গল্প-স্বল্প (ভলিউম ০১)

By OpuTanvir

83K 2.1K 158

গল্প লেখা শুরু সেই ২০১১ সালে । সেখানে বেশ কিছু গল্প জমা হয়েছে ব্লগে । সেই গল্প গুলোই এখানে আস্তে আস্তে এনে জম... More

তুমি আর তোমাকে ভালবাসার গল্প
তোকে ভালোবাসি সরি, তোমাকে ভালোবাসি
একটি কাল্পনিক প্রেমের গল্প
আমি ২য় বার আফসোস করতে রাজি নই
ভাগ্যিস তখন কারেন্ট চলে গিয়েছিল
একটি ভৌতিক প্রেমের গল্প
বলা হয়নি ভালবাসি
ফিরে পাওয়া ভালবাসা
কখন যে ভালবেসেছি তোমাকে!! (এক প্রতারকের কাহিনী)
মেয়ে তুমি কি আমায় ভালবাসো?
ভ্যালেনটাইন ( দুটি গোলাপ আর একটি গল্প )
তবুও ভালোবাসি তাকে
ভালবাসার শুরু
বিশ্বাস
১৬
১৭
১৮
১৯
২০
২১
২২
২৩
২৪
২৫
২৬
২৭
২৮
২৯
৩০
৩১
৩২
৩৩
৩৪
৩৫
৩৬
৩৭
৩৮
৩৯
৪০
৪১
৪২
৪৩
৪৪
৪৫
46
৪৭
৪৮
৪৯
৫০
৫১
৫২
৫৩
৫৪
৫৫ - জয়িতার গল্প
৫৬
৫৭
৫৮
৫৯
৬০
৬১
৬২
৬৩
৬৪
৬৫
৬৬
৬৭
৬৮
৬৯
৭০
৭১
৭২
৭৩
৭৪
৭৫
৭৬- ফারিয়ার গল্প: একদিন ঠিকই বলবে ভালবাসি
৭৭
৭৮
৭৯
৮০
৮১
৮২
৮৩
৮৪
৮৫
৮৬
৮৭
৮৮
৮৯
৯০
৯১
৯২
৯৩
৯৪
৯৫
৯৬
৯৭
৯৮
৯৯
১০০

