অন্ধিসন্ধি

By romia_rebel

186 2 0

রিয়া নামক একটি বাঙালি মধ্য বৃত্য পরিবারের মধ্য বয়স্ক মহিলার লেখা , তার জীবনে ঘটে চলা কিছু অদ্ভুত , অব্যাক্ত... More

আমার অদ্ভুত সূচনা
হয়তো বিভ্রম

বান্ধবী

36 0 0
By romia_rebel


তখন সবে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি । পরীক্ষার পরে লম্বা একটা ছুটি পেয়েছি । মাঝে - মাঝেই বন্ধু - বান্ধবরা মিলে আড্ডা দিতাম , কাছা-কাছি ঘুড়তেও যেতাম । আজকের গল্পটি এরকমই একটা দিনের ।  আমরা কজন স্কুলের বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম , সিনেমা দেখতে যাব । 

কথা মতো সবাই মিলে দেখা করলাম , সন্ধ্যে সাড়ে ছটা নাগাদ  । সল্টলেকের  বাঁধাধরা গলির মুখে । সেদিন আমরা মোট সাতজন । আমাদের শো সাতটা থেকে নটা । এই কথা বলা বাহুল্য  - সিনেমা দেখে বেশ লেগেছিল , তখনকার নতুন নায়ক সবে সিনেমার জগতে পা দিতে না দিতেই ভালোই খ্যাতি অর্জন করেছিল  ।

 আমরা সিনেমা দেখে বেড়িয়ে , সিনেমা হলের গায়ে লাগোয়া একটা ফুড কোর্ট থেকে চিকেন রোল খেতে খেতে , নানা রকম গল্প বাঁধলাম বেশ খানিক্ষন । আমাদের গল্প গুলো শুরু হল - সিনেমার নতুন নায়কের অসাধারণ অভিনয় নিয়ে , এবং শেষ হল - আমাদের স্কুলের সামনের চিকেন রোলটার কথা নিয়ে , যেটা এখানের রোলের থেকে ঢেঁড় বেশি ভালো ।

এইসব নিয়ে গল্প করতে করতে খেয়ালই ছিলোনা , কখন পণে দশটা বেজে গেছে । আমাদের মধ্যে রাহুল ছিল সব থেকে দায়িত্বশীল  । কথা বলার মাঝখানে মাঝখানে , আমাদের সময়ের ব্যাপারটা সেই মনে করিয়ে দিচ্ছিল বারে-বারে । শেষ মেষ সে বলে উঠল - "শোন , তোরা থাকলে থাক ! অনেক রাত হয়ে গেছে । পণে দশটা বাজে, মায়ের ফোন আসা শুরু হয়ে গেছে - আমি চললাম ।"

এই কথা শোনার পর কার ভয় লাগবে না , আমি জানিনা । আমাদের কিন্তু সবারই হৃদপিণ্ড একসাথে কেঁপে উঠেছিল । কি বলছেন ? হৃদপিণ্ডের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলাম কিনা ? আরে না না তা শোনা যাবে কেন ? আমাদের সবার মুখই - মায়েদের ভয়ে -  প্রায়ে ফ্যাঁকাসে হয়ে উঠেছিল । কেউ আর বেশি কথা বললাম না । সবাই সবার মনের অবস্থা বুঝেই - " আবার দেখা হবে " বলে , বিদায় নিলাম ।

আমি ছাড়া বাকি বন্ধুদের বাড়ি অন্য রুটে । আমার বাড়ি স্লটলেক হয়েই ফেরা যায় , সময় ও কম লাগে । তাই কিছুক্ষনের মধ্যেই বন্ধুরা বেড়িয়ে গেল । আমিও অটো ধরব বলে , একটা ছোট খাবারের দোকানের পাঁশে এসে দাঁড়ালাম । 

মায়ের ফোন এল - " কিরে কতদূর ? " বললাম - " এই তো অটো ধরব দাড়িয়ে আছি , অটো পেলেই পনেরো মিনিটে বাড়ি ঢুকছি ।" মা ফোনটা রেখে দিল । দেখতে দেখতে আরও পনেরো মিনিট কেতে গেল । একটাও অটো পেলাম না । আর যেগুলো পেলাম , হয় সেগুলতে প্যাসেনজার ভর্তি , নয় আমার রুটে যাবে না । 

