অন্ধিসন্ধি

Da romia_rebel

186 2 0

রিয়া নামক একটি বাঙালি মধ্য বৃত্য পরিবারের মধ্য বয়স্ক মহিলার লেখা , তার জীবনে ঘটে চলা কিছু অদ্ভুত , অব্যাক্ত... Altro

হয়তো বিভ্রম
বান্ধবী

আমার অদ্ভুত সূচনা

111 1 0
Da romia_rebel



অনেক দিন ধরে ভেবে আজ আমার এই গল্প লেখা । অবিশ্যি এটাকে গল্প বলবো না বাস্তব , কোন অলৌকিক ঘটনা নাকি শুধুমাত্র বিকৃত মস্তিষ্কের কোন এক উদাহরণ - কোনটাই আমি জোড় গলায় বলতে পারবোনা ।  আমি শুধু আজ এখানে আপনাদের গল্প গুলি জানাতে চাই । বাকিটা আপনাদের উপর । 

গল্পের শুরুতে বলে রাখি - এই গল্পে আমি যা যা উল্লেখ করব সে সব কথা আমার জন্য অদ্ভুত , তার কারণ আমি নিজেই এই সবের ভাগীদার । এই গল্পে যা বলবো সে সব আমার সাথে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা । এরম অনেক কিছু আশ্চর্য ঘটনার সাক্ষী আমি সেই ছোট বেলা থেকেই । কাউকেই ঠিক করে বলে বা বুঝিয়ে উঠতে পারিনি কোনোদিন । তাই সব কিছু আস্তে আস্তে নিজের মধ্যেই রাখতে শুরু করে দিই ।  বড় হয়ে ওঠার পথে মা ,বাবা , বন্ধু-বান্ধবদের বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু যা হয় - হয় আমাকে চুপ করে থাকতে বলে দেওয়া হল , না হয় লোকেরা হাসা-হাসি করতে শুরু করল আমার পেছনে । তাই একদিন ঠিক করে ফেললাম ,নাহ !! আর কাউকে বলবনা , কিচ্ছু বলবনা । কিন্তু আজ এতদিন পর ভাবলাম কাউকে বলতে পারছিনা , লিখতে তো পারিই । তাই আজ থেকে আমি আমার জীবনে ঘটে যাওয়া সবকটা ঘটনা এক এক করে তুলে ধরবো  । 

আজ আপনাদের যেই গল্পটি বলবো সেটা আমার এই  সব ঘটনার সূচনা । এই ঘটনাটার পরেই শুরু হয় আমার জীবনের অবিশ্বাস্য জিনিস গুলো । তখন আমি ছোট, সাল ছিল ২০০০ । সাল টা মনে থাকার কারণ - সেই বার খুব ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার ফলে বন্যা হয়েছিলো এবং অনেকটা জল আমাদের নিচের তলায় সব ভাসিয়ে দিয়েছিল । সেই ৫-৭ দিন আমাদের পাড়ায় বিদ্যুৎ ছিল না। বৃষ্টির দ্বিতীয় রাতে আমরা , মানে মা-বাবা আর আমি তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পরেছিলাম , প্রায় ৯টা নাগাদ । নাহলে বিদ্যুৎ থাকলে আমাদের বাড়িতে  রাতে ১১-১২ টার আগে কেউ ঘুমায় না । 

পররের দিন সকালে বেশ ঠাণ্ডা লাগার জন্য একটু তাড়াতাড়িই ঘুম থেকে উঠে গেলাম । ঘুম তখন ভাঙ্গেনি ঠিক করে । রীতিমত ঘুম-ভাঙ্গা চোখ নিংড়াতে- নিংড়াতে মশারিটা তুলে , বিছানা থেকে নিচে লাফ দিলাম । ছপাক  !!!! আমি পরলাম এক বুক বন্যার জলে । আমি কিছু ভেবে ওঠার আগেই মা দেখি  জলে কল-কল শব্দ করে জোর কদমে আমার দিকে প্রায় ছুটে এল । এসে একটা সস্থির নিশ্বাস ফেলে বলল তাড়াতাড়ি উপরের তলায় চলে যেতে । আমি বেশি কথা না বলে চুপ-চাপ ঘাড় নাড়িয়ে বাধ্য মেয়ের মতো সিঁড়ির দিকে যেতে লাগলাম । কিন্তু যতই বাধ্য হই ,  বন্যার কথা আমি আগেই শুনেছি  বড়দের কাছে , এই প্রথম নিজের চোখে দেখা । শুধু দেখাই না স্বপ্নের মতো । ঘুম থেকে উঠে একদম গঙ্গা স্নান ... উফফ!! ব্যাপারই আলাদা । তাই সিঁড়ির দিকে গেলাম বটে , কিন্তু অনেকটা সময় কাটিয়ে কাটিয়ে । জানিনা কেউ বিশ্বাস করবে কিনা এই সময় - তখন ঘরের ভিতর জলের সাথে সাথে অনেক রকম মাছও ঢুকে এসেছিল । সিঁড়িতে চড়েও আমি ওই মাছ গুলো দেখছিলাম বসে-বসে । তার পরেই দেখলাম বাবা আসছে , আর কি উপরে দৌড় লাগালাম বাপ-বাপ করে । 

