মেঘের আলোয়

By Bangla_story

35.5K 1.4K 144

লেখিকা - রুবাইয়াৎ তৃণা . একটি জীবন সংগ্রামের গল্প বড় উপন্যাস More

পর্ব : ১
পর্ব ২
পর্ব ৩
পর্ব ৪
পর্ব ৫
পর্ব ৬
পর্ব ৭
পর্ব ৮
পর্ব ৯
পর্ব ১০
পর্ব ১১
পর্ব ১২
পর্ব ১৩
পর্ব ১৪
পর্ব ১৫
পর্ব ১৬
পর্ব ১৭
পর্ব ১৮
পর্ব ১৯
পর্ব ২০
পর্ব ২১
পর্ব ২২
পর্ব ২৩
পর্ব ২৪
পর্ব ২৫
পর্ব ২৬
পর্ব ২৭
পর্ব ২৮
পর্ব ২৯
পর্ব ৩০
পর্ব ৩১
পর্ব ৩২
পর্ব ৩৩
পর্ব ৩৪
পর্ব ৩৫
পর্ব ৩৬
পর্ব ৩৭
পর্ব ৩৮
পর্ব ৩৯
পর্ব ৪০
পর্ব ৪১
পর্ব ৪২
পর্ব ৪৩
পর্ব ৪৪
পর্ব ৪৫
পর্ব ৪৬
পর্ব ৪৭
পর্ব ৪৮
পর্ব ৫০

পর্ব ৪৯

448 20 1
By Bangla_story

রজার নাতনির দিকে চেয়ে বললেন, "এখনও তুমি ঠিকমত সিরিয়াল বানাতে পারো না ! এখনও বাপের মত !"
ম্যাডিসন বলল, "আমি যেহেতু বাবার মেয়ে তাই বাবার মত তো হবোই |"
"খুবই ভালো কথা ! তবে বাপের মত মেজাজ টা পেয়োনা সোনা আমার | তাহলে উপায় থাকবেনা !"
"কেন ?"
"কেন কি আবার ? একটাও ছেলে পাবেনা ডেট করার জন্য |"
ম্যাডিসন হেসে বলল, "ড্যাডির মত হলে আমার বন্ধুর অভাব হবে না ! ড্যাডির প্রেমে পরে যায় এখনও অনেকেই তাকে দেখলেই |"
"ওটা তোমার বাবার চেহারার জন্য কিন্তু ওকে ভালোবেসে পাশে থাকা শুধু তোমার মায়ের পক্ষেই সম্ভব হয়েছে |"
"হুম | সত্যি | আচ্ছা গ্রান্ডপা আমরা তো কিছুদিনের মধ্যেই ফিরছি তাইনা ?"
"হ্যা | এক সপ্তাহেরও কম আছি আর |"
"আমার ঘরের কথা মনে পড়ছে খুব | আর ফিনিক্সকে |"
"ফিনিক্সকে ? তুমি তো ওকে পছন্দই করোনা !"
"হ্যা কিন্তু কেন যেন মনে পড়ছে ওকে |"
"সোনা ও কিন্তু খুবই ভালোবাসে তোমাকে |"
"তাই নাকি ? ওতো দেখি এড়িয়ে চলে আমাকে |"
"না | মোটেই না | ও খুব ভালোবাসে তোমাকে | ও যতটা আমাকে আর তোমার মাকে ভালোবাসে ঠিক ততটাই ও তোমাকে ভালোবাসে | জানো ও রোজ বারোটা নাগাদ লেনে আগেপিছে দৌড়াদৌড়ি করে | শুধু তোমার জন্য | তুমি তোমার মায়ের সঙ্গে বা আমার সঙ্গে ফিরলে তখন ও শান্ত হয় | রাতে যখনই তুমি কখনও তোমার সহপাঠী ইয়ানের বাড়ি যাও ও কিন্তু পিছুপিছু যায় আর বাইরেই বসে থাকে | এমনকি তুমি রাতে ঘুমালে ও লনে ঘোরাঘুরি করে লনের মাঝে এমন জায়গায় বসে যেখান থেকে তোমার জানালা দেখা যায় | ও রেক্স আর হলোইনের মত অত প্রকাশ করতে পারেনা নিজেকে | কিন্তু ও খুবই ভালোবাসে আমাদেরকে |"
ম্যাডিসন হেসে বলল, "আমি অবাক হলাম আর খুশিও হলাম | আসলে কেউ আচরণে বলে আর কেউ কাজে তাইনা ?"
রজার ছেলের ঘরের দরজার দিকে তাকিয়ে বললেন, "হুম | কেউ বর্ণনার চেয়ে উদাহরনে বেশি বিশ্বাস করে |"
.
.
.
আলিজা পাশফিরে তাকিয়ে দেখল এরিক 'পুল-আপ' করছে | আলিজা হাতে হাতঘড়ি দেখতে গিয়ে দেখল নেই হাতে ঘড়ি | আলিজা উঠে বসে পাশের বেডসাইড টেবিলের উপর রাখা এরিকের ঘড়িটা তুলে দেখল | প্রায় সাড়ে আটটা বেজে গেছে |
"ঘুম হয়েছে তো ঠিকমত ?"
এরিকের কন্ঠে ফিরে চাইল আলিজা | এরিক পুল-আপ থামিয়ে তাকে দেখছে |
আলিজা ঘুমঘুম স্বরে একটু হেসে বলল, "আমাকে ডাকোনি কেন ?"
"সুন্দরকরে ঘুমাচ্ছিলে | ডাকতে ইচ্ছা হলো না | আর ঘুমালে আরো সুন্দর লাগে তোমাকে |"
বিছানার উপর রোব রেখে দিয়েছে এরিক |
এরিক আরো পাঁচটা পুল-আপ করে থেমে যেতে আলিজা বলল, "ডোন্ট স্টপ মাই কাউন্ট | (আমাকে দেখে থামতে হবে না )"
"তোমার জন্য থামছিনা | শেষ আমার কাজ |"
"এরিক ?"
"কি ?"
"ধন্যবাদ এরিক |"
এরিক মৃদু হেসে বলল, "ক্ষিধে পেয়েছে আমার | দ্রুত ফ্রেস হয়ে নাও সুইটহার্ট |"
আলিজা সুন্দরকরে হাসল | কিছু মানুষের আমাদের জীবনে থাকাটা আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ |
.
.
আলিজা খাবার টেবিলে এসে দেখল মাহিরা তার সকালের দ্বিতীয়কাপ চা আর খবরের কাগজ নিয়ে বসেছে |
আলিজা এসে বসতেই সে মিষ্টি হেসে বলল, "ননোদিনী ! ঘুম হল ?"
আলিজা লাজুকহেসে বলল, "হুম !"
"বসো | এরিক কোথায় ? এলোনা এখনও ?"
"আসছে ও |"
"উঠেছে ? নাকি এখনও স্বপ্ন দেখছে ?"
"উঠে গিয়েছে ভাবি | ইনফ্যাক্ট ও আমার আগে উঠেছে |"
মাহিরা ঠোঁট চোখ করে বলল, "ওহঃ ! আচ্ছা !"
"ধ্যাৎ !"
আলিজা হেসে রান্নাঘরে চলে গেল | ময়না পরোটা সেঁকে রেখে দিয়েছে তাদের জন্য |
আলিজা পরোটা ভাজতে গেলে ময়না দ্রুত এগিয়ে এসে বলল, "আপ্নে রাহেন ! আমি দেই |"
"কেন আপা ? আমি করছি তো |"
"না আপা | আমি দেই | আপ্নে ভাইয়েক সাথ নিয়া বইসেন গা | আমি নাস্তা দিয়া আসপানি |"
"আচ্ছা |"
আলিজা আবার ডাইনিং হলে এসে পড়ল | এরিক এসে বসেছে | মাহিরার সঙ্গে কি নিয়ে যেন হেসে হেসে কথা বলছে | আলিজা এসে তাদের সাথে বসল |
এরিক আলিজার হাতের উপর হাতটা রেখে বলল, "আজকে তো খুবই সুন্দর লাগছে তোমাকে লিজ | সুইটহার্ট আজকে কি কোন স্পেশাল দিন ?"
আলিজা হেসে বলল, "আমার জানামতে তো এমন কিছুই নেই আজ |"
"আজকে আমার তোমাকে নিয়ে বেড়াতে যেতে ইচ্ছা করছে |"
"অবশ্যই না এরিক | আকাশের অবস্থা দেখেছো !"
"হুম | অভিমান করে আছে | কিন্তু সত্যি ইচ্ছা করছে ঘুরতে যেতে |"
"আচ্ছা দেখা যাক |"
এরিক আলিজার হাতে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল, "অনেক ধন্যবাদ সুইটহার্ট | এখন বল আজকে ব্রেকফাস্ট কি করবো !"
মাহিরা হা হা করে হেসে বলল, "ভালোবাসার মধ্যেও খাওয়া ?"
এরিক চেয়ারে হেলে বসে বলল, "অবশ্যই মিলেডি ! খাবার জিনিসটাই এমন যে তা সবকিছুর পরিপূরক | আর ভালো খাবার হল অত্যাবশ্যক | এই যেমন আমি ভালোবেসে লিজের হাতে বিশেষ ব্রেকফাস্ট চাই | যেমন মেরাং পাই, স্ট্রবেরি টার্ট, পেনাকটা, সুফলে, স্কচ এগ, হ্যাম স্যান্ডুইচ, ক্যাসাডিলা ! এসব তো ভালোবাসায় ভরপুর | কি সত্যি না ?"
