি সে খেয়াল আমার নেই।। আমি শুধু মারোয়ার চিন্তায় বিভোর।।
দারোয়ান কাছ থেকে নাম্বার চাইতেই দিয়ে দিল।।
.
আমি কল করলাম। কিন্তু কল যাচ্ছিল না।। আমি বারবার চেষ্টা করছিলাম।। 
রাগে দুঃখে আমার কান্না আসছিল।। না হলেও ৫০ বারের মত কল দিলাম।। কিন্তু বন্ধ।। আমি হাটতে হাটতে পাথরের টুলের ওপর বসলাম।। শুধু কান্না করছিলাম আর নিজেকে অভিশাপ দিচ্ছিলাম।
.
এভাবে কিছুক্ষন কাটল। এরপর হঠাৎ গেইট খোলার শব্দ পেলাম।। অামি কান খাড়া করলাম। ফারানের গাড়ির অতি পরিচিত সাইরেনের শব্দ। আমি উঠে দাড়ালাম।। ফারানের গাড়ি ভিতরে ঢুকল।। আমি গাড়ির দিকে হাটতে ধীরে ধীরে। ফারান প্রথমে আমাকে খেয়াল করেনি।। পরে যখন দেখল আমি ওর গাড়ির দিকে এগিয়ে আসছি তখন তাড়াতাড়ি গাড়ি থামিয়ে ফেলল।
.
আমি তারপরও এগুতে লাগলাম।। ফারান বেড়িয়ে এলো।। তারপর আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।। কিন্তু মারোয়া নামল না গাড়ি থেকে।। মারোয়া কোথায়?? আমি দৌড়ে গাড়ির কাছে গিয়ে সামনের পিছনের সিট ভালো করে দেখলাম। কিন্তু মারোয়া ওখানে ছিলনা।। 
ফারান অবাক হয়ে দাড়িয়ে ছিল। গাড়িতে মারোয়া কে না পেয়ে আমি ক্ষিপ্ত হয়ে গেলাম।
.
গিয়ে দুহাতে যত শক্তি ছিল তা দিয়ে ফারান বুকে মারতে লাগলাম।। আর বলতে লাগলাম
.... মারোয়া কোথায়?? 
.....মোহিনী""""""
......তুমি আমার মারোয়া কে কোথায় ফেলে এসেছো?? মারোয়ার যদি কিছু হয় তাহলে তোমাকে ছাড়বোনা।।
.
আমি বলছিলাম আর ফারান কে মারছিলাম। ফারান আমাকে থামাতে চেষ্টা করছিল।। কিন্তু পারছিল না। ও আমার হাত শক্ত করে ধরল। কিন্তু আমি ওর হাতে কামড় দিলাম। ও সহ্য করে চোখ বন্ধ করল।। কিন্তু হাত ছাড়ল না।
.
আমি এগিয়ে যাচ্ছিলাম আর ফারান পিছু হটছিল। এভাবে ফারান পিছু হটতে হটতে একটা ছোট পাথরের সাথে হোচট খেল। প্রথমে টাল সামলালেও পড়ে আমার ধাক্কা খেয়ে নিজেকে সামলাতে পারলোনা। ধপাস করে পড়ে গেলো ঘাসের উপর।। আর আমি ওর উপর।। বিতিকিচ্ছিরি দৃশ্য।
.
পড়ে গিয়েও আমি ফারান কে মারতে লাগলাম। ফারান আমাকে থামতে বলছিল। শেষ পর্যন্ত আর সহ্য করতে না পেরে আমার দু হাত চেপে ধরল। তাতেও আমি হাল ছাড়ছি না দেখে আমাকে নিচে ফেলে আমার দু হাত ঘাসের সাথে চেপে ধরল। তারপর সে প্রথমে চোখ বন্ধ করে হাপাতে হাপাতে নিঃশ্বাস নিল।।
.
আমি হাত ছাড়াতে না পেরে বলতে লাগলাম
..... আমার হাত ছাড়ো।। ছাড়ো বলছি। 
.....না।। তার আগে বলো কি হয়েছে?? তুমি এমন করছো কেন??
..... মারোয়া কোথায়?? মারোয়া সাথে কি করছো?? মারোয়ার যদি কিছু হয় তো তোমাকে আমি"""""""
...... শসসসসহ!! এত কিসের চিন্তা হাঁ?? মারোয়া যেখানে আছে সুস্থ আছে ভালো আছে।। কি বলেছিলে তুমি?? মারোয়ার যদি কিছু হয়!! মানে কি?? মারোয়া কে আমি মেরে ফেলবো নাকি? এতই অবিশ্বাস করো নাকি আমাকে?
...... অামাকে না বলে নিলে কেন ওকে?
..... মিসেসে ফারান আপনার যে স্মৃতিশক্তি এত দুর্বল তা আমি আগে জানতাম না।। কেন মনে নাই? তুমি ঘুম ছিলে তাই হয়তো তোমাকে জাগানো হয় নি।।
..... মিথ্যা কথা!!
..... আরেক বার মিথ্যা বললে ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।। 
..... কোথায় রেখে এসেছো মারোয়া কে??
..... জানতে চাও??
..... হুম
..... তাহলে দ্বিতীয় বার আমার গায়ে হাত তোলার সাহস করবেনা। প্রথম বার বলে মাফ করলাম। কিন্তু দ্বিতীয় বার করবোনা।।।
.
ফারান আমার হাত ছেড়ে দিল। আর আমি রাগে ফুসতে লাগলাম। হাকের কবজি তে
.
ফারান আমার হাত ছেড়ে দিল। আর আমি রাগে ফুসতে লাগলাম। হাতের কবজি তে ফারানের পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ বসে আছে স্পষ্ট ভাবে।। ফারান উঠে দাড়িয়ে আসার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। আমি অগ্রাহ্য করলাম।। 
.
