পালিয়ে যাবার পরে-১

31 2 1
                                    

আমি তোমাকে কেন ভালবাসি জানি না। তবুও দূরে আছি কেনো তাও জানি না৷ আমার কাছে কোনো উত্তর নাই৷ আমিও নিজের কাছে উত্তর খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে গেছি৷ আমার খুব অদ্ভুত এক দুঃখবোধের প্রতি টান হয়েছে৷ নিজেকে নির্বাসিত রাখার একটা নেশা ঢুকে বসে যাচ্ছে৷ আমি জানি না কেনো এই সিচুয়েশন। আমি কি চাই? আমি কি খুঁজছি? কাকে আবিষ্কার করতে চাইছি? এইভাবে ঝুলে থাকার মধ্যে কি রোমাঞ্চ? স্মৃতির চোরাগলি তে তোমার আনাগোনা কেনো এতো? আমি তো নির্বাসিত হতে চেয়েছি। পালাতে চেয়েছি। সময়ের এই স্বার্থপর হিসেব নিকেশ থেকে মুক্ত থাকতে চেয়েছি। নতজানু হবার ভয়ে অনবরত ছুটে গেছি। কিন্তু তোমার ওই চোরাগলিতেই কেনোই বা বারবার হারিয়ে গেছি? তুমি কি দেখতে পাও না আমি হারিয়ে গেছি? আমি ধরা দিতে চাই না। তবু কেনো জানি চাই তুমি দেখো, এই আমাকে দেখো, আমি যে হারিয়ে গেছি, অথচ তোমাকে ফাঁকি দিয়ে আবার পালিয়েও গেছি। চোখ তুলে তাকাও। আমাকে খুঁজতে বেরোয়। কিন্তু তুমি আমাকে খুঁজে পাবে না। আমি ঘুরে ফিরে আসব, তোমার ওই চোরাগলিতেই হারাব৷ তবু তোমাকে ছোঁবো না৷ আমাদের সমীকরণ মিলবে না জেনেও আমি অপনয়ন কষব। আমি দু পৃষ্ঠা তিন পৃষ্ঠা করে করে খাতা এগিয়েই যাবো। মিলবে না। ভালোর ব্যাপার হলো, আমার বাবা এই খাতা দেখেন না। তিনি দেখলে ভীষণ নারাজ হতেন। হয়ত বা টিভি ভাঙতেন আবার। কিন্তু আমার হলে টিভি নেই৷ হা হা হা। আচ্ছা আমার কথা কি খুব অপ্রসন্ন শোনাচ্ছে? লাগারই কথা। ওই যে বলেছি, বারবার হারিয়ে যাই? অথচ তুমি হারালে কিন্তু আমার শহর তোমার নিঁখোজ বিজ্ঞপ্তি তে ছেয়ে যেতো। আচ্ছা কি হয়েছে বলো তো এই শহর টার? মাঝে মাঝে আমার মুখ চেপে ধরে, শ্বাসরোধ করতে চায়। কিন্তু মারে না। মৃত্যু আর জীবনের মাঝখানে যেখানটায় সন্ধ্যা হয়, সে সময়টাতে গিয়ে আমায় আটকে রাখে। সন্ধ্যাটা শেষ হতে চায় না। তোমাদের এই শহরটায় রাত বেশ বড়। অথচ আমি যেখানে থাকতাম, আশৈশব কি সুন্দর ওই চেকের চাঁদর দেয়া আম্মুর খাটে আমার গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতে ভালো লাগতো। রাত কেটে যেত ওই ঘুমে। সে আমারই এখন ঘুম হয় না। চোখ দুটা কোটরগ্রস্থ হচ্ছে দিন দিন। চশমা পরে থাকি বলে তেমন বুঝা যায় না। আমার ক্লান্তিবোধও আসে না৷ আমি পরদিন উঠে আবার দৌড়োতে পারি। দ্রাব্যতার গুণফল, ফ্লুইড মোজাইক মডেলের ক্লাস নিতে গিয়ে কথার ফুলঝুরি ছোটাতে পারি। কিন্তু তুমি কি আমার এই চোখ দেখে টের পাও না? চশমার এই স্বচ্ছ কাঁচটার ভেতর দিয়ে চোখ দুটো কি কথা বলে শুনতে পাও না? ওরা কি কোনো কবিতা বলে? বলার কথা না৷ কবি বোধোয় নিহত। আমিও বহুদিন কবির কোনো চিঠি পাই না। হয়ত বা লিখেছিলো কবি। পশ্চিমের ডাকে নিশ্চয়ই কোনো গোলযোগে চিঠি এসে পৌঁছায় নি। আমি তোমার চোখেও উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছি বহুবার। কিন্তু তুমি আর তোমার চোখকে কেনোই বা অগত্যা সেই চোরা গলিটাতেই কেনো লুকিয়ে যেতে হবে আবার? আমি যে হারিয়ে যাচ্ছি তুমি কেনো দেখো না! কি অদ্ভুত লুকোচোরি খেলছি আমরা। এইভাবে যদি কেটে যায় সময় আমাদের। কি হবে? খুব অনিশ্চিত কোনো ভবিষ্যতের ভয় কি তোমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে? তবে এত ভয় নিয়ে কেনো আসো? কেনোই বা আবার চলে যাও। তোমার এই অনাকাঙ্ক্ষিত অকারণ গন্তব্যহীন প্রস্থানে এই প্রান্তর বিষাদগ্রস্হ হয়। তোমার চলে যাওয়া পথের ধুলিমাখা আস্তিনে আমার আত্মা পুরোনো কোনো রেখা খুঁজে নেবার চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়। আমি পালিয়ে যাই। আচ্ছা যদি কখনো অঘোর শ্রাবণ নামে? তোমার ওই পথের রেখা যদি মুছে যায়? আমি কিভাবে খুঁজব তোমার ওই চোরাগলি? আমি তোমার হাসির শব্দ শুনতে পাই। রিন রিন করে বাজতে থাকে আমার কানে। আমি চোখ বন্ধ করে কান পেতে থাকি জানালায়। আমার শব্দ ফুরিয়ে যায়, কলমও থেমে যায়।
জানো? গ্রীক গল্পে স্যাটুরয় "সাইলেনাস"কে যখন রাজা মিডাস ঝর্ণার জলের সাথে মদ মিশিয়ে খাইয়ে ধরে ফেলেছিলেন, তখন সাইলেনাস এই জ্ঞান দিয়েছিলো যে, না জন্মানোর চেয়ে সুখের জিনিস আর নেই। যদি জন্মে যাও, যত তাড়াতাড়ি পারো মরে যাও। আমি এসব ভাবতে থাকি। কি হতো যদি নাইবা জন্মাতাম?
তোমার গন্ধে মাদকতায় আমার আত্মা গভীর মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। আবার গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। সেই চেকের চাঁদর দেয়া বিছানার কথা মনে আসে৷ কেনো তুমি বারবার ডেকে আনো আমাকে? কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!...

You've reached the end of published parts.

⏰ Last updated: Nov 02, 2019 ⏰

Add this story to your Library to get notified about new parts!

পালিয়ে যাবার পরেWhere stories live. Discover now