মাহিরা হাসতে লাগল |
আলিজা বলল, "বুঝলে তো এখন ভাবি ! ভালোবাসা মানে ভালোমত উদরপূর্তি |"
এরিক স্ত্রীর দিকে ফিরে বলল, "কি বললে আমাকে ?"
"কেন বলবো কি বললাম ?"
"আচ্ছা ভালো খাবার তো ভালোবাসারই উদাহরণ তাইনা ? এই যেমন তুমি চমৎকার রান্না করো আমার জন্য |"
"আচ্ছা ! আচ্ছা ! থামো এখন |"
ময়না নাশতা এনে রাখতে লাগল টেবিলে |
আলিজা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, "আমি যাই উনাকে সাহায্য করি |"
এরিক পরোটা ছিঁড়ে মুখে দিয়ে বলল, "এ খাবারটা খুবই ভালো লাগে এখন আমার | খুবই মজাদার |"
"আশ্চর্য তুমি এরিক !"
"আরে আশ্চর্যের কি হল ? তুমি যেমন ওই খুব ঝাল আর টক কি যেন একটা অদ্ভুত রাস্তার খাবার খুবই ভালোবাসো এটাও তেমনি আমার ভালো লাগল |"
"এরিক ফুচকা-চটপটি কিন্তু মোটেই অদ্ভুত খাবার না | বরং এগুলোর মত সুস্বাদু খাবার কমই আছে |"
"মেয়েদের পছন্দগুলো মেয়েদের নিজেদের মতোই অদ্ভুত !"
আলিজা আড়চোখে এরিকের দিকে একবার তাকিয়ে মৃদুস্বরে বলল, "একেবারে সঠিক কথা |"
.
.
মাহিরা মামলার নথি পড়ছিলো তখন দরজার সামনে ম্যাডিসনকে দেখে বলল, "ম্যাডিসন ? ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন ? এসো ভেতরে এসো |"
ম্যাডিসন বলল, "আমি ভাবলাম তুমি খুব ব্যস্ত |"
"ব্যস্ত যে থাকিনা তা নয় সোনামনি | আমি প্রায়ই ব্যস্ত থাকি | তবে এই মাসটায় কোন ব্যস্ততা রাখছিনা | আমি এই একটা মাস শুধু আমার আর আমার নক্ষত্রের জন্য রেখেছি |"
"কি নাম বললে ?"
"নক্ষত্র |"
"প্লিজ আমি উচ্চারণ করতে পারছিনা | আমাকে এর বানানটা লিখে দেবে ?''
মাহিরা হাসিমুখে একটা ছোট পোস্ট-ইট নোট নিয়ে তাতে নামটা লিখে দিলো |
ম্যাডিসন কিছুক্ষন দেখে বলল, "নাখখাতরিয়া ! বাহ্ অদ্ভুত সুন্দর নাম | এর মানে কি ?"
"ষ্টার ( তারকা )|"
"বাহ্ ! এত সুন্দর মানে এর ? খুব সুন্দর নাম তোমার সন্তানের |"
"এটা আসলে তোমার মায়ের দেয়া নাম | আমি ওকে বললাম আমার মেয়ের জন্য একটা নাম চাই | তো ও এই নামটা বলল |"
"তুমি কিকরে জানলে তোমার মেয়ে হবে ?"
"আমার মন বলছে |"
"খুবই ভালো হবে |"
ম্যাডিসন কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল, "জানো তোমাকে আমার খুবই ভালো লাগে |"
মাহিরা হেসে বলল, "তাই ? কেন ?"
"তুমি অনেকটা আমার মায়ের মত একজন মানুষ | যে শুধু নিজের নয়, অন্যকে নিয়েও নিজের মত ভাবে | তাদের ভালোমন্দ নিজের ভালোমন্দের মত দেখে | তুমি চাইলে অনেককিছুই হতে পারতে কিন্তু তোমার আপনজনদের তুমি কখনোই ফেলতে পারোনা | তুমি তাদেরকে নিজের অংশ ভাব | যেমনটা আমার মা করে |"
"এতকিছু লক্ষ করেছো আমাকে নিয়ে ! অনেক ধন্যবাদ তোমাকে |"
"ধন্যবাদ তোমাদের প্রাপ্য | আমি তোমাকে আর মাকে দেখে বুঝি যে মেয়েরা আসলে অনেক ক্ষমতাবান | তাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয় | তারা অনেক যোগ্যতা রাখে | যেমনটা তোমরা |"
"মেয়েরা কখনোই দুর্বল না সোনা আমার |" আলিজার কন্ঠ শুনে ম্যাডিসন ফিরে তাকালো |
আলিজা মেয়ের চেয়ারের পিছনে এসে দাঁড়িয়ে দুহাতে মেয়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলল, "মেয়েরা অনেক শক্তিশালী | তারা এতটা শক্তিশালী যে একটা নতুন প্রাণের জন্ম দিতে সক্ষম তারা | তাদেরকে সমাজের গতানুগতিক অসারত্ব দুর্বল করে রাখে শুধু নানান অসুবিধায় জড়িয়ে যাতে সে নিজের ক্ষমতায়, নিজের স্বরূপে না আসতে পারে |"
মাহিরা জানালার বাইরে তাকিয়ে বলল, "ইস ! এরিকের প্ল্যান তো গেল আলিজা |"
আলিজা ঠোঁটটিপে হেসে বলল, "হুম ভাবি | এই দুঃখে কি করে ও এখন দেখা যাক |"
ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে | ম্যাডিসন উঠে দাঁড়িয়ে বলল, "আমি যাই বৃষ্টি দেখব |"
মাহিরা আলিজাকে চেয়ারের দিকে ইশারা করে বলল, "বসো | নাকি তুমিও বৃষ্টি দেখতে বেরুবে ?"
আলিজা বসে বলল, "আরে নাহ ! এখন কি আর সেইসব খেয়ালীপনার বয়স আছে নাকি !"
"তাই নাকি ? তুমি তো দিনকে দিন আরো সুন্দর হচ্ছো !"
আলিজা হা হা করে হেসে ফেলে বলল, "তুমিও দেখছি ভাইয়ার মত কথা বলছ |"
"তোমার ভাইয়া তো মিথ্যা বলেনি | সত্যি আলিজা ! খুব সুন্দর হচ্ছো তুমি |"
"ধ্যাৎ ভাবি !"
"এজন্য এরিক এখন আরো বেশি তোমাকে চায় | ওকে দেখি আমি আর এটাই বুঝি যে ওর কি প্রকার আকর্ষণ তোমার প্রতি |"
"ভাবি ! কি অদ্ভুত কথা বলছ !"
"মোটেই অদ্ভুত না |"
"ভাবি জান ভাইয়া অনেক সুন্দর ছিল দেখতে ?"
মাহিরা মুচকি হেসে বলল, "আমি জানবোনা কেন ? তোমার ভাইটা আমার কে হয় !"
আলিজা হেসে বলল, "আমি এটা বলছিনা যে এখন সে কম সুন্দর | কিন্তু ওর ভার্সিটি লাইফের কথা বলছি | জান আমার সব বান্ধবী ওর জন্য ক্রাশ খেত !"
মাহিরা শব্দকরে হেসে বলল, "তাই ! অবশ্য অসত্য না ! ও আসলেই 'প্রিন্স চার্মিং' ক্যাটাগরির |"
"হুম | ভাবি আমি কিন্তু আমার ভাইয়ের মত এত সুন্দর ছিলাম না কখনোই | মানে ওকে আমার সঙ্গে দেখলে আমার অনেক নাকউঁচু ক্লাসমেটই পিলপিল করে এগিয়ে আসতো ওর সঙ্গে পরিচিত হতে | আর গত পরশু আমার যে বান্ধবীকে দেখলে না রিমি, রিমি রীতিমত পাগলামো করত ভাইয়ার জন্য |"
"ওই বয়সটাই তো পাগলামোর জন্য আলিজা |"
"হুম | তবে আমার ওর পরিণত চেহারাটাই ভালো লাগে সবসময় | অর্থাৎ এই সাতটা বছর |"
"কি কারন এর ?"
"তখন ও অনেক ইমম্যাচুর্ড ছিল | কিন্তু এখন ও অনেক ব্যক্তিত্ববান একজন | আরকি ভাবি জান ? ও সবসময়ই আমার সবচেয়ে কাছের আপনজন |"
মাহিরা সুন্দরকরে হেসে বলল, "সেটা অবশ্যই জানি |"
"আর আমার অভিভাবক বললে আমি যদি কাউকে বুঝি তো সেটা শুধু ও | কারন যখনই একটা পরিবারের দরকার আমার হয়েছে ওই সেই একমাত্র পরিবারটা |"
"ওর কাছে সবসময়ই তুমি আলাদা | তোমার স্থান ওর জন্য সবার চেয়ে ভিন্ন | আমি অন্তত তাই জানি |"
দুজনেই চুপচাপ |
কিছুক্ষন পর মাহিরা নীরবতা ভেঙে বলল, "কিন্তু আইলানের একটা অসন্তোষ কিন্তু সঠিক আলিজা |"
"কি ভাবি ?"
"এরিক এসে ওর একছত্র 'প্রিন্স চার্মিং' ক্রাইটেরিয়া ভেঙে দিয়েছে |"
আলিজা কৌতূহলের সাথে বলল, "কিকরে ?"
