অধ্যায় ২

99 1 0
                                    

রজার টেলিভিশনের আওয়াজ আবার কমিয়ে দিল এবং যন্ত্রটিকে পেছনে রেখে দাড়াল।
"লেভিটেশন!" সে বলল, " এটাই। মানুষের কিছু ক্ষমতা আছে যার মাধ্যমে সে নিজেকে শূন্যে ভাসমান রাখতে পারে। তার এই সামর্থ রয়েছে। মানুষ শুধুমাত্র জানে না কিভাবে এই ক্ষমতা ব্যবহার করতে হয়-- শুধুমাত্র যখন সে ঘুমন্ত থাকে তখন ছাড়া। তারপরও, কখনো কখনো, তারা নিজেদের লিফট করতে পারে, সম্ভবত ইঞ্চির দশভাগের একভাগ। এটা করো জন্য বোঝা অসম্ভব যদি তারা খেয়ালও করে, কিন্তু এটা যথেষ্ট একটা প্রপার সেনসেশনাল শূন্যে ভাসার স্বপ্ন শুরু করার জন্য।"
"রজার, তুমি প্রলাপ বকছ। আমার মনে হয় তোমার এখন থামা উচিত।"
রজার বলতেই থাকল," কখনো কখনো আমরা আস্তে আস্তে ডুবতে থাকি এবং উত্তেজনাটা থেকে যায়। তারপর আবার, কখনো কখনো ভাসমান কন্ট্রোলটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় এবং আমরা পরে যাই। জেন, তুমি কখনো স্বপ্নে নিজেকে পরে যেতে দেখেছ?"
"হ্যাঁ, অব....।"
" তুমি একটি উচু দালানের সাইডে ঝুলে আছ অথবা কোন সিটের একেবারে সাইডে বসে আছ এবং হঠাৎ নিচে পরে গেলে। পরে যাবার ভয়াবহ ধাক্কা খেয়ে তুমি লাফ দিয়ে জেগে উঠ, তোমার শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হয়ে যায়, তোমার হৃদকম্পন বেড়ে যায়। তুমি আসলেই পরে গিয়েছিলে। আর কোন ব্যাখ্যা নেই।"
জেনের অভিব্যক্তি, অপ্রতিভ অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে সচেতন হয়ে উঠল, হঠাৎ দুষ্টুমি হাঁসিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেল।
" রজার, তুমি শয়তান। আমাকে বোকা বানিয়েছ তুমি! তুমি একটা ইঁদুর!"
"কী?"
" ওহ্ না। তুমি আমার সাথে আর খেলতে পারবে না। আমি জানি তুমি আসলে কি করছ। তুমি একটা গল্পের প্লট বানাচ্ছ এবং তুমি এটা আমাকে দিয়ে পরীক্ষা করছ। তোমার কথা শোনার সময়ই অামার এটা বোঝা উচিত ছিল।"
রজারকে চমকিত মনে হল, এমনকি কিছুটা বিভ্রান্ত। সে জেনের চেয়ার আকড়ে ধরল এবং নিচু হয়ে তাকাল তার দিকে, " না, জেন।"
" না হবার তো আমি কিছু দেখছি না। তুমি একটা ফিকশন লেখার কথা তোমার সাথে আমার পরিচয় হবার পর থেকেই। তা তুমি যদি প্লট পেয়ে থাক, ভাল হয় তুমি এটা লিখে ফেল। এটা দিয়ে আমাকে ভয় দেখানোর দরকার নেই।" জেনের আঙ্গুল এমনভাবে উঠালো যেন ওর আত্মা দাড়িয়ে গেছে।
" জেন, এটা গল্প নয়।"
" তাহলে কী --?"
