যশবন্ত মধুরাকে নিয়ে সোজা ডাইনিং রুমে এসে দাঁড়ায়। চোয়াল শক্ত করে সিদ্ধার্থের দিকে তাকায়, সাথে সাথে রাগে ওর সর্ব শরীর থর থর করে কাঁপতে থাকে, দাঁতে দাঁত ঘষে চিৎকার করে বলে, "তুই মধুরাকে কিডন্যাপ করার জন্য লোক পাঠিয়ে ছিলিস জানোয়ার?........."
সাথে সাথে অদিতি দেবী ছেলের কাছে এসে বলেন, "সিদ্ধার্থ তোর দাদা হয় যশ, তুই এসব ওর নামে কি বলছিস?......"
"আমি ঠিকই বলছি মা,...... দাদাজী তুমি জানো ও কি করেছে?...... ও লোক লাগিয়ে মধুরাকে কিডন্যাপ করতে চেয়েছিল, তারপর ওকে বিয়ে করে......... ছি ছি দাদা তুই এতটা ছোট মনের মানুষ আমি জানতাম না, তুই এমনটা করবি জানলে আমি আমার সব সম্পত্তি তোর নামে লিখে দিতাম........তবে একটা কথা তুই ভালো করে শুনে রাখ..... আজ থেকে মধুরা আমার সাথে এই বাড়িতেই থাকবে, আমি পণ্ডিতজীর সাথে কথা বলে শুভ দিন ঠিক করে মধুরাকে বাড়ির বউ করবো, আর এরপর যদি তুই ওর দিকে চোখ তুলে তাকানোরও চেষ্টা করিস না তো সবাই সাক্ষী রইলো তোর চোখ আমি খুবলে নেবো......." যশবন্তের কথায় মধুরা ভয় পেয়ে ওর কাছে এগিয়ে এসে ওর এক হাত জড়িয়ে ধরে।
"সে কি রে যশ তুই আবার এসব কবে থেকে?......." খুব জোড়ে হেসে ওঠে সিদ্ধার্থ....." এতদিন তো সবাই বলতো আমি নাকি মেয়ে নিয়ে পড়ে থাকি, রোজ রোজ নতুন নতুন মেয়ে নিয়ে সময় কাটাই, হ্যাঁ কথাটা ভুল কিছু না, কিন্তু এখন থেকে তুইও?......."
সিদ্ধার্থের কথায় যশবন্ত টেবিলের ওপর খুব জোড়ে করাঘাত করে।
"দাদাজী আমার কাছে সিদ্ধার্থের কু কীর্তির সব প্রমাণ আছে, তুমি দেখতে চাও?......" যশবন্তের কথায় অরবিন্দ বাবু মাথা নাড়ায়, আর ঠিক তার সাথে সাথেই যশবন্ত ওই চারজন লোককে অরবিন্দ বাবুর সামনে এনে দাঁড় করায়। ওরা চারজনেই অরবিন্দ বাবুর সামনে নিজেদের দোষ স্বীকার করে, এবং এসবের জন্য সিদ্ধার্থকে দায়ী করে।
"হ্যাঁ, আমি ওদের পাঠিয়ে ছিলাম মধুরাকে কিডন্যাপ করতে, কেন, কি ভুল করেছি আমি? সব ভালো জিনিষ কি শুধু যশই পাবে নাকি?...... আমার মেয়েটাকে পছন্দ হয়েছিল তাই ওকে কিডন্যাপ করতে লোক পাঠিয়ে ছিলাম, যশের মতো আমারও তো লোভ হয় নাকি?........" সিদ্ধার্থের এই কথায় যশবন্ত চিৎকার করে ওর দিকে তেড়ে যেতে গেলে আশিস বাবু ও আনন্দ (Anand Chaturvedi, Yashwant এর বাবা) দুজনে মিলে যশবন্তকে আটকান......." মধুরার ব্যাপারে আর একটা কথা বললে তোর জিভ আমি ছিঁড়ে ফেলবো জানোয়ার........"
যশবন্তের কথায় জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে সিদ্ধার্থ। আর ঠিক তখনই অরবিন্দ বাবু নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে সিদ্ধার্থের সামনে এসে দাঁড়ায়, চোখের পলকে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ঠাটিয়ে একটা চড় কসান সিদ্ধার্থের গালে.......