"আরে বেপরোয়া কিন্তু যত্নশীল, নিজের মনমর্জির মালিক কিন্তু অন্যের ভালোমন্দে হস্তক্ষেপ করেনা, খেয়ালি কিন্তু করিৎকর্মা, আরামপ্রিয় কিন্তু সচেতন, আত্মমগ্ন কিন্তু খুবই প্রেমময় | আর সবচেয়ে বড় কথা ওই চেহারাটা আর ওই ব্যক্তিত্ব ! খুব আশ্চর্জ্জনক কিন্তু খুবই অসাধারন |"
আলিজা মোটামুটি অবাক হয়ে বলল, "এতগুলো গুন পেলে ওর ?"
"হুম ! কেন তুমি পাওনি ?"
"আমি সেটা সবার আগেই দেখেছি | আর শুধু গুন না দোষ তো আছেই তবে গুণগুলো এমন যা ওর প্রতি আকর্ষণ আর পরে ভালোবাসা তৈরী হতে বাধ্য করেছে আমাকে |"
.
.
মনজুর ঘর থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে যাচ্ছিলেন খাবারের জন্য | তিনি ভেবেছিলেন এদের রান্না কিছুই খাবেন না | নিজেই কিছু একটা রান্না করবেন | কিন্তু যেতে গিয়ে থেমে গেলেন একটা দৃশ্য দেখে |
এরিক মেয়ের সঙ্গে দাবা খেলছে | কি হাসাহাসি করছে দুজনে ! দাবা খেলছে আর কি যেন একটা খাবার খাচ্ছে একসাথে | চিপসের মত দেখতে খাবারটা সামনে রাখা দুটো বাটিতে ডুবিয়ে খাচ্ছে | এরিক মাঝেমাঝে মেয়ের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে | মনজুরকে দেখে মেয়েটা হাসি বন্ধ করে তাকালো | এরিক কি যেন বলল তখন মেয়েটা একবার বাপের দিকে চেয়ে মুখে একটু হাসি এনে আবার মনজুরকে দেখল | মনজুর রান্নাঘরে গিয়েও কিছুই না করে ফিরে এলেন | তিনি বসারঘরে গিয়ে বসলেন | কিন্তু একটুপর আবার উঁকি দিয়ে দেখলেন | এখনও দুজনে কথা বলছে | মনজুর আড়ালে দাঁড়িয়েই কিছুক্ষন আবার লক্ষ করলেন দুজনকে | হঠাৎ এরিক ফিরে তাকালো | মনজুর দ্রুত ফিরে এলেন |
বসারঘরে বসে মনজুর বাপমেয়ের হাসিহাসি চেহারাটা মানে করতে লাগলেন | আলিজা বলল মেয়েটার বয়স পনেরো বছর | কিন্তু দেখে মনে হয়না পনেরো | বাপের মত লম্বা আর বড়সড় গড়ন পেয়েছে | এজন্য গড়নে দেখতে আঠারো-বিশের মত বয়েসী মনে হয় | কিন্তু মুখের আদল শিশুসুলভ | আর কথাবার্তাও কিশোরী মেয়েদের মতোই | এরিক একটা সচেতন বাবার মতই আচরণ করে মেয়ের সাথে কিন্তু অসম্ভব ভালোবাসে মেয়েকে | মেয়েটাও খুবই সহজ স্বাভাবিক বাপের সাথে | হৈচৈ করছে, গল্প করছে, আহ্লাদ করছে আবার বাপকে ভালোও বাসে খুব | কি দারুন একটা সম্পর্ক দুজনের | মুখে যতই এটাসেটা খুঁত বলুক সে তার মাঝেমাঝে দুজনকে দেখতে ভালোই লাগে |
মনজুর আবার একবার ডাইনিং হলে গিয়ে দেখলেন এরিক মেয়ের মাথার চুলগুলো হাতদিয়ে আঁচড়ে বেণী করে দিচ্ছে | মনজুরকে দেখে এবার আর মেয়েটা মুখ শুকনো করলোনা বরং একটু হেসে কি যেন বলতে লাগল বাপকে | মনজুর চেয়ে রইলেন দুজনের দিকে নিজের অজান্তেই | এরিক মেয়ের কানে কানে কিযেন বলল, মেয়েটা মাথা নাড়ল শুধু | এরপর সে উঠে চলে গেল |
এরিক ম্যাডিসন যাবার পর ফ্রিজ থেকে একটা পানির বোতল বের করে নিয়ে একবার শীতলচোখে শুধু তাকালো মনজুরের দিকে | এরপর সে আইলানের ঘরের দিকে চলে গেল | মনজুর অবাকই হলেন | কারন এরিক তার সাথে এমন ব্যবহার কখনও করেনি | কি হল এর ?
এরিক আইলানের ঘরে এসে আইলানের আই-পড টা নিয়ে পাশের ঘরে গেল | এখন সে দৌড়াবে কিছুক্ষন | গত দুদিন দৌড়ানো হয়নি |
.
.
এরিক মেয়ের দিকে চেয়ে বলল, "কি ব্যাপার কাপকেক ? কিছু বলতে চাচ্ছো ?"
ম্যাডিসন বলল, "হ্যা ড্যাডি | তবে তুমি এখন মনেহয় শুনবেনা |"
"অবশ্যই শুনবো সুইটি ! বলো কি ?"
"আগে তোমার দৌড়ানো শেষ হোক |"
এরিক স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বলল, "হানি এখনও অনেকসময় সেটার জন্য | তুমি বলো আমি শুনছি |"
"ড্যাডি তুমি খুবই রাগ উনার উপর তাইনা ?"
এরিক নির্বিকারভাবে বলল, "হ্যা | যদি ও তোমার মায়ের বাবা না হত তো আমার হাতে মার খেত |"
"আচ্ছা তুমি নিজে এত রাগ করেছো কিন্তু আমাকে কেন কিছুই প্রতিক্রিয়া দেখতে দিচ্ছনা |"
"কারন এটা আমাদের ঝগড়া | আর তুমি একটা বাচ্চা | এখানে তাই বড়দের সমস্যায় আমি চাইনা তুমি ক্ষোভ দেখাও |"
"কিন্তু ড্যাডি আমার মাকে নিয়ে ব্যাপারটা | এজন্যই আমি দুঃখিত আর রাগান্বিত |"
"সেটাই স্বাভাবিক সোনা | তবে এখানে আমার তোমাকে বাধা দেবার আরো একটা কারন আছে | সেটা হল তোমার মা চাইবেনা কখনোই যে তুমি তার সঙ্গে অর্থাৎ তোমার মায়ের বাবার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করো |"
"কিন্তু তুমি নিজেই তো আর তার সঙ্গে কথা বলোনা |"
"না | বলি না | আর বোধহয় আর কখনও বলবোও না | কারন সে যে কাজটা করেছে তা খুবই অমানবিক | এমনকিছুর জন্য লিজ চাইল তাকে মাফ করলেও করতে পারে | কিন্তু আমি পারবোনা তাকে মাফ করতে |"
"তাহলে আমাকে কেন ভালো ব্যবহার করতে বলছো ওর সাথে ? আমারও খুব রাগ লাগছে কেননা সে আমার মায়ের সঙ্গে অন্যায় করেছে |"
"হ্যা | কিন্তু আমার আর তোমার ব্যাপারটা ভিন্ন | আমি তার মেয়ের স্বামী সেজন্য সে যদি তার মেয়েকে অপমান করে তো আমার এখানে রাগ হবার সরাসরি অধিকার আছে | কিন্তু তুমি মেয়ের মেয়ে | তাই তুমি চাইলেই রাগ হতে পারোনা | এমনকি এইব বড় হলে সেও পারতনা | কারন যদি ঝগড়াটা সরাসরি লিজের সাথেসাথে তোমার সঙ্গেও হত তো তোমার রাগ করাটা সঠিক হত | কিন্তু তা হয়নি | সেজন্যই মায়ের হয়ে তুমি দুর্ব্যবহার করোনা | আর ম্যাডি তুমি যথেস্টই বুদ্ধিমান | সে তোমাকে অনাত্মীয় মনে করে | তাই চুপ থাকবে তুমি |"
"সেটা আমিও জানি ড্যাডি যে সে আমাকে নিজেদের কেউ ভাবেনা |"
"তাতে তোমার দুঃখ পাবার কিছুই নেই | দেখছোই তো ! সে নিজের সন্তানদেরই নিজের ভাবেনা |"
"হুম |"
ম্যাডিসন হঠাৎ হেসে ফেলে বলল, "ড্যাডি সত্যিই এতে দুঃখিত হবার কিছু নেই আমার | কেননা আমার মা খুব ভালোবাসে আমাকে | আর মা একটা কথা বলেছে "অন্যকেউ কে আমাদেরকে ভালোবাসলো তা গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারন যতক্ষণ আমাদের কাছের মানুষগুলো আমাদেরকে ভালোবাসে ততক্ষন কারোর অবজ্ঞায় কিছুই যায় আসে না |'' তো বুঝলেই তো ড্যাডি ব্যাপারটা তুচ্ছ আমার কাছে | তুমি, মা, গ্র্যান্ড পা, এইব, ফিনিক্স, হলোইন আমাকে অনেক ভালোবাসে | সেজন্যই অন্যদের কথা গুরুত্বপূর্ণ না |"
এরিক হেসে বলল, "হুম | দেখেছো তো একটু ভেবে খতিয়ে দেখলেই অনেককিছুই সহজ হয়ে আসে | ওকে কাপকেক আমি এখন স্পিড পিক করবো | পরে আবার কথা হবে |"
"আচ্ছা ড্যাডি ! হ্যাপি রানিং |"
ম্যাডিসন চলে গেল |
.
.
মাহিরা আলিজার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, "তুমি জানো তুমি যাবার পর কিছুদিন আইলান খুবই অস্বাভাবিক আচরণ করে ?"