 উপরের তলায় তখন সিমেন্ট মারা দেওয়াল ও মেঝে , জানলা- দরজা- তখন কিছুই ছিল না , শুধু কাঠামোটাই ছিল । এখন আমাদের যেই ডইনিং রুম , সেখানেই তখন আমাদের শোয়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছিলো । দুপুরে আবার বৃষ্টি নামলো ঝমঝমিয়ে । আমি আর কি করি , তখন পুতুল নিয়েই খেলতে খেলতে কখন ঘুমিয়ে গেছিলাম , আমার মনে নেই । 

যখন ঘুম ভাঙল , তখন আর বাইরে থেকে কন আলো আসছিলনা । কিন্তু দূরের কোন একটা বাড়িতে কেউ সন্ধ্যা দিচ্ছিল শঙ্খ বাজিয়ে ।  মা-বাবা তখন উপরের বারান্দায় বসে চা খাচ্ছিল  । বৃষ্টিটা অনেকটা ধরে এসেছে , এখন আর জলের ছাট ভেতরে ঢুকছে না । আমি গিয়ে মায়ের কোলে লুটিয়ে পরলাম । ভাগ্যিস ! মায়ের চা খাওয়া শেষ হয়েগেছিল , নাহলে একচোট বকা কপালে ছিল। মা আমাকে কিছু বলল না উলটে আদর করে দিল । বাবা আমাকে ডেকে নিয়ে গেলো একটা জিনিস দেখাতে । একটা হাঁড়ি । ঢাকনা সরাতেই দেখলাম তাতে দুটো মাঝারি গোছের মাছ ভেসে বেড়াচ্ছে । মা একটু হেসে বলল বাবা নাকি ওই দুটোকে নিচের তলায় ঢুকে যাওয়া জল থেকেই ধরেছে , আজ রাতে গরম গরম ঘি ভাত ও মাছ ভাজা খাওয়া হবে । মাছগুলোর জন্য একটু মন খারাপ করল বটে , কিন্তু মাছ ভাজা কে কি না করা যায় ? তাই ঠিক করলাম ওদের আর দেখবনা । তারপর অনেকটা সময় এদিক-ওদিক করতে করতে সময় পেরিয়ে গেলো । আমাদের ডিনার করা শেষ হল । 

 মা- বাবা অনেক আগেই ঘুমিয়ে যায় , হয়তো সারাদিনের ধকলের ক্লান্তিতে । আমার আবার আজ চোখে একটুও ঘুম নেই । আজ সারাদিন তো প্রায় ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিয়েছিলাম ।  শুয়েই রইলাম । এমনিতেই অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছিলোনা , মোমবাতির আলোটাও কমে আস্তে আস্তে একসময় নিভে গেলো । এবার ঘরে নেমে এলো ঘুটঘুটে অন্ধকার । 

আমরা সবাই বারান্দার দিকে পা করে শুয়ে ছিলাম । আমি ছিলাম মা-বাবার মাঝখানে । হঠাৎ একটু আলোর ঝলকানিতে যেটুকু তন্দ্রা এসেছিল তাও চলে গেলো । তাকিয়ে বুঝলাম আলোটা আসছে খোলা বারান্দার দিক থেকে । আলোটা আস্তে আস্তে কাছে আসতে লাগলো , আরও কাছে !! আলোটা সাদা ,সাদা ধপধপে । ম্লান  আলো ।ঠিক যেমনটা চাঁদের হয় । উজ্জ্বল , কিন্তু চোখে লাগেনা । আলো ছড়াচ্ছে কিন্তু আলোকিত করছেনা কিছুই । আলোটি কাছে আসতে আসতে একসময় বারান্দায় এসে ঠেকল । এতক্ষণ বেশ মজা লাগছিল ।  কার্টুনে আমি শুটিং স্টারের ছবি দেখেছি । কিন্তু এবার  ভয় হল । আলোটা  এবার আস্তে আস্তে মানুষের আকার নিতে শুরু করেছে ! আমি চোখ মুছে আরও এবার ভালো করে দেখলাম । না... কোন ভুল নেই । আমি দেখতে পারছিলাম ওই জিনিসটাকে । ওটার মানুষের মতো শরীর। দুটো হাত , দুটো পা একটা মাথা । ভয় টা লাগার কারণ এটা যে আমি ওটার আর  কিছুই দেখতে পারছিলাম না । মানে ওটার কোন লিঙ্গ বোঝা যাচ্ছিলোনা , ওর কোন মুখ ছিল না। শুধুই একটা আলোর শরীর । 