সন্ধ্যায় আমার খবর আছে

1.5K 44 4
By OpuTanvir

সন্ধ্যায় মীম আমাকে দেখা করতে বলেছে । কেন বলেছে আমি ঠিক জানি না । তবে গেস করতে পারি ।
আজ সন্ধ্যায় আমার খবর আছে । নিজের উপর কি যে রাগ হচ্ছে । কেন যে স্টুপিডের মত কাজ টা করতে গেলাম । কি দরকার ছিল মীম কে ভ্যালেনটাইনের কার্ড দেওয়ার !
কেনার সময় কি মনে করে কিনেছিলাম কে জানে । দেওয়ার আগেও কিছু মনে হয় নি । ঝামেলা বাধল দেওয়ার সময় ।
মীমের হলের সামনে গিয়ে ওকট ফোন দিলাম ।
"কোথায় ?"
ও বলল "এই তো রুমে ।"
" একটু নিচে আসবে ?"
" তুমি নিচে ? আচ্ছা আসছি ।"
একটু পরই ও গেটের সামনে আসলো । মনে হয় ঘুমিয়ে ছিল । চোখ খানিকটা ফোলা ফোলা লাগছিল ।
" ঘুমিয়ে ছিলে ।"
" হ্যা একটু শুয়ে ছিলাম ।"
" সরি ঘুম ভাঙ্গালাম তোমার ।"
" না ঠিক আছে । বল কি বলবে ?"
যে আবাহাওয়া মনের মধ্যে তৈরি করেছিলাম ততক্ষনে গায়েব হয়ে গেছে ।
" না মানে !"
কি বলব বুঝতে পারছিলাম না । কিভাবে যে দিবো বুঝতেই পারছিলাম না ।
" বল কি বলবে ?"
কোন মতে কার্ডের খামটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম এটা তোমার জন্য । তারপর আর কোন কিছু যেন নেই । ওখান থেকে পালাতে পারলে বাঁচি । চলে এলাম বলতে গেলে পালিয়েই ।
আসার সময় নিজেকে ধাপড়াতে ইচ্ছা করছিল । এমন একটা কাজ কেন করলাম ।
ও কি না কি ভাবছে ! ফোনটা আসলো আরো ঘন্টা খানেক বাদে ।
" হ্যালো ।"
খানিকটা ইতস্ততঃ করে বললাম "হ্যালো ।"
"তুমি ও ভাবে চলে আসলে কেন ?"
" আসলে ......"
" ঠিক আছে তুমি সন্ধ্যার সময় আমার সাথে দেখা করবে । টিএসসিতে । ওখানে তোমার সাথে কথা হবে ।"
জানি না কি কথা বলবে ।
আল্লাহই জানে ।
কেন যে দিতে গেলাম !
কোন কারন নেই কোন কারন ছিলোও না কোন কালে । বলতে গেলে স্কুল জীবন থেকে ওর সাথে আমার দা কুমড়ার সম্পর্ক ছিল । আমার খুব ভাল করে মনে আছে আমি তখন সবে ক্লাস সেভেনে পড়ি । বাবা বদলি হলেন । আমাকে বদলাতে হল স্কুল । প্রথম দিন স্কুলে গিয়ে দেখি একটা মেয়ে হল ক্লাস ক্যাপ্টেন । ক্লাসটা সেই নিয়ন্ত্রন করছে । খোজ নিয়ে জানতে পারলাম সে হল হেডস্যারের মেয়ে । এই হল মীম ।
কয়দিনের মধ্যেই মীমের সাথে আমার গোলমাল বেঁধে গেল । ঘটনা এরকম যে আমি বাইরে যাবো । ও ক্লাস মনিটর ছিল । বাইরে যেতে হলে ওর অনুমুতি নিতে হত । আমি অনুমুতি চাইতে গেলাম ।
বললাম "বাইরে যাবো ।"
ও সাফ বলে দিল এখন যাওয়া যাবে না ।
"কেন ?"
ও উত্তর দিল না । আমার কখন বেশ বেগ পেয়েছে । অনুমুতির তোয়াক্কা না করে আমি কাজ সারতে চলে গেলাম । এসে দেখি স্যার চলে এসেছে । আর আমার নামে রিপোর্ট চলে গিয়েছে । কারন বলতে স্যার কিছু বলল না । কিন্তু ওর সাথে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল ।
ওর প্রত্যেকটা কাজে আমি বিরোধিতা করতাম । এতো দিন মীমের নিয়ন্ত্রনে যারা ছিল তারা যেন ওর আন্ডার থেখে বের হতে শুরু করে দিল বিশেষ করে ছেলেরা ।
এটা দেখে ও আমার উপর আরো খেপে গেলো । আমিও কম যাই না । ওকে রাগানোর জন্য ওকে নিয়ে মজা করে ছোট ছোট ছড়া লিখলাম । যেমন
মীম মীম মীম/ রোজ পাড়ে ডিম আথবা আমাদের মীম রোজ যায় জিমে /জিমে গিয়ে ব্যাম করে আর তা দেয় ডিমে । হা হাহাহা ।
এতে যেন ও তেলেবেগুনে জ্বলে উঠত । পড়ালেখায় ভাল ছিলাম । সেদিক দিয়েও ওর সাথে চলত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই । ওর থেকে যখন কোন বিষয়ে নম্বর বেশি পেতাম মনে অনাবিল আনন্দ পেতাম ।
কিন্তু মীম যেদিন মেডিক্যালে চান্স পেল না আমি পেলাম সেদিন ও খুব কেঁদে ছিল । সেদিন কেন জানি আমি খুশি হতে পারি নি । কোন কারন নেই । তবুও পারি নি ।
তারপর ও ভার্সিটিতে ভর্তি হয় । ওর সাথে আর দেখা হত না বললেই চলে ।
কিন্তু গত ঈদের কথা । হঠাত্ আমাদের হেড স্যার মানে মীমের আব্বা আমাকে বাড়িতে ডেকে পাঠালেন ।
"স্লামুয়ালাইকুম স্যার । আসো বাবা । ভাল আছো তুমি ?'
" জ্বি ভাল আছি স্যার ।"
" পড়া লেখা কেমন চলছে ?"
" জ্বি ভাল চলছে । তুমি কবে যাবে ঢাকায় । এইতো ঈদের ছয় সাত দিন পর"
"তুমি কি আমার কি একটু কষ্ট করতে পারবে বাবা ?"
" জ্বি স্যার বলেন । কোন সমস্যা নাই ।"
" আমার শরীর টা ভাল যাচ্ছে না । তা না হলে আমি যেতাম । তুমি কি মীম কি তোমার সাথে ঢাকা নিতে পারবে । যত বড় হোক । মেয়ে তো । একা ছাড়তে সাহস পাই না । এই উপকার টা কর বাবা ।"
" কোন সমস্যা নেই স্যার ।"