"আন্দাজ করতে পারি কিছুটা ভাবি |"
"সত্যিই | খাওয়াদাওয়া কম হয়ে যায়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, কেমন অন্যমনস্ক থাকে | আর প্রায়ই ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় বসে থাকে |"
"ওমা ! এত রীতিমত ছিটবায়ু ! কিছু বলো না তুমি?"
"কি বলব বলো ! আর বললেও লাভ নেই | কারন মাসখানেক এমনই করে | এজন্যই এবার খুবই ভাবনা হচ্ছে আমার যে এবার নাজানি ও করবেটা কি ! কারন এরকম হাসিখুশি ফুর্তি আর উচ্ছল সময় কাটিয়েছে তোমার সঙ্গে | তুমি যাবার পর সত্যিই অনেকদিন কষ্ট পাবে ও |"
আলিজা একটু মলিন হেসে বলল, "ভাবি আমি কি স্বস্তিতে থাকি ফিরে যাবার পর ? কয়েকটা দিন যে কেমন কাটে তার কোন বর্ণনার ভাষা নেই আমার | কিন্তু মেয়েদের নিয়ম এটা | সহজ স্বাভাবিকভাবে ঘরের সব সামলে যেতে হয় | কারন কাঁদলে মন হালকা হয়না তখন আমার বরং আরো যন্ত্রনা হয় |"
"আচ্ছা আলিজা এখান থেকে যাবার পর তোমার শুধুই কি আইলানের কথা মনে পড়ে ? আর কাউকে মনে পড়ে না ?"
আলিজা মাহিরের দিকে ফিরে বলল, "কি মনে হয় ?"
"আরে আমার কথা বলছিনা |"
আলিজা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, "বুঝেছি কার কথা বলছ | উত্তর হল, না | তেমন একটা মনে হয়না বাবার কথা |"
"কেন আলিজা ?"
"কারন বারবার তাকে মনে পড়ার মত সম্পর্ক আর সখ্যতা আমার আর বাবার কখনোই ছিলোনা ভাবি |"
"কখনোই না ?"
"না | ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে তার সন্তানদের দূরত্ব ছিল অনেক বেশি | সে আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলত শুধু পড়াশোনা নিয়ে, পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে | তার ছিল শুধুই তুলনা | এর মেয়ে ফার্স্ট হয়, অমুকের ছেলে বৃত্তি পায়, অমুকের ছেলেমেয়েদের কোন কোচিং, প্রাইভেট টিউটর লাগেনা এসবই ছিল তার কথাবার্তা আমাদের সাথে | ভাইয়া আর আমি দুজনেই খুব কম প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়েছি | কারন পড়তে চাইলেই সে হাজারটা উদাহরণ আনতো | এমনকি মেট্রিক আর ইন্টারেও আমি জীববিজ্ঞান আর রসায়নের জন্য কোন শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়িনি |"
"পড়তে না কেন ? আমি জানি অনার্স লেভেলে দরকার হয়না কখনোই | তবে ইন্টারমিডিয়েটে একটু হেল্প তো লাগে | এমনকি ইউকেতে থেকেও আমার লেগেছে |"
"একেবারেই পড়িনি তা সত্যি না | রসায়ন কিছুদিন পড়ে দেখলাম ম্যাডাম কিছু ছাত্রীকে আলাদা দেখেন আর সেসব মেয়েরা আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করত | এটা ম্যাডামকে বললে উনি এর কোন বিহিত করেননি | সালমা বলে একটা মেয়ে অতিরিক্ত সিরিয়াসনেস দেখাতো | একদিন সে আমাকে 'এই চুপ' বলে ধমক দেয়ায় আমি ক্ষেপে উঠি | ওর সাথে আমার তর্ক লেগে যায় | এরপর আমি পড়া ছেড়ে দেই | জীববিজ্ঞান শিক্ষক পরপর কয়েকদিন তার পছন্দের ছাত্রীদের সামনে আমাকে ও আমার দুজন বান্ধবীকে খুব অপমান করত | আমাদের প্রতি তার ভাষাই ছিল ল্যাভেন্ডিস, স্টুপিড, গাধা, আবাল এসব ! এসব উনি উনার একটা খুব পছন্দের ছাত্রী ছিল নাসরিন তার সামনে বেশি করত | একদিন আমি স্যারকে বললাম 'আপনি এসব কেন বলেন আমাদেরকে ?' এতে সে খুব ক্ষেপে গেল আর অসম্ভব দুর্ব্যবহার করল | স্যারের হয়ে স্যারের ছাত্রী আমাদের সাথে ঝগড়া করল অনেক | আমি কেঁদে ফেলেছিলাম প্রায় এই অপমানে | স্যারের কোন ভ্রুক্ষেপই হয়নি ! আমি পরদিন গেলাম আর আমাকে দেখেই নাসরিন বলল 'অসভ্যগুলা আবার আসছে |' আমি কোন কথাই তখন বললাম না | স্যার আসার পর সেও একইরকম ব্যবহার করল | স্যার পড়া শুরু করার সাথেসাথেই আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম 'স্যার একটা কথা ছিল |' স্যারের বদলে নাসরিন বলল, 'আশ্চর্য তোমরা ! এমুন কেন করতেসো ! তোমাদের জন্য আমরা পড়তে পারতেসি না |' আমি ওকে বললাম 'আজকে থেকে যত ইচ্ছা পড়ো |' আমি স্যারের টেবিলে যেয়ে বেতনটা রেখে বললাম, 'স্যার আপনার এ মাসের বেতনটা | আমি আর আপনার কাছে পড়বোনা |' আমি মাত্র তিনদিন পড়ে পুরো মাসের বেতন দিয়ে চলে এসেছিলাম | স্যার আমার খাতা দেখে টেস্ট পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান দ্বিতীয়পত্রে গুনে গুনে ৩৬ দিয়েছিল | এর কারন ইচ্ছামত নম্বর কেটেও সে ফেল করাতে পারেনি আমাকে | আর নাসরিন সবসময়কার মত ৮০+ !"
"ইন্টারেস্টিং ! এরপর ?"
"এরপর আর কি বোর্ড এক্সামে আমি জীববিজ্ঞানে আর অন্যান্য গুলোতে এপ্লাস পেলাম কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানে আর হাইয়ার ম্যাথে এ-গ্রেড পেলাম বলে বলে আমি পরীক্ষায় এগ্রেড পেলাম | স্যার তো খুব খুশি নাসরিন এপ্লাস পেয়েছে | আর আমি পাইনি | স্যার বারবার বললেন তার ভবিষ্যৎবাণী ফলে গিয়েছে আর আমি খারাপ ছাত্রী বলেই আমার রেজাল্ট এমন হল | কিন্তু মজার ব্যাপার হল স্যারের একজন এপ্লাসও ভার্সিটির পরীক্ষায় টিকলোনা | আমি ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে পরে কলেজে দেখা করতে গিয়েছিলাম | স্যার নিজেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েননি | উনি শরীয়তপুরের কোন এক কলেজ থেকে প্রাণিবিদ্যায় পাশ করে একটা বেসরকারি কলেজে পড়ান | এজন্যই এই হারে উনি ক্ষেপেই গেলেন কিছুটা | আমাকে সব শিক্ষকদের সামনেই বললেন 'পড়াশুনা করবা বুঝছো ! ঠিকমত পড়বা ! তুমি তো একেবারেই পড়াশুনা করোনা !' আমি স্যারকে বললাম 'স্যার আজকে নাসরিনের সাথে দেখা হল | ও পুরোনোঢাকার একটা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ভর্তি হয়েছে | আশ্চর্য তাইনা স্যার ! আমরা তো নিশ্চিতই ছিলাম যে ও মেডিকেলে পড়বে যেহেতু এতভালো রেজাল্ট |' একজন ম্যাডাম আমাদের এলাকাতেই থাকতেন আর তার ছেলে ভাইয়ার ডিপার্টমেন্টে পড়ত বলে তিনি জানতেন যে আমি মেডিকেলেও টিকেছিলাম | উনি জিজ্ঞাসা করলেন 'তুমি ভর্তি কেন হলেনা মেডিক্যালে ? কি সমস্যা ?' আমি বললাম 'আমার ভাইয়া বরিশালে যেতে দেবে না |' 'ওহ ! কিন্তু গেলেই হত |' 'দেবেনা ম্যাডাম | ভাইয়া একেবারেই রাজিনা |' স্যার তখনই বলল 'আরে টিকলে তো ভর্তি হবে | এটা তো ঝরে বক মরে গেসে ! মেডিক্যাল কি এত সহজ নাকি !' সেই ম্যাডাম বললেন 'ও টিকেছে স্যার ! আমার মেয়ের সাথে একসাথে পরীক্ষা দিয়েছিল | আমার মেয়ে টিকেনি ও টিকেছে | আর আমার মেয়েটা ভার্সিটিতেও পায়নি | আর ওকে দ্যাখেন ! পেয়েছোতো বটেই তাও মাইক্রোবায়োলোজিতে | আসলেই মেধা আছে |' স্যারের মুখটা ছুঁচোর মত হয়ে গেল তখনই | আসলে ভাবি সেদিনই আমি জানলাম একটা ব্যাপার তা হল ''যোগ্যতাহীন যারা তারাই যোগ্যতাসমন্ন মানুষের দিকে আঙ্গুল তোলে আর তাদেরকে বারবার বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে | নিজের হীনতাকে ঢাকতে অন্যের চমৎকারিত্বকে মানুষ ত্রুটি মনে করে |" স্যার যেমন নিজে যা পারেননি তা তার সবচেয়ে অপছন্দের ছাত্রী করেছে সেটা মানতেও তার অহমে লাগে |"
"দারুন গল্প তো ! আচ্ছা পরে ওই মেয়েগুলোর সঙ্গে দেখা হয়েছিল ?"