দেখলাম আস্তে আস্তে সব কিছু গুছিয়ে , দোকানটা বন্ধ করে , দোকানদার বেড়িয়ে যাচ্ছে । দোকানদারটা আমার দিকে তাকিয়ে , খুব ক্ষীণ স্বরে বললেন - " দিদিভাই , তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যান । রাত হয়েছে , যায়গাটা সুবিধার নয় । " আমি একটু থতমত খেয়ে , কিছু বলে ওঠার আগেই , লোকটা গুঁটি গুঁটি পায়ে এগিয়ে গেল । 

অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থেকে ভাবলাম , রাস্তার উপরের বিল্ডিংটার সিঁড়িতে গিয়ে বসি । অটো আসলে তো এখান থেকেও ভালোই দেখা যাবে । বসে বসে ভাবছি , দোকানের লোকটা কি চোর বা খারাপ লোকেদের ব্যাপারে সাবধান করে দিয়ে গেল ? এমন সময় একটা হাত আমার কাঁধে পরল । আমি চমকে উঠলাম , দেখলাম - একটা মেয়ে , কখন এসে , আমার পাঁশেই বসেছে । 

আমি চিন্তে পারলাম না । জিজ্ঞেস করালাম - " কে বল তো ? ঠিক চিনতে পারলাম না । " মেয়েটা একটু হেঁসে বলল - " সে ... না চেনারই কথা । কতদিন দেখা হয়নি বলত ? অবশ্য আমি ঠিকই চিনেছি । " আমি একটু বিরক্তির গলায়েই বললাম - " এই ... এতো হেঁয়ালি করিস না তো !! আমার সত্যিই মনে নেই !! নাম টা অন্তত বল ... যদি তাতে কিছু মনে পরে । " মেয়েটি আবার হাসল , বলল - " আমি স্নেহা রে , মনে নেই তোর ? ছোট বেলায়ে তো একই স্কুলে , একই  ক্লাসেই পরতাম । " 

এইবার একটু স্বস্তি হল । সত্যি , ছোট বেলায় আমার খুব কাছের একটা বন্ধু ছিল - স্নেহা । স্কুলে একসাথে বসা থেকে , একে অপরের বাড়ি গিয়ে খেলা সব করেছি । কিন্তু ওর বাবার ত্রান্সফারের জন্যই  , ওদের স্বপরিবারে ব্যাঙ্গালোর চলে যেতে হয় । তারপর দেখা তো দূর , ফোনে বা চিঠিতেও কোনোদিন কথা হয়নি আমাদের । আমি তো ভুলেই গেছিলাম প্রায় সব । 

স্নেহা একটু ঝাঁকুনি দিয়ে বলল - " ওই  ... কি ভাবছিস বল তো ? কতদিন পর দেখা হল , কোথায় গল্প করবি , তা না... " এবার আমি হাসলাম , বললাম - " সত্যি , কতদিন দেখা হয়নি । কি করে চিনবো বলতো ! " এমনিতেই তখন রাত , রাস্তার লাম্প পোষ্টাও কিছুটা দূরে । এইদিকটা , আলো - ছায়া মেশানো । ঠিক করে মুখটা ঠাহর করা যাচ্ছেনা । 

অনেকদিন পর , ছোট বেলার বন্ধুর সাথে গল্প করতে করতে , যেন একটা ঘোড় লেগে গেছিল । কত কথা বলছিল স্নেহা , ওর বেড়ে ওঠার গল্প , ওর বাড়ির লোকরেদের গল্প , ওর বড় অসুখের গল্প , আরও কতকি । আমি শুধু শুনে চলেছি মন্ত্রমুগ্ধের মতো । হঠাৎ , ফোনটা বেজে ওঠায় ঘোড় কাটল । মা ফোন করছে । ফোনটা ওঠাবার সাহস হল না । মোবাইলে সময়টা দেখেনিলাম - পণে এগারোটা । 

