পার্ট - ৯

554 23 0
                                    


আমি খুশি ছিলাম যে মামুন আমার পাশে বসছিল। কিন্তু এটা খেয়াল করি নাই যে এক জোড়া চোখ সর্বদা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সেটা খেয়াল হতেই দেখলাম ফারান আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওর দিকে তাকাতেই সে আমাকে চোখ টিপ মারল!! আমি হা হয়ে গেলাম!! তাড়াতাড়ি মারোয়া কে বললাম
..... মারোয়া তুমি দেখছো!!
...... কি??
আমি মারোয়ার দিকে তাকালাম। তার খাওয়ার দিকে মনোযোগ। সবার মনোযোগ খাওয়ার দিকে। শুধু ফারানের মনোযোগ আমার দিকে। আমি আবার দিকে ওর দিকে তাকাতেই ও একটা শয়তানি হাসি দিল ঠোঁটের কোনে।। আমার এটা দেখে হেচকি চলে আসল। আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। পানি খেতে গিয়ে পানির জগ উল্টিয়ে পুরো টেবিল টা ভাসিয়ে দিলাম। সবাই আমার কান্ডকার খানা দেখতে লাগল। আমি স্যরি বললাম সবাই কে।। তারপর আবার তাকালাম ফারানের দিকে। ও আবারো ঠোঁটের এক কোনে শয়তানি হাসি দিয়ে চোখ টিপ মারল। আর সাথে সাথে হৃদযন্ত্র বন্ধ হওয়ার উপক্রম হল। আমি দাড়িয়ে গেলাম। কিন্তু ওই খানেও বিপত্তি!! দাড়াতে গিয়ে আমার খাবারের প্লেট উল্টে গেল। আর টেবিলে বসা সবাই আমার খাবারের একটু একটু অংশ পেল। আমি এতটাই নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম যে ঠিকমত দাড়াতে পারছিলাম না। সবাই আমার দিকে রুদ্র মুর্তিতে তাকাচ্ছিল। যেন আমি কোন মহাপাপ করেছি। মামি জিজ্ঞেস করলেন
....... কি হয়ছে?? তুমি ঠিক আছো তো??
..... না মানে হ্যাঁ।। ওহ না। আ আমিমি ঠিক আছি।
তারপর সবার দিকে তাকিয়ে স্যরি বলে ওখান থেকে উঠে রুমে চলে আসলাম। আসার সময় পিছন ফিরে তাকালাম। দেখলাম ফারান আমার দিকে তাকিয়ে ঠোটের এক কোন দিয়ে শয়তানি হাসি দিচ্ছে। কি সাংঘাতিক!!! আমি নিশ্চই মারা যাবো এই হাসি দেখতে থাকলে।। অসভ্য কোথাকার!!!
কোমড় টা ব্যাথা করছে প্রচুন্ড!! ঔষুধ খেয়ে নিলাম। না হলে ব্যাথা কমবে না। আমার এক্ষুনি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছা করছে।। প্রচুন্ড খিদা পেটের মধ্যে। কিছু খেতে পারি নি। ডিনার এখনো অনেক দেরি।। তার উপর মামুনের সাথে চলে যাওয়ার ব্যাপারে কথা বলতে হবে। এখানে আর কয় দিন?? বার্ষিকী তো শেষ।
নাহ পরে কথা বলবো। আগে খেয়ে নিই।
মারোয়াও চলে এসেছে। তাকে একটু বসতে বলে আমি কিচেনে গেলাম। কিচেন টা অনেক বড়। একটা হল রুমের মত। এখানে কাজের লোকরা যার যার কাজে ব্যস্ত। আমি ঢুকতেই একজন দৌড়ে এলো আমার কাছে
.... ম্যাম আপনার কি দরকার বলেন। আমরা টেবিলে দিয়ে আসছি।।
..... আমি কিছু খেতে চাই। পেট ভরার মত হালকা নাস্তা।
..... ঠিক আছে ম্যাম। টেবিলে পাচঁ মিনিটে আপনার নাস্তা আসবে। আপনি একটু বসেন। আমি টেবিলে গিয়ে বসলাম। অপেক্ষা করছিলাম খাবারের জন্য।। সেই মুহুর্তে কোথ থেকে হুড়মুড় করে ফারান আসল। সে এসেই আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। আমি হতবম্ভ হয়ে হাত টেনে নিলাম। তারপর বললাম
...... কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে??
ফারানের চোখ দিয়ে যেন ঠিকরে আগুন বেরুচ্ছে। সেই অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে কয়েক কদমে আমার সামনে আসল। খুব জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেওয়ার শব্দ আসছিল। তারপর সে দাত চিবিয়ে বলল
...... চলো আমার সাথে। না হলে ভালো হবেনা বলছি। 
আমি গায়ের পশম খাড়া হয়ে গেল এই কথায়। মানে কি?? কিছু বললাম না। সে আবার আমার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি এবার বাধা দিলাম না। তিন তলা, চারতলা, পাচঁ তলা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমাকে সে?? বাড়ির সব মানুষরা তাদের ব্যস্ত। আমাকে দেখার সুযোগ নেই তাদের। এরপর একটা রুমে নিয়ে ফারান দরজা বন্ধ করে দিল। আমার মনটা অজানা আশঙ্কায় কেপে উঠল। আমি তাড়াতাড়ি বলে উঠলাম