"হ্যা | আমি যেদিন সার্টিফিকেট আনতে যাই সেদিন ওরাও গিয়েছিল | আর স্বভাবসুলভ তামশা করছিল | আমি সার্টিফিকেটটা সংগ্রহ করে ওদের সবকয়টাকে একসাথে বললাম 'এখনও ওরকমই আছো তাইনা ? তোমাদের সমস্যা হল তোমরা ধরেই নিয়েছো যা পাবার যা করবার আজই সব করা যাবে পাওয়া যাবে | একটা জিনিস তোমাদের মনে থাকেনা সেটা হল আজকের দিনটা ফুরালে সেটা গতকাল হয়ে যায় | তোমরা এত নকশা এত তামশা করতে ক্লাসে আর প্রাইভেট পড়তে গিয়ে | এমন ভাবটা করতে যেন পুরোটা জীবন ওই পড়ার উপর নির্ভর করে | কিন্তু ওই প্রাইভেট টিউটরের পড়া ছাড়াও অনেককিছুই জানার আছে আর এই কলেজের বাইরেও জীবন আছে | এই দুবছর জীবনের অংশ কিন্তু এটাই জীবন না | তোমরা সবসময় এরকম টানাপোড়ন করে পড়াপোড়া করে জীবন কাটাবে কিন্তু শেষের হিসাব তোমাদের সবসময় শুভঙ্করের ফাঁকি |" এই বলে আমি ওদের কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে আসি |"
মাহিরা হেসে বলল, "কিছু শিক্ষক হয় খুবই দারুন আবার কেউ কেউ হয় এরকম চামার |"
"সেতো একেবারেই ঠিক ভাবি | কিছু শিক্ষক জীবন গড়ে দেয় | যেমন চৌধুরী স্যার না থাকলে আমার জীবনে আমি অন্তত এই আজকের আমি হতাম না |"
"হুম | আচ্ছা আলিজা তুমি মাস্টার্স শেষ করে একবারের জন্যও দেশে এলেনা কেন ?"
"কারন নিষেধ করা হয়েছিল |"
"মানে ? কিসের নিষেধ ?"
"তখন আমি কোন চাকরিবাকরি পাইনি আর তেমন কোন অর্থসঞ্চয়ও ছিলোনা আমার | আর বিয়েও হয়নি | এজন্য বাবা দেশে ফিরতে নিষেধ করে দিয়েছিল |"
মাহিরা হতবিস্মিত হয়ে বলল, "বলো কি ?"
"যা শুনলেন |"
"এরকম........কিকরে করলেন এমনটা ?"
"বাবার তখন এই লজ্জা রাখার জায়গা ছিলোনা যে তার সাতাশবছর বয়েসী, অবিবাহিত আর সবচেয়ে বড় কথা বেকার একটা মেয়ে দেশে ফিরবে খুব সামান্য সঞ্চয় নিয়ে | এই লজ্জায় তার মাথা হেট হয়ে যাচ্ছিলো |"
মাহিরার চোখে পানি চলে এলো | সে বলল, "এজন্যই কি আইলান বারবার একথা বলে যে তোমার সাথে খুব বড় নির্দয়তা করেছে উনি ? এজন্যই ?"
আলিজা কিছু বললনা আর এ নিয়ে | সে ব্রেইন কাটলেটের ব্যাটারটা বানিয়ে একপাশে রেখে বলল, "ভাবি দেখলেন তো এখন কিভাবে হবে এটা | এবার এই সিদ্ধকরা মগজগুলোকে ছোটছোট টুকরোকরে আলতোকরে পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ আর অন্যান্য মসলা দিয়ে মেখে এরকম করে গোল চ্যাপ্টা চাপের আকার করে ডোতে ডুবিয়ে ধীমে আঁচে ভাজবেন বাদামি করে |"
মাহিরা বিস্মিত হয়ে আলিজাকে দেখছে | আলিজা নেড়েচেড়ে ব্রেইন কাটলেটটা তুলে একটা পিরিচে নিয়ে চামচ দিয়ে মাহিরার হাতে দিল | মাহিরা চুপচাপ প্লেটটা হাতে নিলো |
আলিজা বলল, "ভাবি এখন চলুন ঘরে যাই | বাবা বোধহয় রান্নাঘরে কিছু রান্না করবে | চলুন |"
মাহিরা কোনরকমে বলল, "কোথায় বাবা ?"
"দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষন | চলুন বের হই |"

আলিজা মেয়ের ঘরে গিয়ে বিস্মিত হয়ে দেখতে লাগল | ম্যাডিসন একগাদা জিনিসপত্র প্যাকেট করছে |
আলিজা সামনে এসে দাঁড়িয়ে হেসে ফেলে বলল, "সোনা এসব কি করছো তুমি ?"
ম্যাডিসন ফিক করে হেসে ফেলে বলল, "মা এসব নিয়ে যাবো আমি |"
"এই এতগুলো মাটির পুতুল, ফুলদানি, বাঁশবেতের জিনিস তুমি আমেরিকায় সাথে নিয়ে যাবে ?"
"না মা | আমি এগুলোকে শিপিং করে দেব কাল | আংকেল এলান ব্যবস্থা করে দিয়েছে সব | কাল সব লোকজন এসে এগুলো নিয়ে যাবে | আমি এখন প্যাকেট করে তালিকা করছি | আমরা পৌঁছানোর পরপরই এগুলো পেয়ে যাবো |"
"পাগল মেয়ে ! এসব দিয়ে কি করবে মামনি ?"
"এতসুন্দর জিনিসগুলো ! সব সাথে নিয়ে যেতে ইচ্ছা হয় | আর মা আমি সত্যিই ভাবিনি এখানকার হস্তশিল্প এতো সুন্দর !"
"সেটা অবশ্যই সত্যি | এদেশের কর্মীদের হাতে জাদু আছে |"
ম্যাডিসন একটা কাঠের খোদাইকরা দেয়ালঘড়ি তুলে ধরে বলল, "দ্যাখো মা | কি সুন্দর না ?"
"হুম | খুব সুন্দর |"
"আচ্ছা তুমিও তো অনেককিছুই কিনেছো | ওগুলো কি করবে ?"
"নিয়ে যাবো কিছু |"
"আর বাকিগুলো ?"
"ওগুলো কি আর নেয়া যাবে মামনি ! এতসব কি নেয়া যায় ! সোনা বিদেশে থাকার এটাই সবচেয়ে বড় কষ্ট | চাইলেই দেশের ভেজা মাটি আর সতেজ বাতাসটা পাওয়া যায় না | পরতে পরতে দেশের গান গাইতে থাকা এই সূক্ষ্ম জিনিসগুলো হাতবাড়ালেই পাওয়া যায়না | দেশকে মনে অনুভব করা যায় কিন্তু হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায় না |"
"মা ?"
"কি সুইটি ?"
"তুমি খুব কষ্ট পাবে দেশ ছেড়ে গেলে তাইনা ?"
"হুম | সেটাই তো স্বাভাবিক মা | "
"মা আমি তোমার জন্য একটা কাজ করবো এবার |"
"কি সোনা ?"
"তোমার সব পছন্দের জিনিসগুলো নিয়ে যাবো সাথে যাতে যতটা সম্ভব কম কষ্ট পাও তুমি |"
আলিজা হেসে ফেলল মেয়ের কথা শুনে |
.
.
.
রাতে মেয়ের ঘরে ঢুকতে গিয়ে আইলান প্রায় হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছিলো | সারাঘরে রংপেন্সিল আর ক্রেয়ন |
আইলান সব তুলে সরিয়ে রেখে বলল, "মা কি করছো এসব ? এভাবে ঘর নোংরা কেন করেছো মা ?"
কথা বাপকে দেখে খি খি করে হেসে বলল, "ছবি আঁকছি বাবা | এই দ্যাখো !"
সে অতি আগ্রহে একটা হিবিজিবি ধরনের ঘরবাড়ির ছবি আইলানকে দেখাতে লাগল |
এরপর সে আরেকটা ছবি এনে বাপকে দেখিয়ে বলল, "দ্যাখো বাবা এটা কত সুন্দর হয়েছে ! জানো এভাবে রং মিলাতে কে শিখিয়েছে ? আজকে ফুপুমনি শিখিয়ে দিয়েছে |"
"বাব্বাহ ! আজকে তো অনেক ব্যস্ত দিন কাটিয়েছো মা তুমি | অনেককিছু শিখলে !"
"হ্যা বাবা | বাবা জানো ফুপুমনি বলেছে আমাকে জলরং কিনে দিবে যাবার আগে | জলরঙে কি হয় জানো ?"
আইলান মেয়ের আগ্রহের জন্য জিজ্ঞাসা করল, "কি হয় তাতো জানিনা মা !"
"ধুর বোকা বাবা ! তুমি কিছুই জানোনা |"
"আচ্ছা তুমিই বলো মা |"
"জলরং হল পানিতে গুলে রং করে | জানো বাবা আমাদের দেশের অনেক বড়বড় পেইন্টার জলরঙে ছবি করে | সারা পৃথিবীতে আমরা সেরা ! কি দারুন না বাবা !"
"অবশ্যই দারুন মা | আচ্ছা আর কি বলেছে ফুপুমনি ?"