" আমি যখন সকালে ঘুম থেকে উঠলাম, আমি দেখলাম ম্যাট্রেসের উপর পড়ছি।"
রজার বলছিল চোখের পলক না ফেলে," আমি স্বপ্ন দেখছিলাম যে আমি উড়ছি।" সে বলল," এটা স্পষ্ট এবং ঝকঝকে। প্রতিটি মিনিট আমার মনে আছে। আমি আমার পিঠের উপর শুয়ে ছিলাম যখন আমি জেগে উঠলাম। আমার খুবই আরামবোধ হচ্ছিল এবং আনন্দ লাগছিল। আমি একটু অবাক হলাম সিলিংটা এত পরিস্কার দেখছিলাম কেন। আমি হাই তুললাম, আড়মোড় ভাঙ্গলাম এবং সিলিং স্পর্শ করলাম। এক মিনিটের জন্য, আমি স্থির দৃষ্টিতে দেখলাম আমার হাত উপরে উঠছে এবং সিলিং এর সাথে ধাক্কা খেল।"
" তখন আমি ঘুরে গেলাম। আমি একটা মাসল্ও মুভ করিনি, জেন। আমি জাষ্ট ঘুরে গেলাম কারন আমি ঘুরতে চাচ্ছিলাম। ঐখানে আমি ছিলাম, বিছানা থেকে পাঁচ ফিট উপরে। ওখানে তুমি বিছানায়, ঘুমাচ্ছ। আমি ভয় পাচ্ছিলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম না কিভাবে নিচে নামব, হঠাৎ যে মুহুর্তে আমি নিচে নামতে চাইলাম, আমি নেমে এলাম। আমি নেমে এলাম ধীরে ধীরে। পুরো প্রকৃয়াটা একেবারে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে ছিল।"
"আমি নড়াচড়া করার সাহস সঞ্চয় করতে পুরো পনেরো মিনিট বিছানায় ছিলাম। তারপর আমি বিছানা ছাড়লাম, গোছল করলাম, কাপড়চোপড় পাল্টালাম এবং কাজে চলে গেলাম"
জেন জোড়ে হেঁসে ফেলল, " ডারলিং, তুমি বরং এটা লিখে ফেল। কিন্তু সেটা ঠিক আছে। তুমি ইদানিং খুব বেশী পরিশ্রম করছ।"
" প্লিজ, ফালতু কথা বলো না।"
" মানুষ প্রচুর পরিশ্রম করে, তারপরও তার মনে হয় খুবই তুচছ পরিমান কাজ হয়েছে। শেষ কথা হলো, তুমি পনেরো মিনিট বেশী স্বপ্ন দেখেছ তুমি যতটুকু ভাবছ তার চাইতে।"
"এটা কোন স্বপ্ন ছিল না।"
" অবশ্যই এটা স্বপ্ন ছিল। আমি গুনেও শেষ করতে পারব না এমন বহুবার আমি স্বপ্ন দেখেছি যে আমি জেগে উঠেছি, কাপড়চোপড় বদলেছি এবং সকালের নাস্তা তৈরী করেছি; তারপর যখন আসলেই ঘুম থেকে জেগেছি দেখলাম কাজগুলো আবার করতে হচ্ছে। এমন কি স্বপ্নের মধ্যে আমি স্বপ্ন পর্যন্ত দেখেছি, বুঝতে পারছ কি বোঝাতে চাইছি। এটা বিশ্রীরকম বিভ্রান্তিকর একটা ব্যাপার।"
"দেখ, জেন। আমি সমস্যাটা নিয়ে তোমার কাছে এসেছি কারন আমি বিশ্বাস করি একমাত্র তোমার কাছেই আমি ফিলিংসটা খুলে বলতে পারি। প্লিজ, ব্যাপারটাকে সিরিয়াসলি নাও।"
জেন ওর নীল চোখ বড় করে তাকাল,"ডারলিং! আমি তোমার কথা সিরিয়াসলি নিচ্ছি যতটুকু আমার পক্ষে সম্ভব। তুমি পদার্থবিজ্ঞানেরর অধ্যাপক, আমি না। গ্র্যাভিটেশন ব্যাপারটা কি সেটা তুমি ভাল জান, আমি না। তুমি ব্যাপারটা সিরিয়াস ভাবে নিতে যদি আমি তোমাকে বলতাম আমি শূন্যে ভাসতে পারি?"
" না, না! সেটাইতো আসল সমস্যা। আমি এটা বিশ্বাস করতে চাচ্ছি না। শুধুমাত্র আমিই ধরতে পেরেছি। এটা স্বপ্ন না, জেন। আমি নিজেকে বোঝাতে চেয়েছি এটা স্বপ্ন। তোমাকে আমি বোঝাতে পারব না নিজেকে আমি কতভাবে বলেছি কথাগুলো।যখন আমি ক্লাস নিচ্ছিলাম, আমি নিশ্চিত ছিলাম এগুলো স্বপ্ন। তুমি নাস্তার সময় আমার মধ্যে কোন বিচিত্র ব্যাপার খেয়াল করেছ?"