কিন্তু ফারান আমার হাত জোর করে ধরে আমাকে টেনে তুলল।। উঠে দাড়ানোর পর আমি জোর করে আমার হাত টেনে নিলাম।।
.
তারপর বললাম
..... আমি মারোয়ার কাছে যেতে চাই।।
..... অবশ্যই।। কিন্তু তার আগে তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।।
..... কি কাজ??
..... টেইক এ শাওয়ার!!! নিজেকে দেখেছো।। কেমন অবস্থায় ঘুরতেছো??
..... কেমন অবস্থায় ঘুরতেছি??
.
এই বলে আমি নিজের দিকে তাকালাম। তাকিয়েই আতকে উঠলাম। আমার ওড়না কই??
তাড়াতাড়ি বুকের ওপর হাত দিয়ে ঘরের দিকে দৌড় দিলাম।।
যেতে যেতে শুনলাম ফারান অট্টহাসি হাসছে!!
.
অসভ্য কোথাকার!!
মনে মনে বললাম।।
রুমে ঢুকে প্রথমে ভালো করে গোসল করে নিলাম।। তারপর চুল শুকালাম না। ভেজা চুল নিয়ে কাপড় পড়ে তাড়াতাড়ি চলে এলাম নিচে।। ফারান ও ফ্রেশ হয়ে টেবিলে বসেছে।। ব্ল্যাক কালারের ফুল হাতা শার্ট পড়েছে।। ব্ল্যাক শার্টে ফারান কে আরো আকর্ষনীয় ও ব্যাক্তিত্ববান বলে মনে হয়।। কেন যে পড়ে শার্ট গুলা??
.
আমি বললাম
...... চলো। আমি তৈরি।।
ফারান তাকালো আমার দিকে।। তারপর বলল 
...... আগে তো খেয়ে নিই।।
..... খেতে হবে না চলো।।
..... আমার খুব খিদা পেয়েছে।। কিছু খেয়ে নিই আগে।।
...... না।।
...... মোহিনী!!!
...... ঠিক আছে।। তবে তাড়াতাড়ি
..... তুমিও বস।।
..... আমি খাবো না।।
..... তাহলে আমিও খাবোনা।।
.
সুতরাং বাধ্য হয়ে আমাকে বসতে হল।। না হলে ফারান যা বলেছে তা করে দেখাবে।। 
.
কাজের মহিলাটির নাম মেনবা।।। অদ্ভুদ নাম।। কিছু করার নেই। যার যেই নাম।। বাকি আর দুটোর একটার নাম রেবেকা আর ছেলেটার মুহসিন।। 
মেনবা খাবার দিয়ে গেল।। আমি চুপচাপ খাবার খাচ্ছি যত জলদি সম্ভব।। তা দেখে ফারান বলল
...... ধীরে ধীরে খাও।।
.
আমি কিছু বললাম না।। আমি জানি না তবে কিছুটা স্বস্তি হচ্ছিল যে ফারান মারোয়ার কোন ক্ষতি করবেনা। কিন্তু ফারানের অতীত রেকর্ড অনুযায়ী পুরোপুরি ভাবে আশ্বস্ত হতে পারছিলাম না।
.
খাওয়া শেষে গাড়িতে উঠে বসলাম। ফারান শুধু মৃদু হাসছিল।। এরপর গাড়ি স্টার্ট দিল।। 
আর সহ্য না করতে পেরে জিজ্ঞেস করে ফেললাম
...... এত হাসতেছো কেন??
..... আমি???
..... আর কে?? 
..... এমনি।।
..... খুব মজা লাগছে তাই না???
..... জ্বলুনি হচ্ছে।। মজা না!!
..... মানে??
..... তুমি মারোয়া কে যতটা ভালোবাসো তার ইঞ্চি পরিমান আমাকে ভালোবাসতে তাহলে আমার প্রেম সাথর্ক হত।।
..... তাহলে এখন কি সার্থক না??
..... নাহ্!! তোমাকে শুধু পেয়েছে।। কিন্তু কাছে পাইনি।। যা করছো সব কিছুই মারোয়ার জন্য করছো।। আমার জন্য না।।
.
আমি এক মুহুর্তের জন্য ফারানের দিকে তাকালাম। গাম্ভীর্য্য ছেয়ে আছে ওর মুখে।। কথাগুলো মজার ছলে বলা নাকি আসলেই মারোয়া কে হিংসা করে??
না না!! মারোয়ার মত ছোট মেয়েকে হিংসা করার কি আছে।। সম্পর্কে তো তারা আত্মীয়।। আমি বাইরের মানুষ ছিলাম।।
.
ভাবতে ভাবতে বাইরে তাকালাম। সা সা করে গাড়ি ছুটে চলছে।। রেডিও তে একটা স্যাড গান বাজছে দুখী ভাবে।। শুনতে শুনতে তন্দ্রা লেগে এলো।। কিন্তু ঝাকুনি তে তা ছুটে গেল।। অনেকক্ষণ ধরেই মনে হল ঘুমাচ্ছিলাম।। ফারান এক মনে গাড়ি চালাচ্ছে।।
আমি বাইরে তাকালাম।। জায়গাটা পরিচিত বলে মনে হচ্ছে।। মনে পড়তেই ফারানের দিকে ঝট করে তাকালাম। ফারান বুঝতে পেরে ঠোটের কোনে হাসি দিল।। 
উফফ্।। ফারান কেন মারোয়া কে এখানে আনল?? মানে কি এখানে আনার??
.
(চলবে)
.

 মোহিনী_২ ♥প্রেমান্ধ♥Where stories live. Discover now