সুন্দর সকাল

17 0 0
                                    

রোজের মতোই আজকে একটা সকাল ।আকাশে সূর্য, ঝলমল করে চারিদিকে রোদ ফুটে উঠেছে। এখন সকাল সাড়ে পাঁচ টা বাজে তারা বিছানা থেকে উঠল এবং সকালের কাজ এবং স্নান টান সেরে নিজের ঘর থেকে বের হল আর রান্নাঘরে গেল। বিনা মানে তারার জা আগে থেকেই বাসি কাজ করছিল। তারা গিয়ে সকালের ব্রেকফাস্ট তৈরির কাজে লেগে গেল। তারা আর বিনা দুজনেই সব কাজ একসাথে মিটিয়ে নিল এবং নিজের নিজের হাতে এক কাপ করে চা নিয়ে বাড়ির সবাইয়ের ঘুম থেকে ওঠার অপেক্ষায় বৈঠকখানায় বসে পড়ল। এইটা ওদের দুজনের রোজের কাজ রোজ বাড়ির সব বাসি কাজ সেরে হাতের চায়ের কাপ নিয়ে গল্প করা। আর সবার ঘুম থেকে ওঠার অপেক্ষা করা।
তারা আর বিনা দুজনের প্রায় সময় বয়সী বলা চলে চৌধুরী বাড়ির দুই বউ। ওরা দুজনে একসাথেই বিয়ে হয়ে এসেছিল এই বাড়িতে। এবং দুজনের মধ্যে বোনের মত একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে ।
অতিক ও রিজু চৌধুরী বাড়ির দুই ছেলে। অতীক বড় ছেলে এবং বিনা বড় বউ ,আর রিজু ছোট ছেলে এবং তারা ছোট বউ। এছাড়া চৌধুরী বাবু ও তার স্ত্রী এবং বিনার দুই মেয়ে মিনি (৯)আর রিনি(৫) ও তারার ছেলে মির (২) এরা হচ্ছে চৌধুরী বাড়ির বাসিন্দা ।
চৌধুরী বাবুর বড় একটা কাপড়ের দোকান আছে যেটা এখন অতিক ও রিজু দুই ভাই মিলে চালায়।
বাড়ির সবাই একে একে ঘুম থেকে উঠে সকালের কাজ সেরে নিচে নামলে বাড়ির সবাই একসাথে প্রাতরাশ সেরে নেয়। তারপর অতীত ও রিজু দুই ভাই মিলে নিজেদের টিফিন নিয়ে দোকানে চলে যাই এবং চৌধুরী বাবু খবরের কাগজ নিয়ে বাইরের বারান্দা টাই বসে পড়ে। এখন শীতের সকাল ওই জন্য চৌধুরীবাবুর স্ত্রী নিজের নাতি মিরের জন্য একটা মাফলার বোনা শুরু করেছে । পয়লা জানুয়ারির ছুটি হওয়ার জন্য বাচ্চারা আজ স্কুলে যায়নি বাড়িতে খেলাধুলা করছে। মিনি ওদেরকে নিয়ে একসাথে বাড়ির ভেতরে খেলাধুলা করছিল। বিনা ও তারা দুপুরের খাবার তৈরি করার জন্য রান্নাঘরে চলে গিয়েছিল। সব কাজ মিটে যেতে দুপুর বারোটার সময় বিনা ও তারা দুজনে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে এলো এবং বাচ্চাদেরকে খুঁজতে লাগলো বাচ্চাদের স্নান করানো ও খাবার খাওয়ানোর জন্য । মিনি ও রিনি দুজনে ঘরের মধ্যে বসে টিভিতে কার্টুন দেখছিল। বিনা ওদেরকে দেখে স্নান করাতে নিয়ে চলে গেল দিকে তারা ভাবল যে মনে হয় নিজের ঘরের মধ্যে বসে ফোনেতে ভিডিও দেখছে। ছেলেটা ফোনের প্রতি প্রচুর আসক্ত যখনই কারোর ফোন হাতের কাছে পায় তখনই তার ফোন নিয়ে ঘাঁটতে বসে যায় তাই তারা ওকে চারিদিকে খুঁজতে লাগলো। সবার ঘরের মধ্যে সিঁড়ির নিচে বারান্দায় এবং বাথরুমেও কিন্তু কোথাও ওকে খুঁজে পেল না। তারা র এবার একটু ভয় হতে লাগলো তাই ও উঠানে গেল ,দেখলো ওর শশুর মশাই খবরের কাগজ পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছে। এবং শাশুড়ি নিজ মনে মাফলার বুনে চলেছে। মেয়ের কে খুঁজে পাচ্ছে না এই কথাটা ও শ্বশুর শাশুড়ি কেউ জানালো এবং বাড়িতে হলুদ পড়ে গেল চারিদিকে মেয়েকে খোঁজার মতো লাগলো। তারা তাড়াতাড়ি করে চারিদিকে খুঁজতে খুঁজতে বাড়ির পিছনে পুকুর ধার টাই চলে গেল এবং কিছুক্ষণ পর একটা বিকট চিৎকার এবং জোরে জোরে ঝাঁপিয়ে পড়ার আওয়াজ পেয়ে সবাই বাড়ির পিছনের দিকে ছুটে দেখতে গেল এবং সবাই যা দেখল তাতে সবাই হতবাক হয়ে গেল। আজকের সুন্দর ঝলমলে রোদ্দুর ওয়ালা দিনটা সবার জন্য অমাবস্যার রাতের মতো অন্ধকার হয়ে গেল।

সবাই দেখলো জলেতে ছোট্ট মিরের দেহটা ভাসছে এবং তারা তাড়াতাড়ি করে গিয়ে তাকে আঁকড়ে ধরে তুলে আনার চেষ্টা করছে ও খালি একটাই কথা বলছে "ওগো কেউ আমার ছেলেকে বাঁচাও ওগো কেউ আমার ছেলেকে বাঁচাও"।
কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে যাবে যে কারোর মাথাতে সেই বুদ্ধিটাও খেলে যায়নি, সবাই নিজের জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে সবাইয়ের মাথায়। আলাদা আলাদা চিন্তা জেগে উঠছে। তারা মীরের দেহটা তুলে এনে ওর শরীর থেকে জল বের করার চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু নিজের দেহ নিথর হয়ে পড়ে আছে ছেলেটা কখন মারা গেছে। কেউ জানে না। তবুও সবাই তাড়াহুড়ো করে ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। খবর পেলেও হাসপাতালে ছুটে এলো তারার পুরো শরীর কাঁপছে এবং প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে ডাক্তার বলল মীর আর বেঁচে নেই।
এটা কি সত্যিই দুর্ঘটনা নাকি কোন ষড়যন্ত্র????

গোচরে - অগোচরেWhere stories live. Discover now