ভেবেছিলাম মীম হয়তো গাড়ির মধ্যে আমার সাথে কথাই বলবে না । স্কুল আর কলেজে ওর সাথে যেমন দাকুমড়া সম্পর্ক ছিল ।
ভয়ে ছিলাম এদিক ওদিক দিয়ে যদি ভুল করেও কোন ভাবে ওর গায়ে টাচ্ লেগে যায় ! আর যদি তখন কিছু বলে ! লজ্জায় মাথা কাটা যাবে ।
বাসের মধ্যে আমার আবার খুব ঘুম আসে । যদি ওর দিকে ঝুকে পড়ি । খুবই অস্বস্তির মধ্যেই যাত্রা শুরু হল ।
মীম প্রথমে জানালার দিকেই তাকিয়ে ছিল । মনে হল লক্ষন ভাল না । ও হয়তো কথাই বলবে না । আজ কালকার মেয়ে দের যা মুড !
কিছু জিজ্ঞেস করবো কিনা ভাবছি এমন সময় মীমই কথা বলল
" সরি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি ।"
আমার বলা উচিত্ না না কষ্ট কিসের ! কিন্তু আমি বললাম "হ্যা খুব বেশি কষ্ট দিলে ! জীবন শেষ হয়ে গেল ।"
মীম মনে হয় কিছু বোঝার চেষ্টা করছে । তারপর হঠাত্ হেসে ফেলল ।
বলল " তোমার ইয়ার্কী করার স্বভাব আর গেল না ।"
আমি হাসলাম ।
"এতো ফরমাল হবার তো দরকার নাই । স্যার ফর্মালিটি দেখিয়ে গেল আবার তুমি শুরু করেছ ! আমিতো আর তোমাকে কোলে করে নিয়ে যাচ্ছি না । দুজন একসাথে যাচ্ছি । কথা বলতে বলতে গল্প করতে করতে যাবো । এতে কষ্টের কি আছে । আর তোমার মত একজনের পাশে বসে যাচ্ছি এটা তো আমার সৌভাগ্য ।"
" সৌভাগ্য ?"
মীম সরু চোখে আমার দিকে তাকাল ।
" সৌভাগ্য কোন দিক দিয়ে ?"
" না মানে এইতো তুমি একটা ভাল মেয়ে । আজ কালতো ভাল মেয়ে পাওয়াই যায় না । তারপর ভাল যায়গায় পড়ছ ! সবচেয়ে বড় কথা তোমার মত সুন্দরীর পাশে বসাটা কি সৌভাগ্যের নয় ?"
" ঢং কর, না ? তুমি আসলেই আগের মতই আছো । ধাড়িবাজ ।"
" ধাড়িবাজ ?"
আমি আহত হবার ভান করি । "
"তা নয়তো কি ? মানুষকে খোচা দিতে তোমার খুব ভাল লাগে । তাই না ? স্কুলে থাকতে আমাকে নিয়ে কি সব বাজে কবিতা বানাতে মীম মীম মীম/রোজ খায় ডিম এটা কোন কবিতা হল ?"
" রোজ খায় না রোজ পাড়ে ডিম ।" কথাটা বলতে চাই নি মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেল । এবার দেখলাম মীম সত্যি সত্যি রেগে উঠল । কিছু করার নেই । বলে ফেলেছি ।
"সরি ! সরি । কিন্তু মীম সত্যি বলছি আমি এবার তোমাকে হেয় করার মিন করে বলি নি । আই রিয়েলি মিন ইট । তুমি সত্যি অনেক সুন্দর হয়েছ দেখতো ।"
এই কথাই মনে হল একটু কাজ হল । রাগ একটু মনে হল কমলো ।
তারপর আস্তে আস্তে ও কথা শুরু করে । তারপর পুরো রাস্তা জুড়ে ওর সাথে অনেক কথা হল । অনেক কথা বললাম । আমি নিজেই ভাবি নি ওর সাথে এতো কথা বলব ।
