আগের পর্বের পর...
-কীরে কথাকে পার্সেলটা দিয়েছিস?
-হ্যাঁ।
-কেমন লাগছে কথাকে শাড়িটা পড়ে?
-আরে সে ম্যাডাম এখনো রেডি হচ্ছেন। তোরা মেয়েরা রেডি হতে কেন যে এতো সময় লাগাস বুঝতে পারিনা।
-আরে ভালো করে বলনা প্রেয়সী নিজের পছন্দ করা পোশাকে দেখার জন্য তুই আর অপেক্ষা করে থাকতে পারছিসনা।
-ধ্যাৎ তুইওনা যত ননসেন্স মার্কা কথাবার্তা বলিস। ফোনটা রাখ এখন। আমাকে আর না জ্বালিয়ে নিজের বরকে গিয়ে জ্বালা।
-ওহো বাবু লজ্জা পেয়ে গেছে। ঠিক আছে বাই বাই। তোদের সাথে শুটিং স্পটে দেখা হচ্ছে তাহলে।
ফোন কেটে হাসি ফুটে উঠলো রোশনির মুখে। ওর বেস্ট ফ্রেন্ডটি ফাইনালি তাহলে নিজের ব্যাচেলর ট্যাগটা হটাতে চলেছে, সেটাতে ওর থেকে বেশি খুশি আর কে হবে।
এ. বি ইন্ডাস্ট্রিসের বিজনেস মেনলি ইন্টিরিয়র ডিজাইনিং এবং মডার্ন হোম এপলায়েন্সস তৈরির হলেও কয়েকমাস হলো ওরা "লাজবন্তীস" নামে একটি ফ্যাশন ব্র্যান্ড ওপেন করেছে।
তাই কাল রোশনি যখন ওর ডিসাইনিং টিমকে নিয়ে অ্যাড শুটিংয়ে মডেলদের পড়ানোর জন্য "লাজবন্তীস"-এর কয়েকটা এক্সক্লুসিভ ড্রেস কালেকশন ওকে দেখাতে গিয়েছিলো তখন সেগুলোর মধ্যে থাকা গোলাপি শাড়িটা দেখেই অরণ্য কথাকে সেটা গিফ্ট করবে ঠিক করেছিল। তাই মিটিং শেষে রোশনিকে বলেছিলো এই শাড়িটা যেন সকালের মধ্যে পার্সেল করে পাঠিয়ে দেয় ও কথাকে এটা গিফ্ট করতে চায়।
অরণ্যর কথাকে কাজের অজুহাতে আটকে রাখা আর তারপর শাড়ি গিফ্ট করতে চাওয়া দেখে রোশনি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারে যে তার বাল্য বন্ধু আর কথার মধ্যে একটা মিষ্টি সম্পর্কের সূচনা হয়েছে। এটাও খুব ভালো বুঝতে পারে যে ওর বাল্য বন্ধুটি তার প্রিয় রমণীটিকে নিজের পছন্দ করা পোশাকে দেখার জন্য উৎসুক হয়ে আছে তাই শাড়িটা হাতে পাওয়ার জন্য ওর এতো তাড়া। কিন্তু মেয়েদের পোশাক সম্বন্ধে অজ্ঞ ওর বন্ধুটি এটা জানেনা যে শাড়ি পড়ার জন্য আরও কিছু বেসিক জিনিস প্রয়োজন হয়।
তাই বাল্যবন্ধুটির মনোবাসনাটা পূরণের জন্য রোশনি শাড়ির সাথে অন্যানো প্রয়োজনীয় জিনিস একেবারে পার্সেল করে পাঠিয়েছে।
.
.
.