কথা চিন্তা করতে করতে বলল, "উমম........... হ্যা আরো বলেছে জলরং আমাদের মত কেউ পারেনা | জলরং আঁকতে কিন্তু তুলি লাগে জানো তুমি ?"
আইলান ঠোঁটটিপে হেসে বলল, "না মা | জানিনা আমি |"
"আমি জানি | জলরং দিয়ে তুলির টানে ছবি হয় | ঐযে লিভিংরুমে আছে না দুটো ছবি ওগুলো জলরঙে ছবি |"
আইলান অবাক বিস্ময়ে মেয়ের মুগ্ধতা দেখতে লাগল | কথা উচ্ছলভাবে হরগর করে তার নতুন আগ্রহ নিয়ে বকবক করে যাচ্ছে | আইলানকেও মেয়ের সাথে বসে তার ছবি আঁকা দেখতে হল |
.
.
রাতে খেতে আইলান বোনকে বলল, "ভালো জিনিসের সন্ধান পেয়েছিস তো তুই !"
আলিজা একটু হেসে বলল, "তাই নাকি !"
"তাইতো দেখছি | আমার মেয়ের তো খুবই আগ্রহ এর প্রতি |"
"সেটা দেখেই তো বললাম |"
"সেই তো বলছি | ওর প্রচন্ড আগ্রহ তৈরী হয়েছে |"
"ওটা ওর আগ্রহ নয় ভাইয়া, ইচ্ছা বলতে পারিস | আমি ব্যাপারটা লক্ষ করেই বললাম | এসে পরেই দেখেছি ও এটা করতে চায় | ভাইয়া একটা অনুরোধ করবো ?"
"ওমা ! তোর আবার অনুরোধের কি হল ! বল কি বলবি ?"
"ভাইয়া ওর আগ্রহটা নষ্ট করিস না | আমি পারিনি কিন্তু ও যেন তা পারে করতে |"
আইলান আশ্বাসের হাসি দিল একটা, বলল, "মনটা অনেক বড় থাকলেই মানুষ তোর মত হয় | আমি ওর ইচ্ছা পূরণ করবোরে লক্ষ্মী | ও যদি পেইন্টার হতে চায় তো ও তাই হবে |"
মনজুর তখনই মেয়ের দিকে চেয়ে বললেন, "এসব আজেবাজে জিনিস নিয়ে মাতামাতি করিস না | এসব ফালতু চিন্তা বাদ দে |"
আইলান কথা বলতে গেল কিন্তু আলিজা তাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে বলল, "তুই কথা বলিস না ভাইয়া | আমি বলি |"
মনজুর রুক্ষভাবে বলল, "তোর এখানে কিছুই বলার নেই | নিজে তো কোনদিনই কিছু করতে পারিসনি | এখন ওর মাথা নষ্ট করতে হবে না তোকে |"
"আচ্ছা ! মেনে নিলাম আমি আমার জীবনে কিছুই করিনি কিন্তু আমি যা করতে পারিনি তা ও কেন করতে পারবেনা ?"
"এটা ফালতু আর মূল্যহীন | তুই তোর মত ওকে নষ্ট করবিনা |"
এরিক চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, "লিজ ঘরে চলো | আমরা পরে খেতে বসবো | ড্যাড, ম্যাডি ওঠো তোমরা |"
আলিজা এরিকের দিকে চেয়ে বলল, "উঠছি | আর কথা দিচ্ছি এই ছয়দিন যে আছি এই প্রতিদিনই আমরা পরে খেতে বসবো | কিন্তু এখন কিছু কথা বলেই তবে যাবো |"
আইলান বাপের দিকে চেয়ে বলল, "কাজটা না করলে কি তোমার হত না ? কেন এমন করলে ? প্রত্যেকটা সময় একটা সুন্দর মুহূর্ত নষ্ট না করলে কি তুমি শান্তি পাওনা ?"
"যেটা সঠিক আমি সেটাই বলেছি | ও এখন পড়াশুনা করবে | বড় হয়ে ভাল কোন বিষয়ে পড়ে ভালো জায়গায় চাকরি করবে | তখন বুঝবি আমি কি বলছি !"
আলিজা বসে পড়ে বলল, "বাবা একটা প্রশ্নের উত্তর চাই | ছবি আঁকা, ভাস্কর্য গড়া, হস্তশিল্প এগুলো তোমার কাছে ফালতু কেন মনে হয় ?"
মনজুর দুহাত আড়াআড়ি করে বুকের উপর রেখে বসে বললেন, "এগুলো আমার কাছে সবসময়ই মূল্যহীন | যা কোন কাজে দেবে না তার কোন মূল্য নেই আমার কাছে |"
"আচ্ছা ? এসব মূল্যহীন ? ঠিক আছে ! এখন আমি যে প্রশ্নগুলো করব তার উত্তর তোমাকে দিতে হবে |"
"তোর কোন আজিরা কথার জবাব নাই আমার কাছে |"
আলিজা স্পষ্ট জোরগলায় বলল, "দিতে হবে তোমাকে জবাব |"
মনজুর একটু অবাকই হলেন | আলিজা বলল, "বাবা ষাটের দশক থেকে নিয়ে বর্তমান পর্যন্ত বাংলাদেশের খুব প্রসিদ্ধ কিছু ধনীদের নাম আর তাদের কৃতিত্বগুলো বলো | মানে তারা কেন বিখ্যাত তা বলো |"
মনজুর বেশ কিছুক্ষন চিন্তাভাবনা করে কয়েকজনের নাম বললেন |
আলিজা বলল, "এরা নব্বই দশক থেকে বর্তমান পর্যন্ত ব্যক্তিরা | এখন এর আগের সময়ের গুলো বলো |"
মনজুর অনেক চিন্তা করেও কিছুই বলতে পারলেন না |
আলিজা বলল, "বাবা তুমি জয়নুল আবেদীনের নাম জানো নিশ্চই ?"
মনজুর ভুরু কুঁচকে বলল, "দুপাতা পড়ে নিজেকে এতো বিদ্বান ভাবিস কেন ? আমি জয়নুল আবেদীনকে চিনবোনা ? কি বলিস !"
"আচ্ছা | কামরুল হাসান ?"
"হ্যা চিনি |"
"এস এম সুলতান ?"
"ওতো নামি আর্টিস্ট |"
"সাইফুদ্দিন আহমেদ ?"
"ওরও নাম শুনেছি | হয়তো চিনি |"
"আহমেদ সাহাবুদ্দিন ?"
"নামটা যেন কোথায় পড়েছি |"
"মোস্তফা মনোয়ার ?''
"আরে হ্যা হ্যা চিনি |"
"শিশির ভট্টাচার্য ?"
"কার্টুন আঁকে যে ? চিনবোনা কেন ?"
"রফিকুন্নবী ?"
"ধ্যুত ! কি পাগলের মত কথা বলিস ? ওকে আবার কে না জানে !"
আলিজা একপেশে হেসে বলল, "কি আশ্চৰ্য ব্যাপার না বাবা এটা ?"
"কি ?"
"তুমি হাতেগোনা কয়েকজন মাত্র ধনীলোকের নাম বলতে পারলে | কিন্তু তারা কেন বিখ্যাত তা মাত্র দুজনেরটা জানো | অথচ পঞ্চাশ দশক থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত আমার উল্লেখ করা সবগুলো নামি চিত্রশিল্পীকে তুমি চিনলে | এমনটা কেন হল বাবা ?"
"তোরা তো বুঝিস বেশি এজন্য এই অবস্থা | আল্লাহতায়ালা সবাইকে সমান জ্ঞান দেয়নি | তোরা যদি এটা বুঝতি তো হতোই | তোরা হলি বেশি চালাক |"
"আমি চালাক কি বোকা কি মহাগাধা তা কিন্তু জানতে চাইনি বাবা | শুধু এই জানতে চেয়েছি যে যেই টাকাকে আর অর্থকে তুমি সবথেকে মূল্যবান ভাব সেই অর্থবানদেরকে তুমি চেনোনা কেন ?"
মনজুর একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন |
আলিজা বলল, "মিশরের এত প্রাচীন সভ্যতার সাক্ষর বহন করছে ওদের শিল্প | পিরামিড তৈরী করেছে ফারাওরা কিন্তু ওরাও এটা জানতে পেরেছিল বলেই করেছিল | ওরা বুঝতে পেরেছিল যে জগতে চিহ্ন রেখে যেতে হলে রেখে যেতে হবে কীর্তি | তাই ওরা এত এত ভাস্কর্য, ক্রিপ্টোগ্রাফি, হায়রোগ্রিফিক্স তৈরী করেছিল | ওরা যদি এই পড়ে পড়ে ফাস্ট হবে, এরপর এপ্লাস পেতে হবে আর এরপর ভালো বিষয়ে পড়ে পাশ করে চাকরি করত তো এই হাজার বছরের পুরোনো সভ্যতা তৈরী হতনা ! সুমরুরা পাথরে খোদাই করে তাদের মহান সভ্যতা রেখে গিয়েছে | পুমাপুংকু আর টিওটিএকন-দের জ্যামিতিক ভাস্কর ওদের সভ্যতার উৎকর্ষতা বুঝিয়ে দেয় |"
মনজুর চুপ করে রইলেন |
আলিজা বলল, "কোন একটা সভ্যতা কতটা সমৃদ্ধ ছিল তা এ দেখেই নির্ধারিত করা হয় যে সে সভ্যতার শিল্পকলা কতটা উৎকৃষ্ট | শিল্প সবসময় সমাজের দর্পন | এই জিনিস সমাজের ছবি তুলে ধরে | যখন হাজারো গবেষনা চলছিল যে পম্পেই নগর ধ্বংশ হবার আগে কেমন ছিল তাদের জীবনযাত্রা তখন এর জবাব পাওয়া গিয়েছিল মাটি খোদাই করে পাওয়া তাদের 'ইরোটিক আর্ট'-এ | ওদের সমাজ কতটা কলুষিত ছিল এটাও জানা গিয়েছিল ওই আর্ট থেকেই | দুর্ভিক্ষের বর্ননায় এখনও জয়নুল আবেদীনের ছবি দেখি আমরা | বাংলার প্রকৃতিকে দেখি কামরুল হাসানের তুলির টানে | গ্রামের মাটির ঘ্রান পাওয়া যায় এস এম সুলতানের ক্যানভাসে | এখন বলো এগুলো মূল্যহীন ?"