বাস থেকে নেমে ওকে নিজে হলে পৌছে দিলাম । সিএনজি তে করে ।
যখন ওকে রেখে চলে আসবো তখন কেন জানি আমার একটু খারাপ লাগছিল । আসার সময় ওর মোবাইল নাম্বর নিয়ে আসলাম । নিজের টাও দিয়ে এলাম । বললাম কোন দরকার হলে ফোন দিয়ো ।
ওকে রেখে চলে আসছি এমন সময় মনে হল পিছন ফিরে তাকাই । কিন্তু তাকিয়ে ভুল করলাম । ভেবেছিলাম ও হয়তো তাকিয়ে থাকবে । কিন্তু কোথায় কি ? ও কখন চলে গিয়েছে ভিতরে ।
খানিকটা হতাশই হলাম ।
ভেবেছিলাম ওকে ফোন দিবো না । কি দরকার ?
ফোন দিলাম ।
আরো চার দিন পর ।
আর গাধার মত ফোন দিলাম রাতে ।
রাত কথন প্রায় ১২ টা ।
"হ্যালো" মীমের গম্ভীর কণ্ঠস্বর ।
" হ্যালো । ভাল আছো ?"
" এতো রাতে ? কোন দরকার ছিল ?"
কি আশা করেছিলাম আর কি উত্তর এলো ।
"না মানে খোজ খবর নেবার জন্য ফোন দিলাম ।"
" অপু কিছু মনে করো না আমার খুব মাথা ধরেছে । পরে কথা বলি ?"
" হ্যা হ্যা কোন সমস্যা নাই । পরে কথা হবে ।"
বলেই ফোন কেটে দিলাম । নিজের গালে চড় মারতে ইচ্ছা হল কষে । এমন নিজে সেধে কেউ অপমানিত হতে যায় !
আর মীমকে ফোন দেবো না বলে ঠিক করলাম । হয়তো আর ফোন দেওয়া হতো না যদি না !
যদি না পরদিন সকালে মীম ফোন দিতো !
পরদিন সকালে মীমের ফোনেই ঘুম ভাঙ্গলো ।
" এখনও ঘুমাচ্ছ?"
আমি কিছু বললাম না । বুঝতে চেষ্টা করছি ও কেন সকাল সকাল ফোন দিলো ।
" আমি একটু ঘুমাই বেশি ।"
" অপু আমি আসলে সরি বলার জন্য ফোন করেছি ।"
" সরি ? তুমিতো সরি বলার মত এমন কোন কাজ কর নি ।"
"না কাল রাতের ব্যবহারের জন্য আমি সরি ।"
আমি খানিকটা অবাক হলাম ।
মীম বলল "আমার ওভাবে ফোন রাখা একদম ঠিক হয় নি । তোমার নিশ্চই খারাপ লেগেছে । আসলে কাল বিকাল থেকে আমার মেজাজটা খুবই খারাপ ছিল । এই জন্য । আই ডিডেণ্ট মিম দ্যাট । প্লিজ তুমি কিছু মনে কর না ।"
ভদ্রতা করে কিছু বলতে হয় ।
তাই বললাম "ইটস ওকে । তবে আমার কিন্তু সত্যি খারাপ লেগেছিল ।"
" অপু আমি সরি তো বললাম ।"
" না ঠিক আছে । বললাম আর কি ।"
মীম কিছুক্ষন কোন কথা বলল না ।
তারপর আমি বললাম "তো আমি কি এখন তোমাকে ফোন করতে পারি ?"
" অবশ্যই । যখন ইচ্ছা ।"
তারপর যেন সব ঠিক হয়ে গেল । ঐ দিন রাতে মীমই আমাকে ফোন দিলো । এর পর থেকে আমাদের রিলেশন ভাল হয়ে গেল । মধুরও । প্রতিদিনই আমরা কথা বলতে লাগলাম । প্রথমে ফোনে তারপর সরাসরি । দেখা হত কথা হত । ঘোরাঘুরিও হত ।
সবকিছুই ভাল চলছিল এমন সময়ই এই আহাম্মকেল মত কাজটা করলাম । কেবল কার্ড দিলেও না হয় কথা ছিল । কার্ডের মধ্যে কাব্যিক বিদ্যা প্রয়োগ না করলেই কি হত না !!