কি করে যে এতটা সময় কেটে গেলো বুঝতেও পারলাম না । স্নেহাকে বললাম - " অনেক দেড়ি হয়ে গেছে রে ! আমরা আবার একদিন গল্প করব । " স্নেহা হাসি মুখে বলল - " হ্যা , আমি এখানে কিছুদিন আগেই এসেছি , এবার থেকে তো এখানেই থাকব । চিন্তা নেই বন্ধু , আবার এখানেই দেখা হবে ।" আমি আর সময় নষ্ট করলাম না । একটা খালি অটো আসছিল । আমি তাতেই চড়ে বসি । স্নেহা সিঁড়িতে বসেই হাত নাড়ছিল , বিদায়ের উদ্দেশ্যে । আমিও হাত নাড়িয়ে বেড়িয়ে গেলাম ।

এই ঘটনার প্রায় দুই - তিন মাস পর , স্নেহাকে অনেক কষ্টে ফেসবুকে খুঁজে পাই । মুখটা খানিকটা পরিচিত । মানে - এই ছবিগুলোর মুখের সাথে আমার মনে থাকা সেই ছোট বেলার বন্ধু , স্নেহার মুখের মিল আছে । কিন্তু সেদিনের দেখা স্নেহার মুখের আদলের -একেবারেই মিল নেই । হ্যাঁ , অন্ধকার ছিল , কিন্তু তা বলে এতো অমিল ? 

যাইহোক , স্নেহাকে একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে , একটা মেসেজ পাঠিয়ে দিলাম - " সরি রে ! সেদিন তাড়াহুড়োয় চলে যেতে হয়েছিল আমাকে । তোর নাম্বারটাও নেওয়া হয়নি । জাজ্ঞে , মেসেজটা দেখেই আমাকে তোর ফোন নাম্বারটা পাঠাস । "

একদিনের মধ্যেই মেসেজ এসেছিল স্নেহার । " কিরে কেমন আছিস । বাবা !!  এতো বছর পরে আমাদের যে  আবার কথা হবে  , ভাবাই যায় না । এই নে আমার নাম্বার - ৯৮১৩***৪৫২ । তাড়াতাড়ি সময় করে ফোন করিস। " এই অবধি তো ঠিকই ছিল । সমস্যা টা হল স্নেহার মেসেজের পরের তিনটে লাইনে - " তুই কি এবার সত্যি সত্যি পাগল হলি নাকি , কি সব লিখেছিস -  ' সরি ...তাড়াহুড়োয় কোথায় গেছিলি ...' । তুই সেই আগের মতই আছিস , কথায় কথায় ঠাট্টা । কোথায় কলকাতা , আর কোথায় ব্যাঙ্গালোর - বলে নাকি দেখা হয়েছিল ...হা ! হা ! হা ! "

পরে কৌতূহল হওয়ায় , সেই জাগাটায় আবার ঘুরে এসেছিলাম - দিনের আলোয় । একটা পুড়নো বিল্ডিং । পরে আরও খোঁজ করায় জেনেছিলাম - ওটা একটা হাঁসপাতাল । আপনারা জানেন কিনা জানিনা । কিন্তু যারা সল্টলেকের দিকে থাকেন বা যাতায়েত করেন , তারা অনেকেই শুনেছেন - একটা হাঁসপাতালের কথা । যাতে ভুলবশত আগুন ধরে যাওয়ায় , বিল্ডিংটা নিজের সাথে সাথে অনেকগুল প্রাণ নিয়ে পুড়ে যায় । অপঘাতে মৃত - ৯৩ ।।

Continue Reading

You'll Also Like

677 158 6
রহস্যময় পৃথিবীর রহস্য কখনো শেষ হয় না। শেষ হয় না অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা । দেখা যায় হরেক রকম মানুষ । দেখা যায় অপ্রীতিকর অপ্রকৃতস্থ মানুষ ও তাদের ঘটনা । "অপ...
743 2 1
বাংলা চটি কাহিনী
19.7K 643 31
মায়ার জীবনটা খুব ই অদ্ভুত, যখন দুঃখের আশা ছেড়ে দেয় তখন সুখ পালায় আর যখন সুখের আশা ছেড়ে দেয় তখন দুঃখ পালায়। সোহানের প্রেমে পরে জীবনের মোড় ঘুরে যাওয়া আ...
336 23 3
স্বপ্ন কি কখনো সত্যি হয় নাকি? ওটা তো কেবলই মস্তিষ্ক সৃষ্ট কিছু ভাবনা। সত্যিই কি তাই? কখনো যদি এমন হয়, ঘুমিয়ে যে জগতে প্রবেশ করি, সেটাই সত্যি? সেই জগত...