..... কি করছেন আপনি??
...... শসসসসসসহ!!!
সে আমাকে চুপ করতে বলছিল। তারপর রুমের মাঝখানে দাড় করিয়ে বলতে লাগল
..... আমি কিছু প্রশ্নের উত্তর চাই।।
..... কিসের প্রশ্ন??
...... আমাকে কেউ কেন তোমার সাথে দেখা করতে দেই না, তোমার সাথে কথা বলতে চাইলে কেন কথা বলতে দেয় না।। কি সমস্যা?? তুমি বলতে পারো??
আমি অনেকটা চমকে উঠলাম। অনেকটা তোতলিয়ে বললাম
...... আআ আমিমি জা জা জানিইই না!!!
...... মিথ্যা কথা!! তুমি সব জান!! বল
...... না।। 
......মোহিনী!!!
মোহিনী নাম টা শুনে চোখ তুলে উপরে তাকালাম। ওর চোখ এক দৃষ্টিতে আমাকে তাকিয়ে আছে। যেন মনে হচ্ছে কোন প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে।। তারপর আরো কাছে এসে বলল
...... আমাকে পাগল বানিয়ো না।।
..... মানে???
..... ঠোঁট কামরানো বন্ধ কর তোমার!! নইলে আমি"""""""""
এই কথার পর সে ঢোক গিলল। আমি তাড়াতাড়ি মুখে হাত দিয়ে পিছু হটে গেলাম। এরপর ফারান অনেক খুজে একটা ওয়ারড্রব থেকে একটা সিডি বের করল। তারপর সেটা ল্যাপটপে ঢুকিয়ে চালু করল। আমি শুধু ওর কাজ গুলো দেখছিলাম। বুঝতেছিলাম না ও কি করছিল। সিডি টা চালু হলে দেখলাম একটা ঘরোয়া কোন অনুষ্ঠান চলছে।। জায়গা টা বেশ চেনা চেনা।। আরে ওই তো মারোয়া!!! তাহলে এটা!!! বিস্ফোরিত চোখে ফারানের দিকে তাকালাম।
এটা সাগর ভাইয়ের বিয়ের ভিডিও!! এটা কোথায় পেল ফারান?? আমি মনে মনে ঢোক গিললাম। তারপর ভিডিও দেখতে লাগলাম। ফারান নির্বিকার ভাবে ভিডিও দেখছে আমার পাশে দাড়িয়ে।।
.
ওই তো আমি আর মারোয়া কাউন্টারে দাড়িয়ে সালাদ খাচ্ছিলাম। আর দূরে একটা রুম থেকে ফারান টলতে টলতে বেরুচ্ছে। ও বার বার মাথা চেপে ধরছিল। যেন মাথায় অসহ্য যন্ত্রনা ছিল। তারপর ধীরে ধীরে নিচে নেমে আসতে লাগল। সবার মনযোগ অনুষ্ঠানের দিকে তাই কেউই ফারান কে লক্ষ করল না। ফারান এসে আমার পিছে দাড়াল। আমি যদিও বা পুরোনো ভিডিও দেখছিলাম তথাপি মনে হচ্ছিল যেন তা এখন হচ্ছিল আর আমার হাত পা কাঁপছিল। তারপর ফারান আমার পিছনে এসে দাড়ায়। মারোয়া আমার পিছনে তাকাল। ওর তাকানো দেখে আমি পিছনে তাকালাম। তারপর ধীরে ধীরে আমি পিছু হটতে লাগলাম। একসময় পিঠ ঠেকে গেল। এরপর মারোয়া যেন কিছু বলল। ফারান শুধু তার মাথাটা ঘুরাল মারোয়ার দিকে। মারোয়া অমনি ভো দৌড় দিল। তারপর সে কি যেন বলল। আমার দুই হাত ধরল। তারপর দেখতে লাগল। এরপর সে আমার হাত শুকতে লাগল। আমি বসে বসে ভিডিও দেখছিলাম। তারপরও মনে হচ্ছিল এটা এখন হচ্ছে। রুমে এসি চালু ছিল কিন্তু তারপরও আমি কুলকুল করে ঘামছিলাম। এরপর সে আমার হাতে এলোপাথারি চুমু খেতে লাগল। আর আমি এখানে ভিডিও দেখে চিৎকার শুরু করে দিলাম। আমার হাত পা টলছিল। ভিডিও তে যা হওয়ার তা হচ্ছিল। কিন্তু ভিডিও দেখে আমি নিজেকে সামলাতে পারলাম না। আমি দৌড়ে পালাতে চাইলাম। কিন্তু তার আগেই ফারান আমাকে জাপটে ধরে ফেলল। আমি ওর দিকে তাকালাম। ওর চোখ বিষাদে ছেয়ে ছিল। আর আমাকে সে দরজার সাথে চেপে ধরল। আমার কান্না আসছিল। কোনো রকমে বললাম
...... আ আ মামামাককেকে ছেচছেড়ে দাদাও।।
জবাবে ফারান কিছু বলল না। শুধু মাত্র আমার দুই হাত শক্ত করে ধরে আমাকে আরো কাছে টানল। আমি এখন একদম ফারানের কাছাকাছি। তার নিঃশ্বাস আমার মুখের উপর পড়ছিল। ওদিকে ভিডিওতে মারোয়ার আম্মুর কাছে আমাকে ভিক্ষা চাওয়ার কথাগুলো স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল। সে তার ফুপির কাছে বারবার আবেদন জানাচ্ছিল। ফারান যেন আমাকে চেপে ধরেছিল সে আবেদন টা শোনার জন্য। আমি শুনছিলাম চোখ নিচু করে। আর অনুভব করছিলাম আমার মুখের উপর পানি পড়ছে। চমকে মাথা তুলে দেখলাম ফারানের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। মানে ফারান কান্না করছে!!
.
(চলবে)

 মোহিনী_২ ♥প্রেমান্ধ♥Where stories live. Discover now