আযান দিয়ে দিয়েছে । আমি টিএসসির সামনে দাড়িয়ে আছি । মীমের আসার কথা এখনই । জানি না ও কি বলবে ।
যদি অপমান করে ? নাহ ! ও এমন টা করবে না । চিন্তাটা মাথা থেকে বের করে দিলাম । ও এমন মেয়েই না । তবুও মন থেকে অস্বস্তি ভাবটা গেল না কিছুতেই । জানি না কি বিব্রতকর অবস্থা আমার জন্য অপেক্ষা করছে ।
অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই মীম চলে আসল । রিক্সায় করে । ওর হল এখান থেকে মাত্র ২/৩ মিনিটের হাটার পথ । তবুও রিক্সায় । রিক্সা আমার সামনেই থামলো । আমি খানিকটা অস্বস্তি নিয়েই ওর দিকে তাকালাম ।
ওকে রিক্সা থেকে নামতে না দেখে আমি বললাম "নামবে না ?"
" তুমি উঠে আসো ।"
আমি ওর পাশে বসলাম । রিক্সা চলতে শুরু করল ।
"আমরা কোথায় যাচ্ছি ?"
" চল, গেলেই দেখবা ।"
আমি চুপ হয়ে যাই । আবার সেই অস্বস্তিটা ফিরে আসে । ও যে কি বলবে কে জানে ? আল্লাহ মান ইজ্জত রক্ষা কইরো ।
মীম বলল " কি এতো ভাবছো ? আর এরকম জড়সড় হয়ে বসেছো কেন ? ইজি হয়ে বসো । আর তোমার কি আনইজি লাগছে কোন কারনে ।"
" না । আনইজি লাগবে কোন ? আনইজি লাগার কোন কারন নাই ।"
কিন্তু আমার কণ্ঠস্বরে কিছু ছিল । মীম হেসে ফেলল । আমিও খানিকটা হাসলাম বোকার মত । রিক্সা থামল লেক পাড়ের কোন একটা রেস্টুরেন্টের সামনে । কোন দিন আসিও নাই আমি এদিকটায় । আর কি এক বিদ্গুটে নাম রেস্টুরেন্টার, ঠিক মত উচ্চারনও করতে পারলাম না ।
" এখানে কেন ?"
ও কেবল হাসলো । আমি বললাম "আজকের দিনে এরকম জায়গা গুলোতে খুব ভীড় থাকে ।"
ও আবার হাসলো । বলল "এসো তো ।"
এসব রেস্টুরেন্টে ঢুকতে আমার খানিকটা ভয়ই লাগে । আল্লাহই জানে cost কেমন হবে । মানিব্যাগে যা আছে তা দিয়ে মান সম্মান টিকবে ? কে জানে ? আবারও নিজের উপর খুব রাগ হল । কেন যে ঐ কাজটা করতে গেলাম । আজ আমার সত্যি সত্যি খবর আছে । হয় মীম বাঁশ দেবে নয়তো এই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার বাঁশ দিবে ! ভয়ে ভয়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম ।
ভেবেছিলাম খুব ভীড় হবে । কিন্তু একদম ভিড় নাই । অল্প কিছু জুটি বসে আছে প্রত্যেক টেবিলে । আর সব থেকে যে জিনিসটা আমার ভাল লাগলো সেটা হল আলো । সন্ধ্যা হলে যেমন আলো হয় চারিদিকে সে রকম আলো । বলতে হয় অদ্ভুদ এক আলো আধারির খেলা ।
মীম এক ওয়েটার কে যেন কি বলল । ওয়েটার টা আমাদের কে পিছনের দিককার একটা টেবিল দেখিয়ে দিল ।
টেবিলে বসতে বসতে বললাম "একদম ভীড় নেই তো ! আমি তো ভেবেছিলাম অনেক ভীড় হবে ।"
মীম আবার হাসলো । বলল "এটার কথা সবাই জানে না । আর এখানে আসার আগে বুকিং দিতে হয় ।"
আমি খানিকটা অবাক হলাম । আমার সাথে দেখা করার জন্য এতো আয়োজন !
মীম আমার মুখোমুখী বসে । এতোক্ষন পর মীম কে ভাল করে দেখার সুযোগ পেলাম । অন্য দিনের থেকে আজ ওকে একেবারেই অন্য রকম লাগছে । ও কখনই সাজগোজ সচেতন ছিল না । আজ ও বেশ ভালই সেজেছে । আর এই আলো আধারী পরিবেশে ওকে অদ্ভুদ সন্দর লাগছে । এতোক্ষন পর আমার মনে হল না আমি কোন ভুল করি নি । ওকে কার্ডটা দেওয়া মোটেই ভুল হয় নি ।