মনজুরের মুখে কথা যোগালো না |
আলিজা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, "ভাইয়া খেয়ে না তোরা | আর দোহাই লাগে আমার না খেয়ে উঠবিনা তোরা | আমরা পরে খাবো |"
আলিজা এরিককে আর বাকি সবাইকে নিয়ে চলে গেল |
আইলান কোন কথা না বলে খাওয়া শেষ করল | মনজুরের খাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল আগেই তাও সে বসেছিল |
আইলান উঠে দাঁড়াতে সে বলল, "দ্যাখ এখন তো বুঝবিনা তোরা কিন্তু পরে যখন টের পাবি তখন বলবি | ব্যাপারটা হল এই প্রথম থেকে ওরে............"
আইলান বাপকে কথা শেষ না করতে দিয়েই বলল, "বাবা প্লিজ ! দোহাই লাগে তোমার | এখন তুমি তোমার কোন উদ্ভট যুক্তি আমাকে শোনাবেনা | তোমার সব কথাই অথর্ব | দুচোখ কানা, দুকান কালা আর মুখ সেলাই করা যুক্তি সব | আমার মেয়ের বয়স মাত্র ছয় | অথচ এখনই আমি দেখি তুমি প্রায়ই ওর সাথে এর তার তুলনা দাও |"
মনজুর থতমত খেয়ে বলল, "কই ? কখন ?"
"আমি দেখেছি বাবা | সেদিন তুমি ওকে তোমার বন্ধু আকমলের নাতির সাথে তুলনা করে বলছিলে 'ওর মত হবি বুজছিস ওর মত হবি ! এরকম ভালোকরে পড়লে তবে জীবনে কিছু হতে পারবি |' এসব কি বাবা ?"
মনজুর হাসার চেষ্টা করে বললেন, "ঐটা বাচ্চাদের বলতে হয় | ওদের মনে জিদ তৈরী না করলে ওরা শিখবে কেমন করে ?"
"ওহ ঐরকম বলতে হয় ? যেমনটা তুমি আর মা আমাদের দুই ভাইবোনকে সবসময় বলতে ? তোমাদের মুখের ভাষাই ছিল 'ওদের মত হতে পারিস না !' আর আলিজাকে তো আরো খারাপ কথা বলতে | ওকে কথায় কথায় বলতে "অমুকের পা ধুয়ে পানি খা !" নইলে "ওর মেয়েকে দেখেছিস, ওর পায়ের নখের যোগ্যতা তোর নেই !" ছি ছি ছি !"
মনজুর এবার কোনরকমে বললেন, "ঐটা তো বাপমায়েরা বলেই ! ওটা বলার কারন কি ? বলে যাতে মনে জিদ তৈরী হয় |"
"হ্যা ঠিকই বলেছো ! আর জিদের সাথে ঘেন্নাও তৈরী হয় |"
আইলান স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল, "মাহি ওঠো | যাও ঘরে গিয়ে বিশ্রাম করো গিয়ে | আমি কথাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আসবো |"
মাহিরা উঠে চলে গেল ঘরে ধীরে ধীরে |
মনজুর বললেন, "এখন ভুল যদি বুঝিস তোরা তো কি বলার আছে !"
আইলান আক্ষেপের সাথে বলল, "বাবা ভুল বুঝছিনা | এই এখন ঠিক একেবারে সঠিক বুঝছি তোমাকে | বাবা যা করলে না তুমি এই কয়েকদিনে !"
"আমি কি করলাম |"
"মনে করে দ্যাখো কি করলে ! বাবা ও আসার পর তুমি যেমন ব্যবহার করেছিলে ওর সাথে আমার খুব আনন্দ হত তখন | ইস ! যা হয়নি কখনও তা হচ্ছে এখন | কখনও তুমি ভালো ব্যবহার করতেনা সেটা করছো এখন | একটা আলাদা খুশি লাগছিলো | এরপর কিছুদিন গেল আর আবার তুমি যেইকে সেই হয়ে গেলে ! কথায় কথায় দুর্ব্যবহার, অভদ্র কথাবার্তা, রাগারাগি, তাচ্ছিল্য, অপমান করা সব ফিরে আসলো | তুমি প্রথমে যা করছিলে সেটা হল অভিনয় | আর এখন যা করছো এটা হলে সত্যিকারের তুমি |"
আইলান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, "দশবছর আগে আমাদের কারণেই চলে গিয়েছিল মনের কষ্টে | কারন আমরা ওকে ওর প্রাপ্য আদর, মায়া, ভালোবাসা কিছুই দেইনি | এরপর তিনবছর পর এলো তখনও ওকে ভয়ংকর কষ্ট দিয়েছো | ওর সাথে তুমি আর মা যে ব্যবহার করতে এরপর ওর জায়গায় অন্যকেউ হলে কোনদিন ফিরেও তাকাতোনা তোমাদের দিকে | অথচ মায়ের অসুখ শুনে এসে পড়েছিল | আসার সাথেসাথে তুমি ওকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলে মার সেবায় | প্লেন থেকে নেমে একটাদিন বিশ্রামেরও সময় ওকে দাওনি |"
মনজুর একপেশে হেসে বললেন, "এটাই তো ! এখানেই তো কথা ! এটাই তো জ্ঞানের অভাব |"
আইলান ক্রুদ্ধ হয়ে বলল, "না নেই আমার জ্ঞান ! কোন জ্ঞান, বুদ্ধি, আক্কেল কিচ্ছু নেই আমার | তুমি হচ্ছো কেমন জানো ? তোমার আত্মীয়েরা যেমন, তোমার বন্ধুরা যেমন আর যাদের সাথে তুমি মেশো অবিকল তাদের মত ! স্বার্থপর, নিষ্ঠুর, নির্দয়, বিবেকহীন !"
আলিজা আইলানের জোরে জোরে কথা বলা শুনে দ্রুত এসে দাঁড়ালো | আইলান বোনের দিকে চেয়ে বলল, "একটাও কথা বলবিনা তুই | আজকে আমার মুখ বন্ধ করবিনা | আমার অনেক সাহস জোগাড় করতে হয়েছে এই কথাগুলো বলার জন্য |"
আলিজা শুধু বলল, "জানিসই কোন ফল হবেনা এর |"
"না হোক ! বলবোই আজ |"
মনজুর বললেন, "এখন আমাকে যদি ভুল বুঝিস তোরা তো এটা তোদের ব্যাপার |"
"না | আমাদের ব্যাপার নয় | তুমি আর তোমার মত কয়েকজন সারাটাজীবন অন্যায় আর ভুলকে সঠিক মনে কর | তোমার বন্ধু বাদশা নিজের তিনটে মেয়েকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছিল তাদের কোনরকম ভরনপোষন না করেই | মেয়েগুলো কোথায় থাকবে, কি করবে, কেমন করে চলবে এর ভাবনা সে করেনি | তিনজনই খুব কষ্টে কিছুদিন থেকে বিপথে চলে গেল | প্রথমজন এক বিবাহিত লোকের ঘর ভেঙে তাকে বিয়ে করল আর স্বামীর মাধ্যমে চাকরি পেল | দ্বিতীয়জন একটা ছেলেরসাথে চারবছর একসাথে থেকে পরে ওই ছেলেকে বিয়ে না করে ছেলেটার বন্ধুর সাথে প্রেম করে আমেরিকায় গেল | এই সেই যার সঙ্গে তুমি আলিজার পিএইচডি করা সময়ে আলিজার আর ওই মেয়ের তুলনা দিতে | মেয়েটা তোমাকে বলেছে সে ওখানকার ব্যাংকে বড় অফিসার | কিন্তু তুমি জানো ও আসলে কি করে ? ও তিনরকমের তিনটা ছোটকাজ করে | একটা ফুলের দোকানে ফুল আলাদা করে, একটা কফিশপে কাপ ধোয়, আর একটা রেস্টুরেন্টে মেঝে পরিস্কার করে | ওর পেশাকে আমি ছোট করছিনা বাবা | অথচ ওর সঙ্গে তুলনা করে তুমি নিজের মেয়েকে ছোট করতে সবসময় | এই কথাটা তোমার মাথায় আসেনি যে একটা অনার্স কলেজে পড়া মেয়ে টেনেটুনে সেকেন্ডক্লাস রেজাল্ট নিয়ে আমেরিকার ব্যাংকে সিনিয়ার অফিসার হয়না | কিন্তু ঐযে তোমার বন্ধু বলেছে ! বন্ধু কি মিথ্যা বলবে ! তুমি সবসময় পরের কথায় নাচানাচি করো | তোমার ওই বন্ধু এখন তোমাকে ফোন করে মেয়েদের সুনাম করে কারন তিন মেয়েই অনেকগুলো করে টাকা পাঠায় তাকে | আগে যেই মেয়েদের দেখতে পারতনা এখন তাদের সোনা আদরে রাখে ! কারন হল টাকা ! আরে থু দেয়া উচিত এমন বাপদের মুখে যাদের কারনে তাদের সন্তানেরা বিপথে যেতে বাধ্য হয় !"