"হ্যা, করেছি, এখন আমি ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছি।"
" ভাল, এটা হয়ত অতটা বিচিত্র ছিল না বা তুমি হয়ত এটা খেয়াল করেছ। যাই হোক, আমি আমার সকাল নয়টার লেকচার ঠিক মতই দিয়েছি। এগারোটার মধ্যে, আমি পুরো ঘটনাটা ভুলেই গিয়েছিলাম। তারপর, লাঞ্চের ঠিক পরপর, আমার একটা বই দরকার হলো। কোন একটা অধ্যায় এবং - যাই হোক, বইটা বিষয় না; আমার আসলে ওটা দরকার ছিল। ওটা ওপরের একটা সেলফে ছিল, কিন্তু আমি ওটার নাগাল পেলাম। জেন - "
সে থামল।
" ঠিক আছে, বলে যাও, রজার।"
" দেখ, তুমি কখনো তোমার ঠিক এক কদম দুরের কোন জিনিস ধরতে চেস্টা করেছ? তুমি নিজেকে বাঁকাও এবং অটোম্যাটিক্যালি একটা কদম বাড়িয়ে দাও এটাকে ধরার জন্য। এটা পুরোপুরি অনিচ্ছাকৃত।  এটা জাস্ট তোমার শরীরের একটা ওভার অল কোঅর্ডিনেশন।"
" ঠিক আছে। তো কি বোঝাতে চাচ্ছ?"
" আমি বইটা নিতে চাচ্ছিলাম এবং অটোম্যাটিক্যালি আমার পা উপরের দিকে ফেললাম। বাতাসের উপর, জেন! একেবারে শূন্যের উপর!"
" আমি জিম শার্লেকে ফোন করতে যাচ্ছি,  রজার।"
" ধ্যাৎতেরিকা, আমি অসুস্থ নই।"
" আমার মনে হচ্ছে তোমার ওর সাথে কথা বলা দরকার। সে আমাদের বন্ধু। এটা ঠিক ডাক্তারের কাছে যাওয়া নয়। ও শুধু তোমার সাথে কথা বলবে।"
" এতে কি ভালটা হবে শুনি?" রজারের মুখ হঠাৎ রাগের চোটে লাল হয়ে গেল।
" সেটা পরে দেখা যাবে। তুমি এখন বস, রজার। প্লিজ।" জেন টেলিফোনের কাছে গেল।
রজার ওকে থামাল আর জোড়ে কব্জিতে ধরে নিজের দিকে ফেরাল।
" তুমি আমাকে বিশ্বাস করছ না।"
" ওহ, রজার।"
" না, তুমি করছ না।"
" আমি তোমাকে বিশ্বাস করি। অবশ্যই, আমি তোমাকে বিশ্বাস করি। আমি শুধু চাচ্ছি -"
" হ্যা, তুমি শুধু চাচ্ছ আমি জিম শার্লের সাথে কথা বলি। এই  পরিমান তুমি আমাকে বিশ্বাস কর। আমি তোমার কাছে সত্য কথা বলছি আর তুমি চাইছ আমি একজন সাইক্রিয়াটিস্ট এর সাথে কথা বলি। দেখ, তোমার আমার কথা বিশ্বাস করার কোন দরকার নেই। আমি এটা প্রমান করতে পারব। আমি প্রমান করতে পারব আমি শূন্যে ভাসতে পারি!"
" আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।"
" বোকার মত কথা বলো না। আমি বুঝতে পারি যখন আমাকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করা হয়। সোজা হয়ে দাড়াও! এখন আমাকে দেখ।"
রজার পিছিয়ে ঘরের মধ্যখানে চলে গেল এবং মেঝেতে কোন ধাক্কা না দিয়ে মেঝে থেকে উপরে উঠে গেল। সে ভাসতে লাগল; ওর জুতোর তলা থেকে কার্পেট পর্যন্ত ছয় ইঞ্চি পরিমান জায়গা ফাঁকা।
জেনের চোখ আর মুখ গোল হয়ে গেল। সে ফিসফিস করে উঠল, " নেমে এস, রজার। ও আমার খোদা, নেমে এস।"
রজার নেমে আসল, ওর পাগুলো মেঝেতে কোন আওয়াজ ছাড়া স্পর্শ করল। " দেখেছ, তুমি?"
" ও আল্লাহ, ও অাল্লাহ।"
ও রজারের দিকে স্হির দৃস্টিতে তাকিয়ে রইল, কিছুটা ভীত, কিছুটা অসুস্থ।
টেলিভিশনে, এক বিশালবক্ষা রমনী নিঃশব্দে কিছু পুরুষের সাথে গান গাইছিল আর নাচছিল।

বিলিফ (BELIEF)Where stories live. Discover now