"তোমার সাহস কি করে হয় মেয়েটার সম্বন্ধে এসব নোংরা কথা বলার?......." এই প্রথম অরবিন্দ বাবুকে লক্ষ্য করে মধুরা, মনে মনে ভাবে, " এনার সাথেই তো আমার সেদিন রাস্তায় দেখা হয়েছিল, আমার নাম জানতে চেয়েছিলেন, তারপর তো একটা ব্লাস্ট হলো......" বিস্ময়ের চরমে পৌঁছে যায় মধুরা।
"তোমার জায়গায় যদি অন্য কেউ এই কথাগুলো বলতো তাহলে আমি তাকে আজ বাড়ি থেকে বের করে দিতাম....... এই তুমি তোমার ছেলেকে মানুষ করেছো বড় বৌমা, সিদ্ধার্থ যে আমার নাতি, সেটা আমার ভাবতেই ঘেন্না করছে...... এবার তো দেখছি আমাকেই কিছু একটা করতে হবে..... আমি এখুনি lawyer কে ফোন করছি, আমি সন্ধ্যের মধ্যে এর ব্যবস্থা করবো, তোমরা সবাই সন্ধ্যে বেলায় আমার ঘরে উপস্থিত থাকবে....... আর মধুরা, মা তুমি তোমার ঘরে যাও, যশবন্ত যেমনটা বললো আমি নিজে দাড়িয়ে থেকে তোমাদের দুজনের বিয়ে দেব........" কথাগুলো শেষ করে অরবিন্দ বাবু ওখান থেকে চলে যান। ওনার সাথে সাথে যশবন্ত, মধুরা, অদিতি দেবী, আনন্দ বাবু আর মুসকানও ওখান থেকে চলে যায়।
সবাই চলে যেতেই আসিস বাবু পেছন ঘুরে অপলা দেবীর দিকে তাকান, দাঁতে দাঁত চেপে বলেন, " যখনই আমি ভাবি বাবা আমার কাজে খুশি হবেন, আমার প্রশংসা করবেন ঠিক ততবার তুমি আর তোমার গুণধর ছেলে মিলে আমার মান সন্মান মাটিতে মিশিয়ে দাও, সারাদিন দুজনে মিলে আমার পেছনে ষড়জন্ত্রের জাল বুনে যাও, atleast যা করবে সেটা তো আমাকে জানানো যায় নাকি, তাহলে যখন কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে আসবে সেটাকে আমি সময় থাকতে মারতে পাড়ি,......কিন্তু না তোমরা তো সেটা করবে না, তোমরা যে যার নিজেদের মতো চলবে, তোমরা মা আর ছেলেতে মিলে আমার জীবনটা নরক বানিয়ে ছেড়েছো, বারবার আমাকে ভাইয়ের সামনে ছোটো করেছো......... আগে যদি সিদ্ধার্থের জন্য আমার মাথা নিচু হয় আমি প্রতিজ্ঞা করছি অপলা তোমার এই ছেলেকে আমি এখানেই জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো...... রাস্কেল একটা......." কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে ওখান থেকে চলে যান আসিস বাবু।
.........................................................................................
আচ্ছা গল্পের character গুলো বোধয় একটু গুলিয়ে যাচ্ছে...... তো একঝলকে দেখে নেওয়া যাক.......
অরবিন্দ চতুর্বেদি (Junera ওর আরও চারটি কোম্পানির কর্ণধার), বিপত্নীক আপাতত কোম্পানির খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া কোনও কাজ দেখেন না।
আশিষ চতুর্বেদি ( অরবিন্দ বাবুর বড়ো ছেলে), কোম্পানিতেই যশবন্তের সাথে কাজ করেন।
অপলা চতুর্বেদি (আশিষ চতুর্বেদির স্ত্রী)
সিদ্ধার্থ চতুর্বেদি (আশিষ চতুর্বেদি ও অপলা চতুর্বেদির জ্যেষ্ঠ সন্তান)
মুসকান চতুর্বেদি (আশিষ চতুর্বেদি ও অপলা চতুর্বেদির কনিষ্ঠ সন্তান)।
আনন্দ চতুর্বেদি (অরবিন্দ বাবুর ছোটো ছেলে), ইনিও আশিষ বাবুর মতো কোম্পানির কাজ দেখেন।
অদিতি চতুর্বেদি ( আনন্দ চতুর্বেদির স্ত্রী)
যশবন্ত চতুর্বেদি (আনন্দ চতুর্বেদি ও অদিতি চতুর্বেদির একমাত্র সন্তান) এবং কোম্পানির সব দায়িত্ব তার ওপর, ডিল সাইন করা থেকে শুরু করে কোম্পানি সম্পর্কিত যেকোনো গুরুত্তপূর্ণ সিদ্ধান্ত যশবন্তের কথা ছাড়া হয় না, আর অরবিন্দ বাবুর কথায় এর জন্য যশবন্ত কাউকে জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়.......
আজাদ ত্রিপাঠী ( যশবন্তের অ্যাসিস্ট্যান্ট, বন্ধু, ভাই সবই বলতে পারেন like brother from different mother relation) যশবন্তের সব কথা আজাদের কাছে অর্ডারের মতো আর তাতে কোনও দিনও না করেনি আজাদ।
মধুরা শ্রীবাস্তব ( গল্পের নায়িকা তথা যশবন্তের হবু স্ত্রী)
মিনাক্ষী শ্রীবাস্তব ( মধুরার মা)
ব্যাস আপাতত এটুকু পরের character সম্পর্কে পরবর্তী পর্বে জানতে পারবেন.....
Do Like Comment and follow......