মনজুর আমতা আমতা করে বলল, "এইটা শোনা কথা | কে কি করেছে সেটা চোখে না দেখে বলা যায়না |"
"তুমি তো তাই বলবে ! অন্যের কোন দোষ তুমি কোনদিনই দেখতে পাওনা | তুমি দ্যাখো শুধু আমার আর আলিজার দোষ | বন্ধুর মেয়ে প্রথমজীবনে প্রস্টিটিউশন করেছে সেটা তো কোনদিন তুমি বিশ্বাস করবে না |"
"এসব না বলাই ভালো |"
"বাহ্ ! ধন্য করলে ! বন্ধুর তিন মেয়ে প্রস্টিটিউট ছিল সেটা বলতে বাধো লাগে তোমার | অথচ দিনের পর দিন মা যখন কামরানকে খাওয়াতো তখন এই বাধো কই ছিল ? উত্তর দাও কই ছিল ?"
মনজুর হতবাক ! আইলানের এই চেহারা সে কোনদিন দেখেনি |
আইলান ক্ষোভে ফেটে পড়ে বলল, "একবার কি মনে হয়েছিল তোমার যে এই লোকটা যে সবসময় তোমার মেয়ের দিকে নোংরা চোখে তাকায় তাকে যখন মা কাছে বসিয়ে ভাত বেড়ে খাওয়ায় তখন তোমার মেয়ের মনের ভেতরটায় কি অনুভুতিটা হত ? কি কষ্টটা ও পেত ? তোমরা নিজে কোনদিন জানোয়ারটার প্রতিবাদ করোনি আর আশ্চর্য হল ও কিছু বললে লজ্জায় অস্থির হয়ে যেতে ! কেমন করে করতে সেটা ?"
আলিজা ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে বলল, "থাম তো ভাইয়া ! যা ঘরে যা |"
আইলান যেন অন্যমানুষ আজ | সে বলল, "কয়টা দিন তুমি মনে করতে পারো যেদিন একটু ভালোকরে কথা বলেছো ? কয়টা দিন একটু ভালো আচরণ করেছো ? একটাদিন মনে করো তো যেদিন তুমি আমাকে আর আলিজাকে সাথে নিয়ে এমনিতে কোথাও ঘুরতে বেরিয়েছ ? একটাদিন মনে করো তো যেদিন তুমি আমাদের সাথে হেসে গল্প করেছো ? করোনি | কারন তুমি দুএকটা কথাতেই শুরু করতে অন্যের সাথে তুলনা | ও এটা করে, ও সেটা করে, ও ওটা পারে এই হল তোমার কথার নমুনা |"
মনজুর চুপ করে আছেন |
আইলান বলল, "তোমার গ্রামের বন্ধু মহসিনকে দেখেছি আমি | তার দুই ছেলেমেয়েকে সে সারাদিন প্রচার করে বেড়ায় আর সারাদিন মহসিনের বৌ বাচ্চাদুটোকে জোরকরে পড়তে বসিয়ে রাখত | গ্রামের বাড়ি যাবার পর একটা ঘটনা মনে পড়ে | তখন আলিজা অনেক ছোট | মহসিনের মেয়ে আলিজার সাথে গল্প করতে এসেছিল | দেখলাম কিছুক্ষন পরেই মহসিনের বৌ দৌড়ে এলো মেয়েকে নিয়ে যেতে | কারন আলিজা এতক্ষন ধরে মেয়েকে আটকে রেখেছে মেয়ের পড়াশুনার ক্ষতি হচ্ছে ! সে আলিজাকে সরাসরি বলে বসল যেন আলিজা আর যেন কখনো ওর মেয়েকে এভাবে আটকে না রাখে | কত পড়া নষ্ট হল | তো এসব বাবামায়ের ছেলেমেয়েরা কেমন আর হবে ! মেয়েটাও দেখতাম সারাক্ষন শুধু পড়া পড়া করত | এরপর অনার্স পড়ার সময়ই ওর বাপ চাকরির জন্য পাগল হয়ে গেল | আর মেয়েটা প্রাইমারি স্কুলে ঢুকল | এই মেয়ের সাথে তুলনা দিয়ে তুমি এত আজেবাজে কথা আলিজাকে বলতে যে এখন ভাবতেও অবাক লাগে আমার যে কিকরে সহ্য করত ও ! ও যতখন না কাঁদত হাউমাউ করে ততক্ষন পর্যন্ত তুমি বলেই যেতে ! অথচ কই ওই মেয়ে আর আলিজার অবস্থান কই ! তুমি কি বললে তখন আলিজার দায়িত্ব ছিল মায়ের সেবা ! আচ্ছা ওর ওপর কোন দায়িত্বটা পালন করেছো তোমরা ? কিছুইনা ! জানি এখন কি বলবে তুমি ! বলবে যে তোদেরকে খাইয়েছি, পড়িয়েছি, থাকার জায়গা দিয়েছি | কিন্তু এগুলোই কি বাবামায়ের কর্তব্য না ? এটাই কি তাদের কাজ না ? কিন্তু ছোটবেলা থেকে ওই কুলাঙ্গার লোকগুলোকে দেখে দেখে তোমার এই ধারণা হয়ে গিয়েছে যে খাইয়ে পরিয়ে ধন্য হয়েছো তুমি আর আমাদের উদ্ধার করে ফেলেছো ! অথচ দায়িত্ব এটা তোমাদের কিন্তু সেটাকে তোমরা দান মনে করে নিয়েছো | আলিজার কোন ঠেকাই ছিলোনা এভাবে হাসপাতালে পড়ে থেকে অবশেষে মরতে বসা ! কিন্তু ও তোমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে হতে পারো তোমরা বাবামা কিন্তু তোমরা দায়িত্বহীন | তুমি যেমন সবসময় তেমন থাকবে | বদলানো অসম্ভব তোমার পক্ষে | তুমি পারবেনা বদলাতে | একটু পরিবর্তন হবে তোমার তখন আবার তোমার কোন পুরোনো বন্ধুর কি কোন আত্মীয়র দেখা পাবে, সে তোমার কোনপড়া দিয়ে মগজধোলাই করবে তখন তুমি আবার যেইকে সেই | আবার ওরকম হয়ে যাবে | আগেরমত বিচিত্র !"
আইলানের মেজাজ এত সহজে নামবেনা দেখে আলিজা বাপের দিকে চেয়ে বলল, "বাবা, ঘরে যাও | ভাইয়া যা বলে বলুক | আমার কোন অভিযোগ নেই তোমার উপর |"
আইলান বলল, "সাতবছর আগে এসে তোমার কাছে কষ্ট পেয়ে গিয়েছে | এরপর তিনবছর আগে এসেছিল তখনও খুব একটা ভালো আচরণ করোনি তুমি ওই সাত দিনে | শুধু অপমান করতে পারোনি নাতিকে দেখে | আর এই কয়েকদিনে তুমি যা করলে সেজন্য আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে | বাবা দশবছর আগে তখন ওর কেউ ছিলোনা বিদেশে | তাই ডাকতেই ছুটে এসেছিলো | আর এখন ওর এরিকের মত একজন স্বামী আছে যে ওর জন্য সব করতে প্রস্তুত | রজার আংকেলের মত শশুর আছে যিনি ওকে মেয়ের মত ভালোবাসে নিঃশর্তভাবে, এতটা যা তুমি সারাজীবন চেষ্টা করেও পারবে না | দুটো ফুটফুটে বাচ্চা আছে যাদের দেখলেই কলজে জুড়িয়ে যায় | আর ওখানে ওর একটা সুন্দর সাজানো-গোছানো সংসার আছে | ওর একটা নিজের জগৎ আছে ওখানে বাবা | ও সেই জগৎ ফেলে আর সহজে আসবে না | কারন এখন ও একা আর অসহায় না | ও চলে গেলে তোমার তো কিছুই না, কিন্তু আমার কি হবে সেটা শুধু আমি জানি | আর এবার যা করেছো আর করছো তুমি তাতে ও যদি চায়ও আসতে কিন্তু ওর স্বামী, শশুর, মেয়ে কেউই আর সহজে ওকে আসতে দেবে না | ওরা ওর মূল্য জানে | ওরা তোমার মত না |"

..................................................

Continue Reading

You'll Also Like

108 1 6
তৃ-শালিক একটি, সংঘবদ্ধ বাক-কথন। বর্ণমালার অভিব্যক্তি ও নিজস্ব সচলতার আঙ্গিকে একটি ব্যাঞ্জন। (নিজস্ব জীবন থেকে নেওয়া দু-চার লাইন।) আশাকরি ভালো লাগবে।
270 42 7
(This is the Bengali version of 'How To Get Reads, Votes and Comments - A Guide' by Katherine A. Ganzel. The summary has been shortened due to charac...
15.5K 409 6
তন্ময় বাসায় ফেরার পর থেকেই বেলকুনিতে বসে আছে।অনেক্ষন ধরে ফোনে কথা বলল।তারপর থেকে মনটা খুব খারাপ মনে হচ্ছে।হয়ত ওর গার্ল ফ্রেন্ড এর সাথে ঝগড়া হয়েছে। আম...
1 0 1
পবিত্র কোরআন মাজীদকে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির কল্যাণের জন্য নাজিল করেছেন। প্রত্যেক মুসলিমের জন্য এটি একটি আদর্শ জীবন বিধান। এই কোরআন মাজিদে অনেকগুলো স...