20 0 0
                                    

অনেক দিন আগে, কোনও এক দূর দেশের জঙ্গলে অনেক প্রাণী থাকত। তাদের মধ্যে ছিল এক দল কৃষ্ণসার মৃগ। মৃগ মানে কিন্তু হরিণ না। ওরা হরিণের মত দেখতে, কিন্তু অন্য প্রাণী। হরিণের মত দলবেঁধে জঙ্গলে থাকত।

সেই দলে ছিল এক মা আর তার দুষ্টু বাচ্চা ছেলে। বাচ্চাটা খুবই ছোটো। কিচ্ছু জানে না। খালি মায়ের সঙ্গে দৌড়য়, আর মাকে ছেড়ে এদিক ওদিক ছুটে বেড়ায়। এটা সেটা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। বড়োরা শেখানোর চেষ্টা করে। বলে দেয় কোন ঘাস খেতে নরম আর মিষ্টি। বলে দেয় কোন কোন ঝোপ থেকে দূরে থাকতে হয় — কারণ তার পাতা তেতো। ওকে শিখিয়ে দেয় কোন গাছে কোন সময় ফল পাকে। শেখায় কোথায় কোথায় বিপদ থাকতে পারে। কোথায় শেয়াল লুকিয়ে থাকে, নেকড়ে কী ভাবে শিকার করে, সাবধান করে অন্য বিপদ থেকে, বলে দেয়, কখনও হায়নাও আসতে পারে। নদীর ধারে দেখিয়ে দেয় কী ভাবে কুমীররা জলে ভেসে থাকে যেন গাছের গুঁড়ি। যাতে ওদের দল জল খেতে এলেই পায়ে কামড় দিয়ে টেনে নিয়ে যেতে পারে জলের নিচে।

ওকে ওরা শেখাতো একরকম দু'পেয়ে প্রাণীর কথাও। তারা পোশাক পরে। তারা রাতের আঁধারে আসে। তাদের হাতে থাকে সূর্যের চেয়েও জোরালো আলো। তাদের গাড়ি দৌড়োয় সবেচেয়ে জোরে —তাদের নাম মানুষ। ওরা বাচ্চা কৃষ্ণসারকে শেখাত, সবসময় মায়ের কাছে কাছে থাকবে। আগে শিখে নাও, কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ। তার পরে এদিক ওদিক দৌড়বে।

বাচ্চাটা কথা শুনত না। দুষ্টু তো। ভাবত আমি খুব চালাক। ছুটে চলে যেত মায়ের কাছ থেকে। দেখতে যেত ওই গাছের পিছনে কী আছে? এই ঝোপটার ভেতরে? মাকে সব ফেলে দৌড়তে হত পিছনে। পাছে কোনও বিপদ আসে!

অন্য বড়ো কৃষ্ণসারেরা ওকে বোঝানোর চেষ্টা করত।বলত, "খোকা, যেটা দেখতে ভাল, সেটাই দেখতে কাছে যেও না। বড়ো গাছের কাছে যাবার আগে দেখে নিও ডালের ওপর চিতাবাঘ লুকিয়ে আছে কি না। ছুটে গেছিলে নদীতে জল খেতে— যদি ওখানে একটা কুমীর থাকত? গাড়ির শব্দ শুনলেই লুকিয়ে পড়বে। মানুষের হাতে অনেক সময় বন্দুক থাকে। দূর থেকে গুলি করে মেরে ফেলতে পারে আমাদের।"

বাচ্চাটা শুনতই না।

এক দিন একটা খরগোশ জিজ্ঞেস করল, "এই, মায়ের থেকে এত দূরে কী করছিস রে?"

বাচ্চা কৃষ্ণসার উলটে জানতে চাইল, "সারাক্ষণ মায়ের সঙ্গে থাকতে হবে কেন?"

খরগোশ বলল, "ছোটো না তুই? কোনটা ভালো আর কোনটা বিপদজনক তুই জানিস?"

বাচ্চাটা বুক ফুলিয়ে বলল, "জানি। আমি স-অ-অ-ব জানি।"

খরগোশটা বলল, "তবেই হয়েছে। এক দিন এমন বিপদে পড়বি..."

"কাঁচকলা," বলে বাচ্চাটা ফিরে গেল মায়ের কাছে। মা তখন ওকে হন্যে হয়ে চারিদিকে খুঁজছে।

"কোথায় গিয়েছিলি?"

"ও-ও-ও-ই, খরগোশটার সঙ্গে কথা বলছিলাম," বলল বাচ্চা কৃষ্ণসার।

"এক দিন টের পাবে," বলল আর এক কৃষ্ণসার মা।

ওর মা বলত, "খোকা, চোখ কান খুলে চলবি। সবসময় দেখবি অন্যরা কী করছে। অন্য জন্তুরাও বিপদ এলে বলে দেয়। বাঁদররা বাঘ দেখলে দূর থেকে চেঁচামেচি লাগিয়ে দেয়। পাখিরাও বলে দেয় কোন দিকে বাঘ যাচ্ছে। ওদের দিকে লক্ষ রাখলে দূর থেকে বিপদ বুঝে পালাতে পারবি।"

বাচ্চাটা পাত্তাই দিত না। কারওর কোনও কথাই শুনত না। বড়োরা বিপদের কথা বলত বলে হাসত। সবাই ওকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করত।

বলত, "এক দিন যখন বিপদ এসে পড়বে, পালাবার পথ পাবে না বাছাধন।"

দুষ্টু কৃষ্ণসারWhere stories live. Discover now