আমি এতক্ষণ চোখ ছানাবড়া করে শুধু দেখে চলেছিলাম সভয়ে । কিন্তু হঠাৎ মনে পড়লো , পাশে তো মা-বাবা দুজনেই আছে । আমি আস্তে আস্তে গলা নামিয়ে ওদের ডাকতে শুরু করলাম । কেউ সাড়া দিল না । আমি ওই জিনিসটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওটা এগিয়ে আসছে বারান্দার দরজাটার দিকেই । আমি আরও জোড়ে ঝাকুনি দিয়ে এবার ডাকতে শুরু করলাম দুজনকে । কিন্তু মা একটু উঠে আমাকে এক ধমকানি দিয়ে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়লো  । বাবা তো আগে থকেই পাশ ফেরা আছে অন্যদিকে , তার উপর নাক ডাকছে ঘড়ঘড় শব্দ করে । আমি আবার তাকালাম বারান্দার দিকে , দেখলাম এবার ওটা এসে বসেছে ডাইনিং এর শেষে ও বারান্দার দরজার  ঠিক মাঝখানে রাখা একটা চেয়ারে ,  যেটাতে বাবা বসে চা খাচ্ছিল সন্ধ্যে বেলায় । আমি বুঝলাম - মা-বাবাকে ডাকাডাকি করে আর লাভ নেই , কেউ আমার কথা শুনছে না । হয় তো বা সত্যিই শুনতে পারছেনা !! হয়তো আমার গলা দিয়ে আর কোন শব্দ বেরচ্ছেনা !! আমি ঠিক করলাম ওই দিকেই তাকিয়ে থাকব , ওটার দিকে । তাই করলাম । কিন্তু বেশীক্ষণ নয় । কিছুক্ষণ পরেই দেখি ওটার মাথাটা আস্তে আস্তে ঘুরছে আমার দিকেই । আর আমি তাকিয়ে থাকার সাহস পেলাম না । আমি চাদরের নিচে মাথা গুঁজে , চোখ বুজে , ঘাপটি মেরে রইলাম । 

চোখ খুলে দেখি সকাল হয়ে গেছে । রোদ উঠেছে । আমার পাশে আর কেউ নেই এখন । একটু  ভয় পেলাম । দৌড়ে নীচে গেলাম । মা-বাবা দুজনেই আছে । জলটা একটু কমেছে । মা জিজ্ঞেস করল আমার ঘুম হল কি না , ভোর বেলায় নাকি আমি ঘুমের ঘোরে কাঁদছিলাম । আমি বললাম মা কে রাতের সব কথা। মা বলল ভয় পাওয়ার কিছু নেই , আমি নাকি পরী দেখেছি রাতে । ছোটবেলায় নাকি অনেক বাচ্চারাই পরী দেখে থাকে । 

আজ এত বছর পরেও আমার সব মনে আছে , প্রতিটি মুহূর্ত । যদিও সেদিনের পর আমি আর এরকম কিছু দেখিনি । আচ্ছা আপনাদের মধ্যেও  কি এরম দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছেন কেউ ? বা আপনাদের চেনা কোন ছোট বাচ্চা ? আপনারা কি দেখছেন কোনোদিন ... পরী??? 




Continua a leggere

Ti piacerà anche

257 10 7
(দ্যা ফুল মুন বিহাইন্ড দি ক্লাউড ক্রাইস আউট ফর দি স্যাক্রিফাইস)
70 2 1
জিজ্ঞাসা
909 14 6
দুই ভাইয়ের ঢাকার অপরাধ জগতে নিত্য দোলাচল ও যৌনতার অপার মিশ্রণ... ভিন্নধর্মী ইরোটিক ক্রাইম থ্রিলার!
1.8K 6 1