"অপু ! কি হল কথা বলছো না কেন ?"
" তোমাকে দেখছি ।"
মনে হল যেন ও খানিকটা লজ্জা পেল ।
"আজ তোমাকে সত্যিই অন্য রকম সুন্দর লাগছে ।"
এবার ও সত্যি সত্যিই লজ্জা পেল । আমি খানিকটা চুপ করে থেকে আবার বললাম "মীম তুমি রাগ কর নি তো ?"
" কেন ? রাগ করবো কেন ?"
" না তোমাকে ও কার্ডটা দিলাম । তুমি হয়তো ভাবো নি !"
মীম কিছু সময় নিলো । তারপর আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল "ভাবি নি ঠিক । তবে মনের মধ্যে এমন একটা ইচ্ছা ছিল আমার অনেক দিন থেকেই ।"
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । বলে কি এই মেয়ে !
"মনে আছে তোমার আমি যখন মেডিক্যালে চান্স পেলাম না , তুমি আমাদের বাসায় গিয়েছিলে দেখা করার জন্য , আমি তখন কাঁদছিলাম । তোমাকে দেখে মনে হল যে হয়তো তুমি আমাকে বিদ্রুপ করার জন্য এসেছো কিন্তু তোমার কথাগুলো শুনে আমার খুব ভাল লেগেছিল । আমার তখন মনে হয়ছিল সত্যিই তো এখন আমি কার সাথে কম্পিটিশন করবো ? কার সাথে তর্ক করবো ? কার সাথে ঝগড়া করবো ? নিজেকে কেন জানি সেদিন বড় একা একা লাগছিলো । তারপর তোমার সাথে একসাথে ঢাকা আসা । ফোনালাপ । গল্প । সব কিছুই যেন স্বপ্নের মত ।" একটানা কথা বলে মীম খানিকটা দম নিলো ।
আমি তাকিয়ে আছি ওর দিকে । এক বুক বিশ্ময় আর ভাল লাগে নিয়ে । বার বার মনে হচ্ছে এই মেয়েটা আমাকে ভালবাসে । চমৎকার এই মেয়েটা আমাকে ভালবাসে ।
" এমন করে কি দেখছো আমার দিকে ?"
মীম অন্য দিকে মুখ ঘোরালো ।
"মীম একটা সত্যি কথা বলব ?"
" বল ।"
" আমার মনে হয়েছিল যে তুমি আমাকে খুব ঝাড়ি মারবে ঐ কাজটা করার জন্য । কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সাহস করে ঐ কার্ডটা না দিলে আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেত !"
" ক্ষতি ?"
" হু । তোমাকে পেতাম কিভাবে ?"
" এখনও পাও নি বুঝছো ।"
" পাই নি ?" বলে ওর হাত ধরলাম । ও হাত সরিয়ে নিলো না । নিজেও আমার হাতটা ধরলো আরো ভালভাবে ।
"অপু এই যখন ধরেছো বল যে কোন দিন এই ছেড়ে দেবে না !"
" ভয় পেয় না । আমি ছেড়ে দেবো না ।"
কতক্ষন এভাবে ছিলাম কে জানে ওয়েটার মেনু এগিয়ে দিয়ে বলল
"স্যার কি আনবো ?"
মেনু আর প্রাইস লিস্ট দেখে আমার আবার সেই ভয়টা ফিরে এল । আজ সন্ধ্যায় সত্যিই আমার খবর আছে ।
(সমাপ্ত)

-------
(প্রথম প্রকাশঃ ২৭ শে অক্টোবর, ২০১১)

Continue Reading

You'll Also Like

5.8K 28 19
এই গল্পের সিরিজটা আমার রচনা না। আমি এটা পড়েছিলাম ওয়ার্ডপ্রেসে। স্ট্রেঞ্জার উম্যান নামে এক ব্লগার লিখেছিলেন বলে দেখেছিলাম। তাঁর প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা জা...
42.2K 1.2K 19
হঠাৎ বিয়ের কথা বার্তা শুরু হয়ে গেল। পরিচয়... ভাল লাগা,না লাগা...
12.9K 36 11
তানিমের ইরোটিক জগতে আপনাকে স্বাগতম। তানিম সিরিজের সবগুলো গল্প একসাথে। (সংগৃহীত সিরিজ)
3.2K 87 42
নীরদের জীবন নামক ধূসর আকাশকে বর্ণিল আকাশে পরিণত করার গল্প।