ড্রয়িং রুমে বসে একটা বিজনেস ম্যাগাজিনের পাতা ওল্টাচ্ছিলো অরণ্য এইসময় একটি অতিপরিচিত সুবাস ওর নাকে এসে লাগে,,,,, লেভেন্ডার পারফিউমের সুমিষ্ট গন্ধের সাথে মিশে থাকা ওর প্রেয়সীর শরীরের নিজস্ব গন্ধ। ম্যাগাজিন থেকে মুখ তুলে সামনের সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে যায় অরণ্য।
সিঁড়ি দিয়ে ধীর পায়ে নেমে আসছে কথা। অরণ্যের দেওয়া শাড়ি আর এক্সেসরিজ গুলো পড়েছে ও। নিজের পোশাকের সাথে সামঞ্জস্য রেখে হালকা করে লিপস্টিক লাগিয়েছে ঠোঁটে সাথে কাজলের রেখা টেনেছে চোখের সীমানায়,,, চুলগুলো বরাবরের মতোই খুলে রাখা। ব্যাস এটুকুতেই শ্যামঙ্গিনী কথাকে অপরূপা লাগছে।

কথার লুক
অরণ্য যখন এই শাড়িটা কথার জন্য পছন্দ করেছিল তখন ওর মনে হয়েছিল কথাকে সুন্দর লাগবে শাড়িটা পড়ে। কিন্তু মেয়েটাকে যে এতটা মোহময়ী লাগবে সেটা ও ধারণা করতে পারেনি।
কথা সিঁড়ি থেকে নেমে অরণ্যের সামনে এসে দাঁড়ালে দুইজোড়া চোখের মিলন ঘটলো। অরণ্যর ইসৎ নীল চোখদুটোয় নিজের জন্য একরাশ মুগ্ধতা দেখে লজ্জায় মুখটা অবনত করে নিলো কথা। কিন্তু বেশিক্ষন এইভাবে থাকতে পারলোনা। ওর অবাধ্য চোখের দৃষ্টি আবার অরণ্যের ওপর গিয়ে স্থির হলো।
ক্যাজুয়াল লুকে সত্যিই আজ অনবদ্য লাগছে অরণ্যেকে। সাদা বডি ফিটিং শার্টটাতে সুগঠিত পুরুষালি চেহারাটা খুব ভালোভাবেই ফুটে উঠেছে। চোখে থাকা কালো ফ্রেমের চশমাটা ওর মুখের বুদ্ধিদীপ্ত ভাবটাকে আরও প্রকট করেছে।
অরণ্যকে দেখে একরাশ ভালোলাগা ছেয়ে যাচ্ছে কথার মনে। কে বলেছে পুরুষরাই শুধু প্রিয় নারিটির রূপে মুগ্ধ হয়, নারীরাও প্রিয়তমের রূপে সমানভাবে আকৃষ্ট হয়।

অরণ্যের লুক
প্রেয়সীকে নিজের দিকে লজ্জামিশ্রীত ভালোলাগা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে অরণ্য কথার কাছে গিয়ে ওর কোমরটা জড়িয়ে ধরে বললো
- আমিতো তোমারই, আমাকে দেখবে তাতে এতো লুকোচুরি করার কী দরকার।
-আ.. আমি মোটেও আপনাকে দেখছিলামনা। আমিতো... হ্যাঁ আমিতো আপনার গলায় ওই লাল দাগটা দেখছিলাম।
-ও তুমি আমাকে দেখছিলেনা অথচ কালকে যে একটা জংলী বিল্লি আমার গলায় কামড়ে দিয়েছিলো সেটা দেখতে পেলে।
-আমি মোটেও জংলী বিল্লি নয়।
-আরে আমি আবার কখন তোমাকে জংলী বিল্লি বললাম!!
-এইমাত্র তো বললেন আপনার গলায় জংলী বিল্লি কামড়ে দিয়েছে। ওটা তো আমিই করেছিলাম তাহলে আপনি উল্টো দিকে দিয়ে জংলী বিল্লি বলতে আমাকেই বোঝাতে চাইলেন তাইনা।
বিজ্ঞের মতো কথাটা শেষ করে অরণ্যর টেডি স্মাইলওয়ালা মুখের দিকে তাকাতেই রূপকথা বুঝতে পারলো ও ফ্লোয়ে ফ্লোয়ে কীসব বলে গেছে। উফফ এই লোকটাও না ডেভিল একটা ইচ্ছা করে ওকে রাগিয়ে দিচ্ছিলো যাতে কালকের রাতের কথা ওর মুখে স্বীকার করিয়ে ওকে ভালোরকম লজ্জায় ফেলতে পারে।
কথার লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখটা দেখে অরণ্য বললো
-এতো বেশি লজ্জা পেওনা সোনা। তোমার লজ্জারাঙা মুখটা দেখলে আমার নিজেকে সামলে রাখা মুশকিল হয়ে যায়। ইচ্ছা করে আদরে আদরে ভরিয়ে তুলি তোমাকে।
অরণ্যর প্রেমমিশ্রীত কথা শুনে কথার মুখে লেগে থাকা লজ্জার রঙটা আরও কিছুটা গাঢ় হলো। ও হালকা ধাক্কা দিয়ে অরণ্যকে নিজের সামনে থেকে সরিয়ে বাইরের দিকে ছুটে গেলো। অরণ্যও হাসতে হাসতে কথার দিকে এগোলো।
.
.
.
শুটিং স্পটে পৌঁছে অরণ্যের গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথেই বেশ কয়েজনের মুগ্ধতা ভরা দৃষ্টি কথার ওপর এসে পড়লো। কিন্তু অরণ্যর তীক্ষ্ণ দৃষ্টির শিকার হওয়ায় কেউ দ্বিতীয়বার আর সেই সাহস দেখালোনা। কথার হাত ধরে অরণ্য স্পটের দিকে এগিয়ে গেলো।
অরণ্য সবেমাত্র ষ্টুডিওয় ঢুকতে যাবে এইসময় একটি মেয়ে হঠাৎ করে এসে অরণ্যকে জাপ্টে ধরলো। আচমকা এরকম হওয়ায় কথার ধরে থাকা হাতটা অরণ্যর হাত থেকে ছেড়ে গেলো যার ফলে অরণ্যর থেকে কিছুটা দূরে সরে গেলো কথা।
.
.
.
❤️ক্রমশ❤️
কেউ আসছে কেউ আসছে..